দ্বিতীয় দিনে জনজীবন স্বাভাবিক
তৃণমূলই তো বনধ করছে, আক্রমণে সূর্য
রিবহণে ছাড় থাকায় সাধারণ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে দৃশ্যত কোনও প্রভাব পড়ল না পশ্চিমবঙ্গে। জয় হল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরই! সিপিএমের অন্দরে যিনি পরপর দু’দিন ধর্মঘটের বিরুদ্ধে জোরালো সওয়াল করেছিলেন এবং মূলত যাঁর উদ্যোগেই বৃহস্পতিবার রাজ্যে ধর্মঘটের আওতা থেকে পরিবহণকে বাদ রাখতে বাধ্য হয়েছিল সিটু।
বাম আমলের শেষ দিকে বিরোধী নেত্রী থাকা অবস্থাতেই বনধ-ধর্মঘটের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলকে কর্মনাশা রাজনীতির পথ থেকে সরিয়ে আনেন তিনি। ক্ষমতায় আসার পর বামেদের ডাকা বনধগুলি সম্পর্কে কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এর আগে বনধ ঠেকাতে সরকারি কর্মীদের বেতন কাটার পাশাপাশি চাকরিতে ছেদ ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন তিনি। এ বারও বহু আগে থেকেই বনধের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছিলেন মমতা। বনধের দিন দোকান খুলে রাখার কারণে ভাঙচুর হলে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। বুধবার যানবাহন স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ধর্মঘট-মোকাবিলা সরেজমিনে দেখতে মহাকরণ এবং শহর পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন।
দোকান খোলা। বৃহস্পতিবার বড়বাজারে। —নিজস্ব চিত্র
কিন্তু এই সক্রিয়তা সত্ত্বেও এ দিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মঘট সমর্থকদের উপরে শাসক দলের হামলার যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে শেষ পর্যন্ত মমতাকেই নিশানা করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে বিরোধীরা। জলঙ্গিতে পঞ্চায়েত কর্মীর কান কাটা, কালনা, হরিহরপাড়া, চণ্ডীতলা বা সন্তোষপুরে কোথাও শিক্ষককে হেনস্থা, কোথাও স্কুল, কোথাও বাজার বন্ধ করে দেওয়া, বালুরঘাটে বুধবার বাস না-চালানোয় এ দিন বাস বার করতে বাধা দেওয়া এই সব অভিযোগ সামনে রেখে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বনধ ডাকলে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার কথা বলেছেন। কিন্তু ওঁদের দ্বিচারিতাও স্পষ্ট হয়ে যায়, যখন ওঁর দলের লোকেরাই বনধ ঘোষণা করে বা তা কার্যকর করতে শুরু করে দেয়! সে দিন বেশি দূরে নেই, যখন তৃণমূল ব্লকে ব্লকে এবং জেলায় বনধ ডাকবে। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যে বনধ ডাকবেন!”
সূর্যবাবু গোড়া থেকেই বলে আসছিলেন, জোর করে ধর্মঘট করতে বাধ্য করা বা জবরদস্তি ধর্মঘট ভাঙা দু’টোরই তাঁরা বিরুদ্ধে। তাঁর এ দিনের বক্তব্য ধর্মঘটের শাস্তির অছিলায় কাজ বন্ধ রাখার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক
সূত্রের ব্যাখ্যা, শিল্পায়নের লক্ষ্যে সরব হওয়ার সময় ধর্মঘটের বিরুদ্ধে দলে যে অবস্থান বুদ্ধবাবু নিয়েছেন, তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে তাঁর সহকর্মীদের কথায়। একই সঙ্গে সূর্যবাবু এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই ধর্মঘট তাঁরা ডাকেননি। ট্রেড ইউনিয়নের ধর্মঘটকে সমর্থন করেছেন।
