|
|
|
|
|
দেশ জুড়ে ‘রথযাত্রা’য় এ বার কারাটরাও
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
যাত্রায় বার হচ্ছে সিপিএমও। পোশাকি নাম ‘সংঘর্ষ সন্দেশ জাঠা’। কিন্তু তার রকমসকম দেখে অনেকেই বলছেন, এ তো ঠিক লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা!
কেন এমন বলা হচ্ছে? আসলে সিপিএম এ বার যে ভাবে জাঠা বার করছে, তার সঙ্গে বিজেপির রথযাত্রার যথেষ্ট মিল। কী চরিত্রে, কী চেহারায়।
প্রকাশ কারাট অবশ্য একে রথযাত্রা বলতে চাইছেন না। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কি আডবাণীর পথ ধরছেন? কারাটের উত্তর, “আমাদের রথ-টথ নেই। তবে একটা বড় ভ্যান ধরনের গাড়ি থাকবে, যাতে ১০-১৫ জন ধরে যায়।”
কিন্তু সেই ভ্যান দেখলেই বোঝা যাবে, এর সঙ্গে বিজেপির রথের বিশেষ ফারাক নেই। আডবাণী-নরেন্দ্র মোদীরা তাঁদের গাড়ি সাজান দলের ঝান্ডা, বিবেকানন্দের ছবি দিয়ে। আর কারাটরা সাজাচ্ছেন সিপিএমের পতাকায়। ঠিক যে ভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট ছোট দল এসে যোগ দেয় বিজেপির মূল রথে, সে ভাবে এখানেও ছোট ছোট জাঠা হবে। জনসভা হবে পথে। মূল সভা হবে ১৯ মার্চ, দিল্লির রামলীলা ময়দানে।
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এর পরে রথযাত্রা না বলে উপায় কী!
সেই কথা যদি মানতে হয়, তা হলে দেশ জুড়ে সিপিএমের এমন রথযাত্রা ইতিহাসে প্রথম। এই রথযাত্রার উদ্দেশ্য কী? সিপিএম-কাণ্ডারী বলছেন, “কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত, দলের নিজস্ব চরিত্র তুলে ধরতে হবে।” সেই নিজস্ব চরিত্রটা কী?
কারাটের জবাব, “কেন্দ্রে কংগ্রেস, বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আছে। কিন্তু দু’দলের নীতির মধ্যে কোনও ফারাক নেই। শুধু বামেদের কাছেই রয়েছে বিকল্প নীতি।”
রথ থেকে সেই বিকল্প নীতিই বিলি করতে করতে আসবেন কারাট-বিমানরা। সে জন্য দশ লক্ষ পুস্তিকা ছেপে তৈরি। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে এই যাত্রা। দেশের চার দিক থেকে চারটি বড় জাঠা এসে পৌঁছবে দিল্লিতে। কারাট নিজে আসবেন কলকাতা থেকে। তাঁর সঙ্গে থাকবেন বিমান বসু, সুভাষিণী আলি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রথে চাপবেন না। তবে কলকাতা থেকে যাত্রা শুরুর সময় হাজির থাকবেন। লাল ঝান্ডা নেড়ে কারাটের রথকে সবুজ পতাকা দেখাবেন। মুম্বই থেকে রথে চেপে দিল্লি আসবেন সীতারাম ইয়েচুরি। জালিয়ানওয়ালাবাগ থেকে বৃন্দা কারাট আর সুদূর কন্যাকুমারিকা থেকে এস রামচন্দ্র পিল্লাই।
কলকাতা থেকে দিল্লি আসার পথে রথ থামবে রাঁচি, পটনা, বারাণসী, লখনউ, কানপুর। কিছু ছোট-ছোট গ্রাম-শহরেও। জনসভা হবে। সব শেষে ১৯ মার্চ দিল্লিতে জনসভা। তাঁরা যে যাত্রার নাম দিয়েছেন ‘সংঘর্ষ সন্দেশ জাঠা’, তা সেই সংঘর্ষটা কোথায় ও কবে হবে? কারাট বলেন, “রামলীলা ময়দান থেকে ঘোষণা করব, ভবিষ্যতে আমরা কী ধরনের সংঘর্ষে যাব।”
এ কে গোপালন ভবনের অন্দরমহলের খবর, পার্টির নিচু তলার চাপেই এই প্রথম মাঠে নামছেন কারাট ও তাঁর দলবল। কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে প্রশ্ন উঠেছিল, দিল্লির নেতারা অফিসে বসে বসে করেন কী? শুধু পলিটব্যুরোর বিবৃতি তৈরি আর তার দাঁড়ি-কমা নিয়ে চুলচেরা বিচার করেই কি নেতাদের দায়িত্ব শেষ? সিপিএম পার্টি যদি আন্দোলন থেকেই সরে আসে, তবে অন্য দলের সঙ্গে তাদের পার্থক্যটা কোথায়? অভিযোগের তির ছিল খোদ কারাটের দিকেই।
সেই ক্ষোভের মুখেই এই যাত্রার পরিকল্পনা নিয়েছেন কারাট। কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেই জাঠার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তার পর তা কোন পথে যাবে, ঠিক হয় সেই খুঁটিনাটি। চারটি প্রধান জাঠা ছাড়াও আরও অনেকগুলি ছোট ছোট জাঠা হবে। কোনওটি গুয়াহাটি থেকে কলকাতা। কোনওটা আবার গুজরাতের ভাবনগর থেকে মধ্যপ্রদেশের ইনদওর। যেখানে দলের সংগঠন শূন্য, সেখানেও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা চালাবেন কারাট-ইয়েচুরিরা। দলের নিচু তলাকে যতটা সম্ভব চাঙ্গা করে তোলারও চেষ্টা হবে। দলের নিজস্ব শক্তি বাড়াতে মরিয়া সিপিএম নেতৃত্ব তাই অন্য বাম দলগুলিকেও সঙ্গে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমজনতার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির তাগিদে মার্ক্সবাদী তত্ত্বকথা ছেড়ে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলি নিয়েই অবস্থান ব্যাখ্যার চেষ্টা করবেন কারাটরা। আধডজন বিষয় ঠিক হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, জমি-বাসস্থানের অধিকার, খাদ্য ও মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, রোজগার-কর্মসংস্থান, মহিলাদের অধিকার-সামাজিক ন্যায় এবং দুর্নীতি। এই জাঠাকে কিন্তু লোকসভা ভোটের প্রচার বলতেও ঘোর আপত্তি কমিউনিস্ট-নেতাদের। এমনকী, ভোট এগিয়ে আসার কোনও সম্ভাবনা আছে বলেও তাঁরা মনে করছেন না।
এখন প্রশ্ন, রথের পিছনে ধুলো উড়িয়ে আবালবৃদ্ধবণিতা দৌড়বে তো? বৃন্দা কারাট বলেন, “জাঠা যখন চলবে, তখনই দেখতে পারবেন!” |
|
|
|
|
|