প্রশাসনের তরফে জরুরি ভিত্তিতে ধানের দাম মেটানোর ব্যবস্থা হলে প্রায় চৌত্রিশ ঘণ্টা পরে মন্তেশ্বরে বিক্ষোভ-অনশন তুললেন চাষিরা। গত বছর সমবায়ের কাছে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করেও দাম না মেলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে ব্লক অফিসের সামনে অনশনে বসেন শ’খানেক চাষি। শুক্রবার দীর্ঘ প্রশাসনিক বৈঠকের পরে টাকার বন্দোবস্ত হলে বিক্ষোভ থামে। এ দিনই কলকাতায় খাদ্য দফতরের সচিব অনিল ভার্মা ওই এলাকার সমবায় সমিতি ও চালকলের বিরুদ্ধে চাষিদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন।
২০১২-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে মন্তেশ্বরের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো চাষি সহায়ক মূল্যে জামনা কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে ধান বিক্রি করেন। চাষিদের দাবি, ধান বিক্রির পরে কয়েক জনের টাকা মেটানো হলেও অধিকাংশকেই দেওয়া হয়নি। গত ৯ ডিসেম্বর এক দফা বিক্ষোভের পরে আরও কয়েক জন টাকা পান। বাকি টাকা দু’মাসের মধ্যে মেটানোর প্রতিশ্রুতি মেলে। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তা দেওয়া হয়নি। মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চাঁদু দাস বলেন, “চাষিদের কাছে কেনা ধান সমবায় সমিতি বিক্রি করে এলাকার একটি চালকলকে। তারা বড় অঙ্কের টাকা আটকে রাখায় সমবায় চাষিদের বকেয়া মেটাতে পারেনি।” |
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সমবায়টি চাষিদের কাছে ২০১১-১২ সালে ১৪২৯৮ কুইন্টাল ধান কিনে স্থানীয় একটি চালকলকে দেয়। তা থেকে ৯৭২২ কুইন্টাল চাল হওয়ার কথা। তার মধ্যে চালকলটি কিছু চাল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমকে (ইসিএসসি) দিলেও বাকি ৫৭৬০ কুইন্টাল চাল সরবরাহ করেনি। যার দাম প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা। ফলে ইসিএসসি-ও তাদের বাকি চালের দাম দিতে পারছে না। তাই চাষিরাও দাম পাচ্ছেন না। ধানের দাম মেটাতে ওই দুই সংস্থাকে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়ে ছিল। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই ধান থেকে তৈরি চাল ইতিমধ্যে খোলা বাজারে বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে খবর রয়েছে। ইসিএসসি-র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তারা ওই সমবায় ও চালকলের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনের কর্তারা চাষিদের অনশন তোলার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দেন, চেক না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। শুক্রবার সকাল থেকে ব্লক অফিসে বৈঠক শুরু হয়। ছিলেন জেলা খাদ্য নিয়ামক আধিকারিক, মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ইসিএসসি-র প্রতিনিধি-সহ বেশ কিছু আধিকারিক। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে চালকলের তরফে জানানো হয়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির আগে তাদের পক্ষে টাকা মেটানো সম্ভব নয়। দীর্ঘ বৈঠকের শেষে ঠিক হয়, আপাতত ওই সমবায় ও কৃষি দফতরের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাষিদের বকেয়া মেটানো হবে। পরে চালকল টাকা দিলে তাদের তা মিটিয়ে দেওয়া হবে। এর পরে এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা নাগাদ চাষিরা অনশন ভাঙেন। প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সোম ও মঙ্গলবার চাষিরা চেক ভাঙাতে পারবেন।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, “যে ভাবে হোক চাষিদের টাকা মিটিয়ে দিতে চাইছিলাম। আপাতত সেই ব্যবস্থা হওয়ায় আমরা খানিকটা স্বস্তিতে।” খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগেই ওই চালকলের বিরুদ্ধে বাজারে চাল বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সমবায়টির বিরুদ্ধেও চাষিদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, সমবায় ও চালকলটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |