|
|
|
|
উপনির্বাচনে আলগাপুর |
বাঙালি অধ্যুষিত বরাকে পরিবারতন্ত্রের ছায়াযুদ্ধ |
উত্তম সাহা • শিলচর |
কাগজে-কলমে প্রার্থী এঁরাই। কিন্তু ময়দানে তাঁরা প্রার্থীর ছায়া মাত্র। মুখের উপর এমন কথা শুনে তাঁদের অস্বস্তি হয় না। বরং আগ বাড়িয়ে নিজেরাই বলছেনও সে কথা। প্রার্থীপদ ঘোষণার পর থেকেই মেহবুবুল দল প্রধান বদরুদ্দিন আজমলের পাশে পাশে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রচার-কৌশল, সভা-সমিতির দিনক্ষণ সবই চূড়ান্ত করেছেন বদরুদ্দিন। মেহবুবুলের সিধে উত্তর, ‘‘আমায় দল সভাপতির ছায়া বললে তা আমি খুশিই হই। কারণ আমি রাজনীতিতে নতুন। তিনিই গোটা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।’’ আর কংগ্রেসের মন্দিরা রায়, যিনি রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী গৌতম রায়ের স্ত্রী, তিনিও সভাসমিতি, সাক্ষাৎকারসর্বত্র শোনাচ্ছেন, ‘‘আমায় জেতালে মন্ত্রীকে বেশি করে কাছে পাবেন। দু’জনে মিলে কাজ করব।’’ আর মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমিই প্রার্থী। ধরে নিন আমার জন্যই আপনাদের কাছে ভোট চাইছি।’’
অগপ বিধায়ক শহিদুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুতে হাইলাকান্দি জেলার আলগাপুর বিধানসভা আসনে ২৪ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কংগ্রেস, এআইইউডিএফ ছাড়াও অগপ, বিজেপি-ও এখানে প্রার্থী দিয়েছে। রয়েছেন ৮ নির্দল প্রার্থীও। তবে বিজেপি-র কোনও প্রচার তোখে পড়ে না। বিজেপি প্রার্থী শশধর পালের কথায়, ‘‘আমরা গ্রামে গ্রামে সভা করছি।” শহিদুল আলম পাঁচবার জিতেছেন এই আসনে। ১৯৮৫ সালে প্রথম বার নির্দল প্রার্থী হিসেবে জিতেই অগপ-য় যোগ দেন। একবারই হারেন, ২০০৬ সালে। সে বার জেতেন গৌতম রায়ের পুত্র রাহুল রায়। ২০১১-য় রাহুলকে পরাস্ত করেন শহিদুল। এ বার পিতা-পুত্রের বিবাদে প্রার্থী পদ পুত্রের বদলে মা, মন্দিরা রায় পেয়েছেন। অন্য দিকে, শহিদুলের জায়গায় অগপ প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুল ইসলাম চৌধুরী। অগপ-র একমাত্র ব্যানারটি তাঁর বাড়িরই গেটে নজরে পড়ে। কামরুলের সোজা কথা, এখানে ভোট হবে ‘আমরা-ওরা’র হিসেবে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মুসলিম প্রার্থীর জোরালো দাবি উঠেছিল। এর বদলে মন্ত্রী-জায়াকে টিকিট দেওয়ায় লড়াই মোটেও আর দলে দলে সীমিত নেই। ‘ওরা’-র মন্দিরাকে ঠেকাতে ভোটের আগের দিন স্থির হবে, ‘আমরা’-র কাকে জেতানো হবে। তাই প্রচার, মিছিল-মিটিং অর্থহীন।
অগপ রাজ্যের একমাত্র আসনের উপনির্বাচনটিকে ততটা গুরুত্ব না দিলেও তাঁদের এত দিনের বিধায়ক কিন্তু উপনির্বাচনে গুরুত্ব পাচ্ছেন। গৌতম রায়কেও বলতে হচ্ছে, ‘‘শহিদুল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।’’ মেহবুবুলকে বলতে হচ্ছে, ‘‘আমি তাঁর ভাগ্নে, এই আমার বড় পরিচয়।’’ কিন্তু কামরুল এক দিকে তাঁর দলের প্রার্থী, অন্য দিকে জ্যাঠতুতো ভাইয়ের ছেলে। এর পরও নিজেকে গুটিয়ে রাখলেন স্রেফ ‘আমরা-ওরা’র হিসেবের মধ্যেই। ওই হিসেবের কথা খোলামেলা বলতে নারাজ কংগ্রেস বা এআইইউডিএফ। এখানে মোট ভোটার ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৯২৫ জন। হিন্দু-মুসলমান সমান সমান। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মেহবুবুল আমরা-ওরা’র অঙ্কে নেই। তিনি পাশে চান হিন্দু ভোটারদেরও। তাঁর কথায়, ‘‘গৌতম রায় একবার ছেলেকে দাঁড় করান, একবার স্ত্রীকে। এখানে কি প্রার্থী হওয়ার মতো কোনও মানুষ নেই? এ প্রশ্নে হিন্দুরাও আছেন আমার পাশে।’’
গৌতমবাবু সোজাসুজি বলেন, ‘‘লিখে নিন, কংগ্রেস ৩৫ শতাংশ মুসলমান ভোট পাবে।’’ কোন যুক্তিতে, সে জবাব দেন পাঁচগ্রামের নির্বাচনী জনসভায়। গত সপ্তাহে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়ে জেলা পরিষদ সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন নির্দল নিজামউদ্দিন চৌধুরী। মন্ত্রী তাঁকেই এ দিন মঞ্চে ডেকে নেন। নিজাম উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমার মতো মুসলমানের সাম্প্রতিক জয়ের পেছনে হিন্দুদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বদরুদ্দিন আজমল এসেছেন সেই সম্প্রীতিতে ভাঙন ধরাতে। আমরা তা হতে দেব না।’’ আর শহিদুলের পরিবার? প্রয়াত বিধায়কের স্ত্রী মামদুদা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা এ বার নিরপেক্ষ।’’ ভাগ্নে-ভাইপো নিয়ে আলাদা কোনও কথা বলতে চান না তাঁরা। |
|
|
|
|
|