প্রকাশ্যে লোকাল ট্রেনের কামরায় রিষড়া পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলরকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করল দুই দুষ্কৃতী। শুক্রবার বিকেলে রিষড়া স্টেশনে ট্রেনটি ঢোকার সময়ে ওই ঘটনায় জখম বিজয় মিশ্র নামে ওই কাউন্সিলর কামরা থেকে লাফিয়ে নেমে রেললাইন টপকে পাশের রিষড়া থানায় ঢুকে পড়েন। তাঁকে উত্তরপাড়া-কোতরঙের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করায় পুলিশ।
কারা, কেন তাঁকে খুনের চেষ্টা করল এ দিন বিকেল পর্যন্ত সে ব্যাপারে বিজয়বাবু বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। বিজয়বাবুকে দু’টি গুলি করা হয়। একটি গুলি তাঁর ডান ঊরু ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। অন্যটি ওই ঊরুই ফুঁড়ে দিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। রিষড়ার পুরপ্রধান তৃণমূলেরই শঙ্করপ্রসাদ সাউয়ের দাবি, “পিসিদা বাজারে পুরসভার নিকাশি-নালার উপরে বেআইনি ভাবে
তৈরি হওয়া একটি ক্লাবঘর ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়াতেই বিজয়বাবুকে খুনের চেষ্টা করা হল।” ক্লাবের ছেলেরা এ নিয়ে বারেবারে হুমকি দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ তুলেছেন শঙ্করবাবু।
কিন্তু তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দাবি, “বিজয় মিশ্র আমাকে জানিয়েছেন, সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই হামলা চালিয়েছে। আমরা আরও খোঁজ নিয়ে দেখছি।” অভিযোগ উড়িয়ে রিষড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের দিলীপ সরকার বলেন, “রিষড়ায় যদি সিপিএমের অত ক্ষমতাই থাকত, তা হলে আমরা পুরবোর্ড হারাতাম না।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “জমি-মাফিয়াদের যা হয়, এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নতুন কিছু নয়।” রেল পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ওই ক্লাবের ছেলেদেরও খোঁজা হচ্ছে।
কী হয়েছিল এ দিন?
বেলা আড়াইটে পর্যন্ত পুরসভাতেই ছিলেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বছর পঁয়তাল্লিশের বিজয়বাবু। তার পরে কাজে উত্তরপাড়া যান। সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষীকে নিয়ে যাননি। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ আপ ব্যান্ডেল লোকাল ধরে তিনি ফিরছিলেন। উঠেছিলেন শেষ কামরায়। ট্রেনটি রিষড়া স্টেশনে ঢোকার মুখে নামার জন্য দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ান বিজয়বাবু। তখনই তাঁকে গুলি করা হয়। ওই অবস্থাতে দুই হামলাকারীর সঙ্গে কিছুটা ধস্তাধস্তিও হয় বিজয়বাবুর। কামরায় যে অল্প ক’জন যাত্রী ছিলেন, তাঁরা ঘাবড়ে যান। ট্রেন থামা মাত্র বিজয়বাবু কামরার উল্টো দিকের দরজা থেকে লাফ দেন। দুষ্কৃতীরা প্ল্যাটফর্মে নেমে পালায়। তদন্তকারীরা জানান, বিজয়বাবু হামলাকারীদের চিনতে পেরেছেন। তাঁদের অনুমান, দুই দুষ্কৃতী প্রথম থেকেই বিজয়বাবুকে অনুসরণ করছিল। তিনি নিরাপত্তা রক্ষী না নিয়ে বেরনোয় তাদের কাজ সহজ হয়ে যায়।
বিজয়বাবু পুরসভার পূর্ত বিভাগের মেয়র-ইন-কাউন্সিল। বেআইনি ক্লাবঘর ভাঙার বিষয়টি তিনিই দেখভাল করছিলেন। তবে, সেই কারণেই তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হল কি না, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলতে পারেননি বিজয়বাবুর ভাই টিকু। এ দিন বিকেলে নার্সিংহোমে তিনি বলেন, “দাদার চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত আছি। এখনই কিছু বলার অবস্থায় নেই। কারা, কেন দাদাকে মারতে চেয়েছিল, পুলিশ দেখুক।” |