ট্রেড ইউনিয়নের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কাজটা এ বার অন্তত আলিমুদ্দিন করতে পেরেছে বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মত। তাঁদের বক্তব্য, সূর্যবাবু বা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ধর্মঘটের সমর্থনে যা বিবৃতি দিয়েছেন, তা নেহাতই দায়িত্ব পালনের খাতিরে। বিএমএস ধর্মঘট করলে যেমন লালকৃষ্ণ আডবাণী বা অরুণ জেটলিরা আসরে নামেন না, আইএনটিইউসি-র কর্মসূচির সঙ্গে যেমন সনিয়া গাঁধী বা মনমোহন সিংহ নিজেদের জড়ান না, সেই নজির অন্তত এ বারের জন্য সিপিএমে তৈরি করতে পেরেছেন বুদ্ধবাবু। ভবিষ্যতেও সিটুর কার্যকলাপের সঙ্গে আলিমুদ্দিনের এই দূরত্ব বজায় থাকবে কি না, তার উত্তর অজানা। কিন্তু এ বারের দৃষ্টান্ত রাজ্যের স্বার্থে খানিকটা হলেও ইতিবাচক বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কারও কারও অভিমত।
মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ডাকলেও এ দিনের ঘটনাবলির জেরে মমতার সরকারের (রাজ্যে যারা সিপিএমের মূল প্রতিপক্ষ) বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ শানানোর হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে আলিমুদ্দিন। জলঙ্গিতে কান কাটা প্রসঙ্গে সূর্যবাবু যেমন বলেছেন, “ঘটনা যা ঘটছে, ইতালির ব্ল্যাক শার্ট্স, হিটলারের নাৎসি ঝটিকা বাহিনীকে (স্টর্ম ট্রুপার্স) মনে করিয়ে দিচ্ছে। বৃহত্তর সংঘাত এবং অনিবার্য ভাবে বৃহত্তর প্রতিবাদের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা যেখানে গিয়েছে, পুলিশের মনোবল যে ভাবে ভাঙছে, সে সব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী না-হলে আরও বড় দুর্যোগ মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে!” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবুও বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর প্ররোচনামূলক বক্তব্য এই আক্রমণকে মদত জোগাচ্ছে। গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আক্রমণ বন্ধ করতে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে পদক্ষেপ করতে হবে’।
পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘট-পরবর্তী ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ বলেছেন, “আমরা ধর্মঘটের পক্ষে নই। আমাদের মতপার্থক্য রাজনৈতিক। এই ধরনের হিংস্রতার কোনও স্থান গণতন্ত্রে নেই। তাঁর কর্মীদের এমন নৃশংসতা থেকে বিরত করার দায়িত্ব নিতে হবে মমতাকে।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তৃণমূলের কার্যকলাপ নিয়ে দিল্লিতে এ দিন মুখ খুলেছেন রবিশঙ্কর প্রসাদ, স্মৃতি ইরানির মতো বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারাও। যাঁরা লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে সাধারণ ভাবে তৃণমূল নেত্রীকে রুষ্ট করতে চান না।
এই সম্মিলিত আক্রমণের মুখে তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিরোধী দলনেতার মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে পাল্টা বলেছেন, “সূর্যবাবু হিটলার-মুসোলিনির প্রসঙ্গ তুলেছেন। ৩৪ বছরের বাম জমানায় ইতিহাসের ছাত্রেরা হিটলার-মুসোলিনিকে ভুলে গিয়েছেন! তাঁদের জায়গা নিয়েছেন বুদ্ধ-বিমান-বিনয়-সূর্য, বুল্টন-মজিদ মাস্টার-লক্ষ্মণ!” পাশাপাশি ধর্মঘট মোকাবিলা করতে গিয়ে হিংসায় উস্কানির অভিযোগ প্রসঙ্গে পার্থবাবুর মন্তব্য, “আমরা ধর্মঘট বন্ধ করব কী? জনগণই তো প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘট বন্ধ করে দিচ্ছেন!” পরিবহণ সচল থাকায় রাজ্যে জনজীবন এ দিন প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও ব্যাঙ্ক এবং বিমা সংস্থা কিন্তু বন্ধই ছিল। শিল্প ক্ষেত্রে বনধের প্রভাব পড়েছে বলেও দাবি বাম শ্রমিক নেতাদের। তবে শ্রম দফতরের পাল্টা দাবি, উত্তরবঙ্গের চা বাগান থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গের ব্যারাকপুর, হাওড়া এবং হুগলির শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা ধর্মঘট করেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.