তারা বাজি |
এই বুঝি গেল প্রাণ |
মাঝ আকাশে বিমানে ঝাঁকুনি।
পোশাকি ভাষায় এয়ার টার্বুলেন্স। কেউ তখন ভয়েই আধমরা।
কেউ বা ব্যস্ত অন্যকে ভয় পাওয়ানোতে! সেলিব্রিটিদের অভিজ্ঞতা শুনলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
ইউ টিউবের এক ভিডিও। এর মধ্যেই ভাইরাল। বিমান সংস্থার এক পাইলট ভিডিওটায় র্যাপ করেছেন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন নীতি নিয়ে। সেই ভিডিওর জেরে টালমাটাল কর্তৃপক্ষ।
তবে বিমানে টালমাটাল কিন্তু নতুন নয়। বায়ুমণ্ডলে পাশাপাশি চলা বায়ুপ্রবাহ বা শূন্যস্থান (বিমান পরিভাষায় যাকে বলে এয়ার পকেট)-এ বিমান পড়লে ঝাঁকুনি হয়। একেই বলে এয়ার টার্বুলেন্স। অনভিপ্রেত সেই ঝাঁকুনি থেকে বমি বা বুক ধড়ফড় হতে পারে। কী ভাবে সামাল দেন এই রকম বিপজ্জনক পরিস্থিতি যাঁরা নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করেন? |
|
অভিজিৎ |
এখন তো ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সে আগের মতো টার্বুলেন্স হয় না বললেই চলে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যদিও মাঝেমাঝে তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমি খুব একটা পাত্তা দিই না তাতে। দু’-একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে দিব্যি ঘুম লাগিয়ে দিই। এয়ার টার্বুলেন্সটা তখন দোলনার কাজ করে। শুনে মজা পাবেন, আমি বরং এয়ার টার্বুলেন্সের সময় অন্য লোকেদের ভয় পাওয়ানোতেই ব্যস্ত থাকি। জিজ্ঞেস করি, “বিমা পলিসি কার নামে?” দেখিয়ে দেখিয়ে হনুমান চালিসা পড়ি। জিজ্ঞেস করলে বলি, “মারা যাওয়ার আগে পড়ে নিই!”
এড়াতে কী করেন: ফার্স্ট ক্লাসের প্রথম সারিতে ট্র্যাভেল করি। ওটায় এয়ার টার্বুলেন্স কমই হয়। আরও ভাল হয় বোম্বার্ডিয়ার বা ওই রকম ছোট প্লেন অ্যাফোর্ড করতে পারলে। মাঝে মাঝে সেটাও করি।
|
কৌশিক সেন |
সালটা ১৯৯৭। ‘টিকটিকি’ নাটক মঞ্চস্থ করতে আমেরিকায় যাচ্ছি। সঙ্গে সৌমিত্র কাকু (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)-কাকিমা, আর নাটকের অন্য সদস্যরাও। প্রথম গন্তব্য আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া। ওখানে তো ঠিকঠাকই পৌঁছলাম। কানসাস যেতেও কোনও অসুবিধা হয়নি। সমস্যা হল কানসাস থেকে লস এঞ্জেলেস যাওয়ার পথে। তখনই টের পেলাম এয়ার টার্বুলেন্স কাকে বলে! পাশের লোকের হৃৎস্পন্দনও যেন শুনতে পাচ্ছি। কাকিমা তো বিড়বিড় করে প্রার্থনা করছেন। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলল সেই বিভীষিকা। তার পর আবার সব শান্ত। সেই স্মৃতি ভুলতে পারিনি এখনও।
এড়াতে কী করেন: শো-এর ডেট ফিক্সড থাকলে তো কিছু করা যায় না। তবে যাওয়ার দিন আগে থেকে ঠিক না থাকলে চেষ্টা করি আবহাওয়ার খবরাখবর রাখার। এখন তো অনেক সোর্স আছে যেখান থেকে ঠিকঠাক পূর্বাভাসই পাওয়া যায়। আমি খুব একটা ইন্টারনেট স্যাভি নই। আমার ছেলেই ইন্টারনেট থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে দেয়।
|
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত |
বিমানে বিপদ যেন আমার সারা জীবনের সঙ্গী। সেই ৯/১১-তেও ছিলাম খোদ পেন্টাগনে। এয়ার টার্বুলেন্সের কথা উঠলে, ভেবে পাই না কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব। ২০১১য় একবার শু্যটিংয়ের কাজে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলাম। তখন আমি প্রেগন্যান্ট। আবহাওয়া খারাপই ছিল। কিন্তু বিমান এয়ারপোর্ট ছাড়তেই টের পেলাম খারাপ আবহাওয়ায় বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা কী হতে পারে! পুরো টালমাটাল বিমান। জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। দু’বার খাবার দিতে শুরু করেও দিতে পারলেন না বিমানের কর্মীরা। এমন খারাপ অবস্থা!
