|
|
|
|
বাড়ি থেকে পালিয়ে আলফায় মাজনি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
কখনও স্বামীর অত্যাচার, কখনও প্রেমের টান। অসমে পরপর কয়েকটি ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিত পরিবার থেকে মেয়েরা যোগ দিচ্ছেন আলফায়। জাহ্নবী মহন্ত রাজকোঁয়র, রিনা রায়ের পরে এ বার মাজনি দাস। আজ পরেশপন্থী আলফার তরফে বিবৃতি পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে মাজনির আলফায় যোগদানের কথা জানানো হয়েছে।
শিবসাগর জেলার ডিমৌয়ের বাসিন্দা মাজনি যোরহাটের পূর্ব ভারতী এডুকেশন ট্রাস্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে মেট্রন হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর ভাই দিগন্ত দাস প্রায় দশ বছর আগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গিয়েছিল। তারপর থেকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন মাজনি। নিয়মিত পত্রপত্রিকায় লিখতেন। বিয়ে করেননি। পুলিশের দাবি, মায়ানমার-নাগাল্যান্ড সীমান্তে ঘাঁটি গেড়ে থাকা আলফা নেতা, রূপান্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই বছর তিরিশের মাজনি ঘর ছেড়েছেন।
মাজনির পরিবার অবশ্য এ কথা স্বীকার করেনি। মহিলা সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলিও পুলিশের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। মাজনির পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, শিবসাগরের নবনিযুক্ত এসপি অখিলেশ সিংহ আগেই মাজনির বিরুদ্ধে আলফার সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ আনেন। বেশ কিছু দিন ধরেই পুলিশ মাজনির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছিল। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাজনি ডিমৌ আসেন। ৮ ফেব্রুয়ারি মাজনির সন্ধানে পুলিশ বাড়িতে হানা দেয়। মাজনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ বলে, মাজনি যেন ফিরে এসে পুলিশ সদরে দেখা করেন। সেই মোতাবেক ১০ ফেব্রুয়ারি, এক পুলিশ-কর্তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে মাজনি বাড়ি থেকে বের হন। আর ফেরেননি।
পরেশপন্থী আলফার প্রচার সচিব লেফটেন্যান্ট অরুণোদয় অসম আজ তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, মাজনির মতো মানবাধিকার কর্মী যোগ দেওয়ায় সংগঠন সমৃদ্ধ হল। অরুণোদয়ের দাবি, মাজনিকে হত্যার ছক কষেছিলেন অখিলেশ সিংহ। সেই পরিকল্পনা বানচাল করে মাজনি দেবী সংযুক্ত মুক্তি বাহিনীর কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।
একই ভাবে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে, নাহারকাটিয়ার বাসিন্দা ও টাউন এমভি স্কুলের শিক্ষিকা ৪২ বছরের জাহ্নবী একটি চিঠি লিখে ঘর ছাড়েন। তিনি কিন্তু আলফা-বিরোধী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। জাহ্নবী পত্রপত্রিকায় আলফার নাশকতার বিরুদ্ধে বহু লেখাও লিখেছিলেন। সেই মহিলাই আলফার আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে যে ভাবে সংসার ছাড়লেন, তাতে অবাক হয়ে যায় জাহ্নবীর পরিবার। কিন্তু ঘটনা হল, স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে বেশ কিছু দিন ধরেই আলাদা থাকছিলেন জাহ্নবী। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, আলফা ও আলফার প্রতি সহানুভূতিশীল পিসিজি নেতাদের সঙ্গে তখনই তাঁর যোগাযোগ গড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও পুলিশের দাবি, এক আলফা নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই জাহ্নবীর আলফায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত। চলতি মাসে আলফার তরফে জানানো হয় যে, জাহ্নবীর মৃত্যু হয়েছে।
গত অক্টোবরে কোকরাঝার জেলার রিনা রায়ও স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেই আলফায় যোগ দেন। তিনি নিজেই চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়ে যান, চার বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরেও স্বামীর অত্যাচারে তাঁকে গর্ভপাত করাতে হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন। আলফার সাহায্য নিয়ে ‘অত্যাচারী’ স্বামীকে শাস্তি দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। ঘরসংসার ছেড়ে এ ভাবে মেয়েদের আলফায় যোগ দেওয়ার প্রবণতা নজর কেড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। পুলিশ-কর্তাদের মতে, আলফা-র আদর্শের প্রতি টান তত নয়। পারিবারিক অশান্তি বা ভালবাসার আকর্ষণই এ সব ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিচ্ছে। |
|
|
|
|
|