নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অবশেষে দাঁড়ি পড়ল বেশ কিছু দিন ধরে চলতে থাকা বিতর্কে। শুক্রবার নতুন ব্যাঙ্ক লাইসেন্সের চূড়ান্ত নির্দেশিকায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিল, ব্যাঙ্ক খুলতে পারবে যে কোনও সরকারি, বেসরকারি এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থাই (এনবিএফসি)। তবে সে জন্য সঙ্গে একগুচ্ছ শর্তও বেঁধে দিয়েছে তারা। যার মধ্যে অন্যতম, গ্রামাঞ্চলে শাখা খোলার বাধ্যবাধকতা।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যাঙ্কিং শিল্পে পা রাখতে আগ্রহী সংস্থাকে অন্তত ২৫% শাখা এমন সব প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে খুলতেই হবে, যেখানে পৌঁছয়নি এই পরিষেবা। এবং যেখানে মোট জনসংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। দরিদ্র মানুষের দরজায় উন্নয়নের সুবিধা পৌঁছে দিতে এই শর্তকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সব পক্ষই। ফলে ওই অঞ্চলে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ভুঁইফোড় আর্থিক সংস্থার হাত থেকে দরিদ্র গ্রামবাসীকে রক্ষা করা যাবে বলেও মনে করছেন তাঁরা।
নির্দেশিকার অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে, ব্যাঙ্ক খুলতে আগ্রহী সংস্থার ন্যূনতম শেয়ার মূলধন ৫০০ কোটি হতে হবে। গত টানা ১০ বছরের আর্থিক অবস্থা হতে হবে অত্যন্ত মজবুত। আয়কর দফতর, সিবিআই-সহ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও রকম অভিযোগ থাকা চলবে না। এ ছাড়া, ব্যাঙ্ক চালু করার আগে সংস্থাকে ‘নন-অপারেটিভ ফিনান্সিয়াল হোল্ডিং কোম্পানি’ খুলতে হবে বলেও জানিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ওই হোল্ডিং কোম্পানির মাধ্যমেই নামা যাবে ব্যাঙ্কিং ব্যবসায়। ওই হোল্ডিং কোম্পানির মোট ডিরেক্টরের ৫০ শতাংশকে হতে হবে স্বাধীন ডিরেক্টর। পাশাপাশি নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে, নতুন ব্যাঙ্ক তাদের প্রোমোটারদের ব্যবসায় কখনও ঋণ জোগাতে পারবে না। প্রোমোটারদের অন্য কোনও সংস্থার শেয়ার বা ঋণপত্রেও লগ্নি করতে পারবে না নতুন ব্যাঙ্ক। কাজেই বেসরকারি সংস্থা ব্যাঙ্ক খুললে আমানতের টাকা নিজেদের ব্যবসায় লাগাতে পারে বলে এত দিন যে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল, তা অনেকটাই দূর হল বলে মনে করা হচ্ছে। |
|
শীর্ষ ব্যাঙ্কের শর্ত |
• রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি, ব্যাঙ্ক নয় এমন প্রতিষ্ঠান ব্যাঙ্ক খুলতে পারে।
• ন্যূনতম শেয়ার মূলধন হতে হবে ৫০০ কোটি টাকা।
• গত ১০ বছরের আর্থিক অবস্থা পোক্ত হতে হবে।
• অন্তত ২৫% শাখা খুলতেই হবে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে ব্যাঙ্ক নেই।
• ১ জুলাইয়ের মধ্যে লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানাতে হবে। |
|
ইচ্ছুক সংস্থাগুলিকে ব্যাঙ্ক খোলার জন্য আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। অ্যাসোচ্যাম -এর সভাপতি রাজকুমার ধুত বলেন, “দেশে ব্যাঙ্ক পরিষেবা বাড়াতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, “গ্রামের গরিব মানুষ একই সঙ্গে টাকা রাখা ও ঋণ পাওয়ার সুবিধা পাবেন। তাঁদের আর্থিক উন্নতি হবে।” তবে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ভাস্কর সেনের কথায়, “এখন বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ওই শর্ত বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু নতুন ব্যাঙ্কগুলির কাছে গ্রামের শাখাগুলি লাভজনক ভাবে চালানো বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তবে এতে গ্রামে পা রাখার জন্য যে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির উপর চাপ বাড়বে সন্দেহ নেই।” এর ফলে এ বার অম্বানী, আদিত্য বিড়লা-সহ বেশ কিছু তাবড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় আসতে দেখা যাবে বলে মনে করছে সংশিষ্ট মহল। |