আর একটা মনে পড়ছে দিল্লি
থেকে আগ্রা যাওয়ার পথে।
ব্যস্ত শিডিউল থেকে তিন দিনের ছুটি ম্যানেজ করেছিলাম নববর্ষের জন্য। ছুটি ম্যানেজ করে হবে কী? প্লেন মাটি ছাড়তেই যা লাফালাফি শুরু করল!
ইউ টার্ন নিয়ে প্লেন ফিরে এল
দিল্লি। শেষমেশ গাড়ি ভাড়া করে
আগ্রা গেলাম।
এড়াতে কী করেন: আমার মোশন সিকনেস নেই, তাই বিমান ঝাঁকুনিতে বমি হয় না। শুধু একবার মুম্বই থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে এয়ার টার্বুলেন্সে অসুস্থ হয়ে পড়ি। যদিও সেটার পিছনে টার্বুলেন্স নয়, আসলে আমার সেপ্টিসেমিয়া হয়েছিল। ঝুঁকি তো জীবনের সর্বত্র। কিন্তু তাই বলে তো বাড়িতে বসে থাকা যায় না।
|
যোগেন চৌধুরী |
ছোটখাটো বাম্পের খপ্পরে তো অনেক বার পড়েছি। তবে এয়ার টার্বুলেন্স বলতে যা বোঝায় তার মুখোমুখি হয়েছিলাম অনেক বছর আগে। সালটা ঠিক মনে নেই। একটা প্রদর্শনীর জন্য মস্কো যাচ্ছিলাম। প্রথমে প্লেনে দিল্লি থেকে মুম্বই। তার পর সেখান থেকে মস্কো। এটাই ছিল যাত্রাপথ। দিল্লি থেকে প্লেন তো ছাড়ল, কিন্তু মুম্বই এয়ারপোর্টে নামার সময় যত বিপত্তি। অসম্ভব রকম দুলছিল প্লেনটা। একটা অদ্ভুত ভয় মনের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। বিমান সেবিকারা মুখে সান্ত্বনা দিলেও, তাঁদের চোখেমুখেও ভয় স্পষ্ট। আর যাত্রীরা তো সবাই প্রাণ হাতে নিয়ে বসে। এই অবস্থা চলেছিল প্রায় এক ঘণ্টা ধরে। আবহাওয়া এত খারাপ, প্লেন নামতেই পারল না। শেষমেশ ফিরে যেতে হল দিল্লি।
এড়াতে কী করেন: এয়ার টার্বুলেন্স তো বলেকয়ে আসে না, আমার তাই মনে হয় আগে থেকে কিছু করারও নেই। হ্যাঁ আবহাওয়াটা দেখে নেওয়া যেতে পারে। ওটা একটা সাবধানতা। তবে সবচেয়ে বেশি দরকার ওই অবস্থাতেও শান্ত থাকা।
|
মুনমুন সেন |
খারাপ আবহাওয়া আর ক্রস উইন্ডের জন্য এয়ার টার্বুলেন্স তো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কলকাতা-চেন্নাই রুটে সব সময় ওই রকম টার্বুলেন্সে পড়ি। ওতে এখন স্বচ্ছন্দই হয়ে গিয়েছি।
এড়াতে কী করেন: ছোটবেলা থেকেই তো এয়ার ট্রাভেল করছি, তাই এয়ার টার্বুলেন্সে আমি ভয় পাই না। একবার ইঞ্জিন বার্ন আউট করে নাগপুরে ক্র্যাশ ল্যান্ড করতে হয়! তার কাছে টার্বুলেন্স তো নস্যি। বিমান একটু-আধটু টালমাটাল করলে আমি শান্ত ভাবেই বসে থাকি। |
ড. সুব্রত মৈত্র |
এখনকার ফ্লাইটে তো এয়ার টার্বুলেন্স প্রায় হয় না বললেই চলে। অতলান্তিকের ওপরে এয়ার পকেট থাকায় ওখানে কখনও কখনও হয়। আমারও কয়েক বার হয়েছে। তার মধ্যে দু’বারের অভিজ্ঞতা তো সাঙ্ঘাতিক। যাঁরা নিয়মিত চলাফেরা করেন না,
তাঁদের জন্য সেটা খুবই ভয়াবহ। সবথেকে অসুবিধা হয় যাঁদের
মোশন সিকনেস আছে। তাঁদের বমি-টমি হতে পারে। আর হার্টের অসুখ থাকা লোকেদের তো বুক
ধড়ফড় করতেই পারে। সাধারণ লোকেরও উৎকন্ঠা থেকে নার্ভাস
ব্রেক ডাউন হতে পারে। তবে এড়াবার রাস্তাও আছে।
এড়াতে কী করবেন: শান্ত থাকাটা সবথেকে জরুরি। একদম ধীর স্থির থাকুন। এয়ার টার্বুলেন্স সাময়িক, ওটা কেটে যায়। আর গতিজনিত অসুস্থতা বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে নিন। সঙ্গে ওষুধ রাখুন। |
|