|
|
|
|
জাঁকিয়ে বসেছে ত্রাসের ছায়া |
মৃতের স্তূপ ও আহতের ভারে মৃত্যুপুরী দিলসুখনগর |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
রাস্তায় তখন অফিসফেরত মানুষের ঢল। সন্ধের মুখে অফিসের কাজ শেষ করার তোড়জোড় করছিলেন দিলসুখনগরের এনআইআইটি-র ডিরেক্টর আদিত্য নাগাও। হঠাৎই কান ফাটানো আওয়াজ। আর তার পরেই লাগোয়া রাস্তায় পথচারীদের আর্তনাদ। সেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় আওয়াজ। কেঁপে উঠল আদিত্যদের বহুতল অফিসবাড়িটি। ঘড়ির কাঁটা তখন সাতটার আশপাশে।
“টায়ার ফাটার শব্দ দশ গুণ বাড়ালে যে আওয়াজ হবে, এই আওয়াজ ঠিক তেমন। আমি এ রকম আওয়াজ আগে শুনিনি” বলছেন মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে হায়দরাবাদের অন্যতম জনবহুল শহরতলি দিলসুখনগর বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষদর্শী আদিত্য। প্রথম বিস্ফোরণের পরে সম্বিৎ ফিরে পেতেই তড়িঘড়ি অফিসের জানলায় ছুটে যান তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা। সেখান থেকেই দেখতে পান রাস্তার উল্টো ফুটে জ্বলছে একটা খাবার দোকান। মূলত কলেজ ছাত্র-ছাত্রী এবং অফিসযাত্রীদের সস্তায় খাবার দিত সেটি। জ্বলন্ত সেই দোকানের সামনে দিয়েই ছোটাছুটি করছেন বহু মানুষ।
“প্রথমেই বোমা বিস্ফোরণের কথা মাথায় আসেনি আমাদের। কারণ দিলসুখনগরের মতো এলাকায়, যেখানে মধ্যবিত্তরা, বিশেষত কলেজের তরুণ ছাত্রছাত্রী এবং ব্যবসায়ীরাই সংখ্যায় বেশি, সেখানে সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে পারে মনেই হয়নি ”, বলছেন আদিত্য। |
|
স্বজনহারা: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতদের আত্মীয়রা। শুক্রবার হায়দরাবাদে। ছবি: এএফপি |
এমনকী, প্রথম বিস্ফোরণের পরেও খাবারের দোকানের সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ বলেই ভেবেছিলেন আদিত্যর সহকর্মী। কিন্তু তাঁর মুখের কথাটি শেষ হতে না হতেই ফের বিস্ফোরণ। এ বারের ঘটনাস্থল তাঁদের অফিসবাড়ির পরেই বাসস্টপের উপর একটি বাড়ি। আর তার পরেই চরম আর্তনাদ।
রাস্তায় আতঙ্কিত জনতার চোখে মুখে ত্রাসের ছায়া। চলছে ছুটোছুটি, চিৎকার। আর এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে আগুনের শিখা। কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ‘বিষ-কালো’ ধোঁয়া। কিছু ক্ষণের মধ্যেই রাস্তায় নেমে এসেছিলেন আদিত্যরা। কিন্তু তাঁদের নিত্যদিনের পরিচিত কর্মস্থল তখন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে।
কী রকম?
আদিত্য বলছেন, “যেখানে রোজ চা খাই, অফিসে মোবাইলের টাওয়ার না মিললে যেখানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথাও বলি, সেই জায়গায় তখন আমি নাক-মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে। ....আশপাশে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বহু নিথর দেহ।”
ঘটনার পরে যখন অ্যাম্বুল্যান্স আসা শুরু হয়েছে, তখনও রাস্তায় বিভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে বহু লোক। কেউ আবার উঠে বসার চেষ্টা করছে, কারও গভীর ক্ষতস্থান থেকে ছলকে বেরোচ্ছে রক্ত। আহতদের আর্তনাদে কান পাতাই দায়। এরই মধ্যে হাতে হাতে উদ্ধারকাজ শুরু করে দেন আদিত্য ও তাঁরই মতো বেশ ক’জন প্রত্যক্ষদর্শী। আহতদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যান, কলেজ ছাত্রছাত্রীদেরও আশ্বস্ত করতে শুরু করেন তাঁরা। যদিও প্রত্যেকেরই মনে ভয়, তৃতীয় বার আবার সেই আওয়াজ শুনতে হবে না তো?
কিন্তু তারই মধ্যে, আহতরা যাতে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছতে পারেন, সে জন্য নিথর দেহগুলিকে রাস্তার এক পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। আদিত্যর বয়ানে, “পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্স এসে তো শুধু রাস্তার ভিড় সরাল।” তার পরেই ঘিরে দেওয়া হয় গোটা এলাকা। এমনকী আদিত্যর যে সহকর্মীরা আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও এলাকায় ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
এর পরেই ঘটনাস্থলে এসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত জনতা তখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
আদিত্যদের স্মৃতিতে তখন অবশ্য অন্য ছবি। মৃতের স্তূপে হেঁটে এসে কাঁচা রক্তের দাগ ছাড়া আর কী-ই বা থাকতে পারে সেই ছবিতে? |
|
|
|
|
|