শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে যাতে রাতেও নিয়মিত যাত্রী-বিমান ওঠা-নামা করতে পারে, সেই লক্ষ্যে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার মহাকরণে তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তাঁর ইতিমধ্যে কথা হয়েছে। “বিমানবন্দরের পাশে পনেরোটি বাড়ি রয়েছে। সেগুলি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাগডোগরা বিমানবন্দরটি সেনাবাহিনীর অধীনে। সেখানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাত্রী-উড়ান চলাচলের অনুমতি সেনা-কর্তৃপক্ষ দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সূর্যাস্তের পরে বাগডোগরায় নিয়মিত ভাবে যাত্রী-বিমান ওঠা-নামায় তাঁদের আপত্তি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সেনা-কর্তাদের সঙ্গেও কথা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “বাগডোগরায় রাতে ভিভিআইপি-দের নামার ব্যবস্থা রয়েছে। চাইছি, মানুষের সুবিধার জন্য ওখানে রাতের বিমান চালু হোক। চেষ্টা করছি, যাতে এ বছরের মধ্যে চালু করা যায়।”
এখন বাগডোগরার যে রানওয়ে, মূলত তার দক্ষিণ প্রান্ত থেকে বিমান ওঠা-নামা করে। উত্তর প্রান্তে হিমালয় থাকায় সে দিকটা সচরাচর ব্যবহার হয় না। তবে রাতে বিমান ওঠা-নামার জন্য রানওয়ের ধারে ও ট্যাক্সিওয়ে-তে প্রয়োজনীয় আলোর বন্দোবস্ত সেখানে মজুত। যার সাহায্যে বিশেষ ক্ষেত্রে রাতে বাগডোগরায় বিমান ওঠা-নামাও করেছে। সূত্রের দাবি, নিয়মিত উড়ানের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা সম্প্রসারিত করতে সেনা নারাজ। যে কারণে গত জানুয়ারিতে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের উদ্বোধনের দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সামনে প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন মমতা। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, প্রণববাবু মধ্যস্থ থাকলে কাজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়াটা তুলনায় সহজ হবে।
কুয়াশায় বিমান নামা-ওঠা সহজ করতে বাগডোগরায় ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) বসানোর পরিকল্পনাও বিমান মন্ত্রকের রয়েছে। তাই বিমানবন্দরে ‘অ্যাপ্রোচ লাইট’ বসাতে হবে। বিমান পরিবহণের নিয়ম মোতাবেক, রানওয়ে যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখান থেকে ৯০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত ওই আলো বসবে।
কিন্তু তার জন্য তো অনেকটা জমি দরকার! তা মিলবে কী ভাবে? বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: বাগডোগরায় দক্ষিণ প্রান্তের রানওয়ের ধার থেকে ৯০০ মিটার পর্যন্ত আলো বসানোর মতো জমি নেই। রানওয়ে-প্রান্তের চারশো মিটার দূরেই পাঁচিল। ফলে আইএলএস কার্যকর করতে গেলে পাঁচিল ভাঙতে হবে, অধিগ্রহণ করতে হবে পাঁচিলের ও-পাশের প্রায় ২৪ একর জমি। তার সাড়ে বাইশ একর ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বাকি দেড় একরে গোটা পনেরো পরিবারের বাস, এ দিন যাদের কথা উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পটি রূপায়ণের আগে পরিবারগুলির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সন্দেহ নেই, পরিকল্পনাটি বাস্তবের মুখ দেখলে অনেক সুবিধা হবে। বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কল্যাণকিশোর ভৌমিক বলেন, “এখানে রাতে বিমান ওঠা-নামা শুরু হলে আরও বেশি বিমান বাগডোগরায় আসতে পারবে। অনেকে চান, রাতে বিমানে শিলিগুড়ি পৌঁছে পর দিন সকালে পাহাড়ে উঠতে। এখন তা অসম্ভব। রাতে উড়ান নামতে-উঠতে না-পারায় অনেক বিমানসংস্থাও পিছিয়ে গিয়েছে। নয়া ব্যবস্থা চালু হলে তারাও আগ্রহী হতে পারে।” |