পাশাপাশি দুই ড্রেসিংরুমে চলছে আত্মবিশ্লেষণ। কিন্তু কোথাও সেই স্লোগানটা নেই, ‘মোদের গরব মোদের আশা...’।
দু’দলের ইনিংস মিলিয়ে আড়াইশো রানও নেই। এর মধ্যেই আঠারো জন ব্যাটসম্যান ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে। তা হলে আর এই স্লোগান তুলবে কারা? ভাগ্যিস ত্রিপুরার মানুষগুলোও বাংলা বলেন। না হলে এমন দিনে ক্রিকেট মাঠে বাংলার মুখ থুবড়ে পড়ার দৃশ্য দেখতে ভাল লাগত? বোধহয় না। শেষ পর্যন্ত বাংলাভাষী ত্রিপুরাই যে জয়ের হাসি হাসল,ভাষা দিবসে এটাই সান্ত্বনা।
বিজয় হাজারে ট্রফিতে ত্রিপুরা শুধু যে দু’উইকেটে জিতল, তা-ই নয়, গতবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলার এক পয়েন্ট লুঠ করে তা বোনাস হিসেবে নিয়ে জয়ী তারা। বিপক্ষকে ১২১-এ অল আউট করে বোনাস নিয়ে জেতা কী এমন কঠিন কাজ? দিনের শেষে যাঁর বাউন্ডারিতে আকাঙ্ক্ষিত জয় এল, সেই তিমির চন্দ বলছিলেন, “বাংলায় এসে বাংলাকে হারানো মোটেই সোজা কাজ নয়। যদিও দু’বছর আগে কটকে বাংলাকে হারিয়েছিলাম, তবে এই জয়টার স্বাদই আলাদা।” |
ব্যাটিং ব্যর্থতা যে বাংলার ক্রনিক রোগে পরিণত হয়েছে, তা কার্যত মেনে নিলেন ক্যাপ্টেন লক্ষ্মীরতন শুক্লও। যে মনোজ তিওয়ারি অস্ট্রেলীয় বোলিং সামলে সেঞ্চুরি করে ফিরেছেন, তিনিও কি না উইকেটকিপারের গ্লাভসে ধরা পড়লেন মাত্র ১৬ করে! বাংলার ব্যাটিং রোগ সংক্রমিত হয়েছে তাঁর ব্যাটেও! সবচেয়ে বড় সমস্যা, রোগের কারণ বুঝতে পারছেন না কেউই। না কোচ, না ক্যাপ্টেন। সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের ডেকে ধোনির দলের কম্পোজিশন বোঝাচ্ছিলেন ডব্লিউ ভি রামন এবং খেলার পর যে ভাবে সাংবাদিকদের এড়িয়ে মাঠ ছেড়ে চলে গেলেন তিনি, তাতে আন্দাজ করে নিতে কষ্ট হয় না, বাংলা দল নিয়ে বেশ বীতশ্রদ্ধ এবং ক্লান্তও তিনি।
জয়জিৎ বসু ও বিবেক সিংহর আনকোরা ওপেনিং জুটিকে নামিয়ে বিপজ্জনক ফাটকা খেলতে চেয়েছিলেন লক্ষ্মীরা। ফলস্বরূপ বাংলা সাত ওভারের মধ্যে ২৯-৩। তুমুল চাপে পড়ে যাওয়া ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাটেও ১১-র বেশি নেই। অনুষ্টুপ ৩০ রান করলেন বটে, কিন্তু বহু কষ্ট করে ৪৯ বলে। লক্ষ্মী কি রোজ বাঁচাবেন? তাঁর ব্যাটেও মাত্র ১৩। ১২১ রানের পুঁজি নিয়ে সামি (৩-৩৭), সঞ্জীব (২-১৬), লক্ষ্মী (১-২৯), ইরেশ (১-৪), মনোজরা (১-৮) আর কতই বা লড়বেন? তাও দলের ৬২ রানের মাথায় যখন অজয় রাতরার পিছনের স্টাম্প ছিটকে দেন লক্ষ্মী, তখন ত্রিপুরা ক্রিকেটারদের বুকে কাঁপন ধরেই গিয়েছিল। ১১৪-য় উদিত পটেল যখন ফিরে যান, তখন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাঁদের জয়। শেষ পর্যন্ত তিমিরের ব্যাটই অনিশ্চয়তার কালো মেঘ কাটায়।
বাংলার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে শুক্রবারই পূর্বাঞ্চল লিগের শেষ ম্যাচে অসমকে হারাতেই হবে। কিন্তু অসম এ দিন ইডেনে যে ভাবে ঝাড়খন্ডকে ১১৬-য় অল আউট করে দিয়ে ছয় উইকেটে হারাল, তাতে বাংলার এই ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে যে তাঁদের রোখা কঠিন, তা এক রকম স্বীকারই করে নিলেন বাংলার দলনেতা। তবু জিততেই হবে। কী করে, তা অবশ্য জানেন না বাংলা দলের কেউই।
|