শ্মশানেও শান্তি নেই!
কারণ, মৃতদেহ দাহ করার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই রীতিমতো লাইন দিতে হচ্ছে হাওড়ার শ্মশানগুলিতে।
এমনিতেই ১১ লক্ষ মানুষের বাসস্থান হাওড়া শহরে শ্মশানের সংখ্যা মাত্র তিন। ইলেকট্রিক চুল্লি রয়েছে মাত্র ২টি শ্মশানে। ফলে কাঠের চুল্লিতে দাহ করার পরিবর্তে বেশির ভাগ মানুষ যখন বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দাহ করতে চাইছেন তখন প্রিয়জনদের মৃতদেহ শ্মশানে এনে বিড়ম্বনার শেষ থাকছে না তাঁদের। মৃতদেহ আনার পর শ্মশানে তাঁদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কেউ কেউ আবার বাধ্য হয়ে মান্ধাতা আমলের কাঠের চুল্লিতেই শবদাহ করছেন। ফলে গঙ্গার তীরবর্তী এই শহরে অবাধে চলছে পরিবেশ দূষণ।
|
হাওড়া পুর এলাকায় রয়েছে ৩টি শ্মশান বাঁধাঘাট, বাঁশতলা ঘাট এবং শিবপুর ঘাট। এর মধ্যে বাঁশতলা শ্মশান ঘাটের অবস্থান গঙ্গা থেকে আধ কিলোমিটার দুরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। শুধু বাঁধাঘাট ও শিবপুর শ্মশানঘাট দু’টি রয়েছে গঙ্গার পাশেই। গঙ্গার অন্য পারে কলকাতা পুরসভা এলাকায় শ্মশান রয়েছে ৭টি। ইলেকট্রিক চুল্লি রয়েছে ২০টি। কলকাতার শ্মশানের পরিবেশও যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন। অন্য দিকে, হাওড়ায় শ্মশানগুলির পরিবেশের আজও উন্নতি হয়নি। এই শ্মশানগুলির কোনওটিতেই পুরুষ বা মহিলাদের কোনও শৌচাগার নেই। শ্মশানের পরিবেশও যথেষ্ট অস্বাস্থ্যকর। আশপাশ নোংরা-আবর্জনায় ভরা। অভিযোগ, তিনটি শ্মশানই রাতে কার্যত হয়ে ওঠে সমাজবিরোধীদের আখড়া। সব থেকে দুরবস্থা মধ্য হাওড়ার ঘনবসতির মধ্যে অবস্থিত বাঁশতলাঘাট শ্মশানের। এখনও পর্যন্ত ওই শ্মশানে কোনও বৈদ্যুতিক চুল্লি না থাকায় কাঠেই মৃতদেহ দাহ করা হয়। ফলে দাহের সময় পোড়া কাঠ থেকে বেরনো কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরে যায় গোটা এলাকা। অথচ এই শ্মশানের পাশেই রয়েছে একটি ইরেজি মাধ্যম স্কুল এবং ঘনবসতি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শবদাহের সময় গোটা এলাকা কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় আধপোড়া দেহের অংশ বাড়িতে নিয়ে এসে ফেলে কুকুর, শকুন।
শিবপুর শ্মশানে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকলেও মৃতদেহের অতিরিক্ত চাপের জন্য প্রায়ই অকেজো হয় পড়ে সেটি। ফলে তখন কাঠে দাহ করা ছাড়া উপায় থাকে না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক সময় শবদাহের জন্য প্রয়োজনমতো কাঠ কেনার সামর্থ না থাকায় অনেক গরিব মানুষের দেহ আধপোড়া অবস্থাতেই গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়। সেই মৃতদেহের ওপর চিল, শকুন বসে থাকে। একই অবস্থা বাঁধাঘাট শ্মশানের। সেখানেও একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকায় বেশির ভাগ মানুষকে কাঠের চুল্লির ওপর নির্ভর করতে হয়। শুধু পরিবেশ দূষণই নয়, এই শ্মশানগুলিতে এখনও পর্যন্ত কাঠে মৃতদেহ পোড়াবার ব্যবস্থা থাকায় শবদাহের পর কাঠকয়লা নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় গঙ্গায়। ফলে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। |
কিন্তু বাঁশতলা ঘাট ও শিবপুর ঘাটে কাজ শেষ হল না কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, “বাঁশতলা ঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হলেও বিদুত্ সংযোগ না পাওয়ায় চালু করা যায়নি। শিবপুরে বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। চুল্লি বসানোর কাজ চলছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।”
হাওড়ার শ্মশানগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরসভার ডেপুটি মেয়র কাবেরী মৈত্র বলেন, “আমরা কেএমডিএ-কে চিঠি দিয়ে জানাতে বলেছি, চুল্লি চালু করতে কেন দেরি হচ্ছে এবং কী সমস্যা হচ্ছে? বিদ্যুত্ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না কেন? উত্তর পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।”
ছাড়া উপায় থাকে না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক সময় শবদাহের জন্য প্রয়োজনমতো কাঠ কেনার সামর্থ না থাকায় অনেক গরিব মানুষের দেহ আধপোড়া অবস্থাতেই গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়। সেই মৃতদেহের ওপর চিল, শকুন বসে থাকে। একই অবস্থা বাঁধাঘাট শ্মশানের। সেখানেও একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকায় বেশির ভাগ মানুষকে কাঠের চুল্লির ওপর নির্ভর করতে হয়। শুধু পরিবেশ দূষণই নয়, এই শ্মশানগুলিতে এখনও পর্যন্ত কাঠে মৃতদেহ পোড়াবার ব্যবস্থা থাকায় শবদাহের পর কাঠকয়লা নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় গঙ্গায়। ফলে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
গঙ্গা দূষণের কথা চিন্তা করেই কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটি বা এনজিআরবিএ হাওড়ার শ্মশানগুলিতে বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল ২০০৯ সালে। সময়সীমা দিয়েছিল দেড় বছর। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও দেখা যাচ্ছে, একটি চুল্লি ছাড়া বাকিগুলির কাজ শেষ হয়নি। হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে তিনটি শ্মশানের সংস্কার ও বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ করতে এনজিআরবিএ একটি প্রকল্প তৈরি করে অর্থ বরাদ্দ করে। ঠিক হয় ওই টাকায় সালকিয়ার বাঁধাঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির পাশাপাশি একটি দুষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসান হবে। মেরামত করা হবে বৈদ্যুতিক চুল্লিটি। পাশাপাশি, শিবপুর ও বাঁশতলা ঘাটে আরও দু’টি বৈদ্যুতিক চুল্লি ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের ইউনিট বসানো হবে। কাজের দায়িত্ব পায় কেএমডিএ। কাজের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় হাওড়া পুরসভাকে। বাস্তব চিত্রটা হল, শিবপুর শ্মশানঘাটে চুল্লির জন্য কংক্রিটের কাঠামো তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যন্ত্রও বসান যায়নি। বাঁশতলা শ্মশানঘাটে বাড়ি তৈরি হলেও চুল্লি বসেনি। কবে বসবে তারও ঠিক নেই। একমাত্র বাঁধাঘাটের বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ
শেষ হয়েছে এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রও বসে গিয়েছে।
|