|
|
|
|
হায়দরাবাদ বিস্ফোরণ |
কেন্দ্র, শিন্দেকে বিঁধে বিজেপি আবার সক্রিয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আফজলকে ফাঁসি দিয়ে বিজেপির হাত থেকে জাতীয়তাবাদের হাওয়া কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস। আর গত কাল হায়দরাবাদে বিস্ফোরণের পর আজ ফের জাতীয়তাবাদের হাওয়া নিজেদের পালে টানতে সক্রিয় হল বিজেপি।
আজমল কসাব ও আফজল গুরুর ফাঁসির পর দেশের নানা স্থানে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা ছিলই। তার পরেও হায়দরাবাদে বিস্ফোরণ ঠেকানো যায়নি। আর গত কালের ওই ঘটনার পরপরই খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দে ‘রাজ্যকে আগাম সতর্ক করা হয়েছিল’ বলায় সরকারকে নিশানা করার সুযোগ পেয়ে গেল বিরোধী দলগুলি। এমনকী মুলায়ম-মায়াবতীর মতো সরকারের সহযোগী দলগুলির কড়া সমালোচনাও বিজেপিকে বাড়তি অস্ত্র হাতে দিল। ফলে সন্ত্রাস-রোধে একজোট হওয়ার কথা বললেও বিজেপি আজ কিন্তু হারানো জমি উদ্ধারের চেষ্টাই চালিয়ে গেল দিনভর।
বাজেট অধিবেশন শুরুর এক দিন আগে হিন্দু সন্ত্রাস মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে সংসদে বিজেপির হইচই রুখেছেন শিন্দে। কিন্তু হায়দরাবাদে বিস্ফোরণের পর তিনি যে ভাবে হামলার আগাম খবর রাজ্যকে দেওয়ার দাবি করলেন, তা কার্যত বুমেরাং হয়ে গেল! শিন্দের দাবি নিয়েই সংসদে কেন্দ্রকে চেপে ধরলেন অরুণ জেটলি-সুষমা স্বরাজরা। তাঁদের প্রশ্ন, শুধু রাজ্যকে সতর্ক করেই কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ শেষ হয়ে যায়? হামলার খবর যখন ছিল, তখন তা আটকানো গেল না কেন? এখানেই আক্রমণ থামায়নি বিজেপি। সরকার না বললেও এই হামলার পিছনেও পাকিস্তানের হাত রয়েছে দাবি করে বিজেপির বক্তব্য, ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনও আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করা মনমোহন সিংহের উচিত নয়।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আফজল গুরুর ফাঁসির পর কংগ্রেস আমাদের জাতীয়তাবাদের পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু হায়দরাবাদে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটতেই আমরা জমি ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য, জাতীয়তবাদের হাওয়া তুলে কংগ্রেস যেন হিন্দু ভোটে থাবা বসাতে না পারে। তাই আজ সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।” সেই সূত্র ধরেই আজ সুষমা লোকসভায় বলেন, “ন’বছর ধরে আফজল গুরুর ফাঁসি আটকে রাখা হয়েছিল ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য। এখন তার ফাঁসিও দেওয়া হয়েছে ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবেই!” সেই সঙ্গেই হায়দরাবাদের সাংসদ আকবরুদ্দিন ওয়াইসি-র বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার সঙ্গে বিস্ফোরণের যোগ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলে বিজেপি কংগ্রেসকেই নিশানা করেছে। কারণ, ওয়াইসি-র বক্তৃতার পরেও তাঁকে গ্রেফতার করা নিয়ে অনেক দিন ধরে দোটানায় ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের কংগ্রেস সরকার।
এই প্রসঙ্গেই জেটলি আজ সুকৌশলে শিন্দের ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ মন্তব্যও টেনে আনলেন। সংসদে সরব না হওয়ার আশ্বাস দিলেও আরএসএস রণে ভঙ্গ দেয়নি। বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভিত্তিহীন মন্তব্যের জন্য ক্ষমা দাবি করে হিন্দু আবেগকেই উস্কানোর চেষ্টা করছে সঙ্ঘ। আবার শিন্দের দুঃখপ্রকাশের পরেও কংগ্রেস হিন্দু সন্ত্রাস তত্ত্ব যথার্থ বলে দাবি করছে। সেই সূত্রেই শিন্দেকে বিঁধে জেটলি আজ বলেন, “সন্ত্রাসের রঙ বিচার করলে সন্ত্রাস মোকাবিলার অস্ত্রই ভোঁতা হয়ে যাবে।”
দিল্লি ও অন্ধ্রে কংগ্রেসের সরকার, তাই কংগ্রেসেরও এখন বিজেপির আক্রমণ হজম করা ছাড়া উপায় নেই। তবে বিজেপির সন্ত্রাস-রাজনীতির সমালোচনা করে কংগ্রেস নেত্রী রেণুকা চৌধুরি বলেন, “সন্ত্রাস হামলায় যখন এত মানুষ মারা গিয়েছেন, তখন তাতে রাজনীতি করা বিজেপির উচিত নয়।”
শিন্দের যুক্তি, এ ধরনের সন্ত্রাস হামলা রুখতে জাতীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা কেন্দ্র (এনসিটিসি) গঠন প্রয়োজন, যেখানে রাজ্যকে সতর্ক করেই ক্ষান্ত হবে না কেন্দ্র। রাশ নিজেদের হাতে রাখতে পারবে। বিজেপির নাম না করেই তাঁর অভিযোগ, “যাঁরা এখন সরকারের সমালোচনা করছেন, তাঁরাই সেটি আটকে রেখেছেন।” |
|
|
|
|
|