মোহনবাগান-৩ (ওডাফা-হ্যাটট্রিক)
কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ ১ (তন্ময়) |
ভারতের মাটিতে ‘আগ্নেয়গিরি’!
আন্দামানে নার্কোন্দাম আগ্নেয়গিরির দেখা মিললেও, ভারতের মূল ভূখণ্ডে তার অস্তিত্ব একেবারে শূন্য। তবে অদ্ভুত শোনালেও, ভারতের প্রথম ‘আগ্নেয়গিরি’র সন্ধান পাওয়া গেল কল্যাণী স্টেডিয়ামে। এক সবুজ মেরুন জার্সি-উৎসারিত! তিনিওডাফা ওকোলি। এত অবলীলায় কী ভাবে তাঁর পা দিয়ে গোলের ‘লাভা’ বেরোয়, তা নিয়ে ফুটবল-বিজ্ঞানীদের মধ্যে তর্ক চলতেই পারে!
শুক্রবার কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ ম্যাচে এক দিকে অধিনায়ক ওডাফা আর অন্য দিকে তাঁর মোহনবাগানের পারফরম্যান্স-চার্ট খুললেই, সব ‘মেঘে ঢাকা তারা’ একে-একে চোখের সামনে ফুটে উঠবে। কী ভাবে? অজস্র বল পেলেন টোলগে, মণীশ ভার্গব কিংবা স্নেহাশিসের মতো ফুটবলাররা। অক্লান্ত পরিশ্রম, উদ্দাম দৌড়াদৌড়ি কিছুই বাদ নেই। কিন্তু গোলের তালা-চাবি খোলা তো দূরের কথা, তিনকাঠিতে একটা শট ঠিক মতো নিতে পারলেন না তাঁদের কেউ। সেখানে ওডাফা? সারাক্ষণ শুধু হাঁটলেন। গোটা ম্যাচে মোট আট বার বল ধরলেন। দু’টো থ্রু, তিনটে ঠিকানা মাপা পাস। বাকি তিনটে বলে ইতিহাস। এ বারের কলকাতা লিগে হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক করে ফেললেন বাগানের ‘কিং কোবরা’। তার মধ্যে টানা দু’টো। |
ওডাফা একাই একশো। কিন্তু বাগানের বাকি ফুটবলাররা আর কত দিন তাঁর কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি চালাবেন? যে দায়বদ্ধতা এবং গোলের খিদে নিয়ে দিনের পর দিন বাগানে ফুল ফুটিয়ে চলেছেন ওডাফা, সেই দায়বদ্ধতা টোলগেদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না কেন? এত দিন সাত-আটটা গোল নষ্টের পরে একটা-দুটো গোল করতেন অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। শুক্রবার তা-ও হল না। গোল নষ্টের বোঁচকা ভরে গেলেও, গোলের সংখ্যা বাড়াতে পারলেন না দু’কোটির স্ট্রাইকার। ওডাফা অবশ্য মাঠ ছাড়ার আগে স্বীকার করে নিলেন, “আমরা আজ ভাল খেলতে পারিনি। তবে জরুরি তিন পয়েন্ট পেয়েছি, এটাই বড় ব্যাপার। এই জয় আমি গোটা টিমের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।”
কোথায় সমস্যা হচ্ছে বাগানের? হেড কোচ করিম বেঞ্চারিফা মরক্কোয়। তাঁর অনুপস্থিতি অবশ্যই একটা প্রভাব ফেলেছে দলে। সহকারী কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় করিমের কথা শুনে ছক সাজালেও, কালীঘাটের মুহুর্মুহু আক্রমণের চাপে ৪-৩-৩ বিরতির আগেই বদলে যায় ৪-৪-২ ছকে। কেননা ৪-৩-৩-এ মাঝমাঠে যে সহনশক্তি এবং গতির প্রযোজন লাগে, তা মনীশ মৈথানি-কুইন্টনদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেল না। নিটফল, ছন্নছাড়া ফুটবল। মিস পাসের ছড়াছড়ি। কিন্তু ছক ভেঙে মণীশ ভার্গবকে লেফট উইং দিয়ে দৌড় করাতেই গোলের মুখ খুলে যায় বাগানের। ভার্গবের ক্রস থেকেই হেডে ওডাফার প্রথম গোল। বাকি দু’টো ওডাফা নিজেই তৈরি করলেন, নিজেই জালে জড়ালেন। আরও দু’টো হতে পারত। রেফারির বদান্যতায় সেটা হয়নি।
কালীঘাটকে তিন গোল দিলেও, বাগানের রক্ষণ নিয়ে আরও খাটতে হবে করিমকে। বোঝাপড়ার অভাব তো আছেই, বেশি আক্রমণ হলেই কেঁপে উঠছেন মেহরাজ-খেলেম্বারা। অরুণ ঘোষের কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ অবশ্য সুযোগ নিতে ছাড়েনি। এক ঘণ্টার মাথায় পঁচিশ গজ দূর থেকে তন্ময় কুণ্ডুর ডান পায়ের আউটস্টেপে বাঁক খাওয়ানো শট সোজা জড়িয়ে যায় বাগানের জালে। একেবারে ফটোফিনিশ।
মজার ব্যাপার হল, মোহনবাগানের খেলায় জমাট ফুটবলের অভাব দেখা দিলেও, মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামায় এখনও ঝলমলে ‘অপরাজিত’ ট্যাগ।
মোহনবাগান: অরিন্দম, খেলেম্বা (রাকেশ), মেহরাজ, বিশ্বজিৎ, স্নেহাশিস, ডেনসন, কুইন্টন (ইচে), মৈথানি, ভার্গব, টোলগে, ওডাফা (সাবিথ)। |