সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের অন্য সব কথা মানলেও ধর্মঘটের নির্দেশ মানা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট করে দিলেন ডুয়ার্সের চা বাগানের অনেক শ্রমিক নেতাই। যেমন ডুয়ার্সের ফালাকাটা থানা এলাকার তাসাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতারা। তাঁরা নিজেরা তো কাজ করেছেনই, অন্যান্য শ্রমিকদেরও উৎসাহ দিয়েছেন। বুধবারের মত বৃহস্পতিবার তাসাটি বাগানের পুরোদমে কাজ হয়। সিটুর চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের শাখা সভাপতি প্রীতম লোহার বাগানের সেচের কাজ করেছেন। তাসাটি বাগান ইউনিটের আরএসপি অনুমোদিত চা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মহাদেব ওঁরাও জানান, চা গাছের নতুন চারা গাছের নার্সারি পরিচর্যার কাজ যেমন করেছেন, তেমনই আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বাগানের সম্পাদক দিলীপ টোপ্পো দিনভর কাজ করেছেন। ওই বাগানের জেনারেল ম্যানেজার জগদীশ প্রসাদ শর্মা বলেন, “কাজ করতে হবে বলে কাউকে জোর করা হয়নি। বাগানের সমস্ত শ্রমিক স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন।” |
এতদিন নেতাদের সব নির্দেশ মেনেছেন ওঁরা। তা হলে এখন কেন ধর্মঘটের ডাক অগ্রাহ্য করলেন? আরএসপি-র তরফে মহাদেব ওঁরাও বলেন, “একে তো শুখা মরসুম। বাগানের গাছে পাতা নেই। এই অবস্থায় কাজ না করলে মালিকের লাভ। দুদিন ধর্মঘট করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।” সিটু ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ওই দুই নেতার কথায়, “ধর্মঘট করলে বাগানের পাশাপাশি শ্রমিকদের লোকসান। তাই আমরা ধর্মঘট করিনি। ইউনিয়নের অন্য সমস্ত রকম আন্দোলনে রয়েছি ও থাকব।”
পাশাপাশি বাগানের অফিসের কর্মীরা দ্বিতীয় দিনে স্বাভাবিক কাজকর্ম করেছেন। তাসাটি সিটুর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য তথা বাগানের অফিস কর্মচারী সৌমেন রায় বলেন, “শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। আমরাও কাজ করছি।”
শুধু তাসাটি নয়, অধিকাংশ চা বাগানে ধর্মঘটের কোন প্রভাব পড়েনি বলে দাবি শ্রম দফতরের আধিকারিকদের। শ্রম দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বুধবার উত্তরবঙ্গের ২৭৪ টি চা বাগানের মধ্যে ৩১ টি চা বাগান বন্ধ ছিল। তবে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন তা কমে দাড়ায় মাত্র ১৯ টি। উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “দ্বিতীয় দিন তো সে অর্থে বাগান বন্ধ হয়নি। হাতে গোনা কয়েকটি বাগান বাদে বাকি এলাকায় কাজ হয়েছে।”
শীত কালীন সময়ে গাছ থেকে পাতা মেলে না বলে তরাই-ডুয়ার্সের অনেক বাগানে এ সময় বার্ষিক ছুটি চলছে। যে বাগান গুলি চালু রয়েছে, সেখানে এখন তেমন কাজ নেই। সারা দিনে তিন-চার ঘণ্টা কাজ করলে ৯০ টাকা মজুরি পেয়ে যান শ্রমিকরা। এক সময় সিটু ও আরএসপি প্রভাবিত বাগানগুলিতে বাম দল ধর্মঘট সফল হত। সে পরিস্থিতি পাল্টেছে। তিন বছর আগে সিটু ইউনিয়ন ভেঙে আদিবাসী বিকাশ পরিষদে বহু শ্রমিকরা যোগ দেওয়ায় বামেদের কয়েকটি ধর্মঘট ব্যর্থ হয়। এবার খোদ আদিবাসী বিকাশ পরিষদ বামেদের ধর্মঘটের সমর্থন করলেও তাসাটি বাগানের মত বহু বাগানের শ্রমিক কাজে গিয়ে তা ব্যর্থ করেন।
আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে বলেন, “আমরা তো ধর্মঘটের নৈতিক সমর্থন টুকু করেছি। কাউকে বাধ্য করিনি। সংগঠনও দুর্বল হওয়ার প্রশ্ন নেই।” সিটুর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক জিয়াউল আলম বলেন, “৪০ শতাংশ বাগানে বার্ষিক ছুটি চলছে। যে ৬০ শতাংশ বাগান খোলা রয়েছে। তার ৪০ শতাংশ শ্রমিক কাজে গিয়েছে। বাকিরা ধর্মঘট পালন করছে। ধর্মঘটের বিষয়টি হয়তো তাসাটি বাগানে সে ভাবে পৌঁছয়নি।” |