|
|
|
|
উপনির্বাচনে ইংরেজবাজার |
গনিময় ইংরেজবাজারে কঠিন লড়াই কৃষ্ণেন্দুর |
প্রসূন আচার্য • ইংরেজবাজার |
তিনি নেই। কিন্তু তাঁকে কেন্দ্র করেই ভোটের হাওয়া ঘুরছে। সাত বছর আগে প্রয়াত আবু বরকত গনিখান চৌধুরীর নামেই ভোট হচ্ছে ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে।
কংগ্রেস ছেড়ে মন্ত্রী হওয়া তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর দাবি, “মালদার উন্নয়নে আমিই বরকতদার যোগ্য উত্তরসূরি। বরকতদার পরিবারের লোকেরা তাঁর নাম ভাঙিয়ে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি খুলেছেন। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া ওঁদের আর কোনও লক্ষ্য নেই।’’
কংগ্রেস প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ ওরফে নন্দু তিওয়ারিও সেই গনিখানেরই শরণাপন্ন। শহর জোড়া তাঁর পোস্টার-ব্যানারে সর্বত্র বরকতের ছবি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, গনিখানের ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালুবাবুর পাশে বসে নন্দুর সাফ কথা, “বেইমানটাকে ফের কংগ্রেসে ফিরিয়ে নেওয়াই বরকতদার বড় ভুল হয়েছিল।” মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি ডালুবাবুর সংযোজন, “দাদার স্বপ্ন সফল করতে মালদার মানুষ এ বারও কংগ্রেসকে ভোট দেবেন। বেইমানটাকে নয়।”
সিপিএমের যুব প্রার্থী কৌশিক মিশ্রের মতে, নন্দু বা কৃষ্ণেন্দু কেউই বরকতের যোগ্য উত্তরসূরির যোগ্য নন। তাঁর যুক্তি, “নন্দু ইংলিশবাজার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান। কৃষ্ণেন্দু বর্তমান চেয়ারম্যান। কিন্তু শহরের আবর্জনা ফেলার জমি বা ভাগাড় পর্যন্ত দু’জনের কেউই জোগাড় করতে পারেননি।” প্রসঙ্গত, এই শহরের আবর্জনা ফেলা হয় মহানন্দায়! যা থেকে দূষণ বাড়ে।
কৃষ্ণেন্দুর প্রোফাইলটা এই রকম: গনিখানের নেতৃত্বে রাজনীতির শুরু। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৃণমূলে। তৃণমূলের হয়ে ২০০৫ সালের পুরভোটে হার। ২০০৬ সালে বরকতের হাত ধরে আবার কংগ্রেসে। ২০০৬ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মাত্র ৯০০ ভোটে জিতে বিধায়ক। এর পরে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান। ২০১১-এর বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রায় ২২ হাজার ভোটে জয়। বর্তমানে একই সঙ্গে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী ও পুরসভার চেয়ারম্যান। দুটো দায়িত্ব কী করে সামলান? তাঁর সুসজ্জিত অফিসে বসে হাসতে হাসতে কৃষ্ণেন্দুবাবু দু’টি মোবাইলের একটি তুলে ধরেন। বলেন, “থ্রি জি অ্যাপ্লাই করছি। কোনও ফাইল পড়ে নেই। পর্যটন দফতরের অফিসাররা ই-মেলে জবাব পাচ্ছেন। আর তিন দিন মালদহে বসে পুরসভা সামলাচ্ছি।”
কৃষ্ণেন্দুর ব্যানার হোর্ডিং-এ মমতার ছবি থাকলেও লড়াইটা হচ্ছে কিন্তু ব্যক্তি কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে অন্যদের। তৃণমূল সেখানে গৌণ। বস্তুত, এর সুবিধা যেমন আছে, তেমনই অসুবিধাও আছে। শহরের মাঝে, ঝলঝলিয়ার মোড়ে একটি বাঁশে কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি তিনটি ঝান্ডা একসঙ্গে বাঁধা ছিল। তা দেখিয়ে স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষক বললেন, “তিনটে দলই একসঙ্গে কৃষ্ণেন্দুকে টার্গেট করছে।” প্রতিটি সভাতেই নন্দুবাবু বা ডালুবাবু তো বটেই, ভোটের প্রচারে আসা দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য থেকে আব্দুল মান্নান প্রত্যেকেই বলছেন, ভবিষ্যতে কৃষ্ণেন্দু বিজেপি-তে যাবেন না, তার গ্যারান্টি কোথায়? বিশেষ করে আগামী দিনে দিল্লিতে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় সিপিএম-কংগ্রেস দু’দলই এই প্রচার করছে।
ইংরেজবাজার কেন্দ্রে মালদহ শহর এলাকায় ভোট রয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার। গ্রামীণ অর্থাৎ পঞ্চায়েত এলাকায় ভোট রয়েছে ৯০ হাজার। সামগ্রিক ভাবে মুসলিম ভোট প্রায় ৩০%। কৃষ্ণেন্দুবাবু কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পাশপাশি পুরসভার ন’জন কাউন্সিলরও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সেই হিসেব মাথায় রেখেই কৃষ্ণেন্দুবাবু শহরে এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছে তৃণমূল।
অন্য দিকে, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে ডালুবাবু আপ্রাণ চেষ্টা করছেন সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেসের দিকে টানতে। মোটর সাইকেল র্যালি, পথসভা, গ্রামে গ্রামে প্রচার কোনও কিছুতেই কংগ্রেস পিছিয়ে নেই তৃণমূলের থেকে। তবে যুব কংগ্রেস নেত্রী, সাংসদ মৌসম নূর শারীরিক কারণে প্রচারে নামতে পারেননি। ডালুবাবুর অভিযোগে, ভোটে জিততে কৃষ্ণেন্দু টাকা ছড়াচ্ছে। ক্লাবগুলোকে টাকা, ক্যারাম দিচ্ছে। জনসভায় ডালুবাবু বলছেন, “বেইমানটা টাকা দিলে নিয়ে নিবে। ভোটটা আমাদের দিবে।” অভিযোগ শুনে হাসছেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। তাঁর জবাব, “ডালুবাবুর আমলে দিল্লি থেকে এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা এক কোটি অতিরিক্ত টাকাও আসেনি। দিল্লি গিয়ে যা করার আমি করেছি। কে বেইমান?”
দুই শিবিরের তরজা যত বাড়ছে সিপিএম ততই আশায় বুক বাঁধছে। অতীতের একাধিক ভোটের ফল বলছে, এই কেন্দ্রে সিপিএমের ভোট রয়েছে ৩৯%। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র হিসেব কষছেন কংগ্রেস-তৃণমূল ভোট কাটাকাটিতে যদি আসনটি জেতা যায়! বিজেপি-র নিজস্ব ভোট আছে ৫%। বিজেপি প্রার্থী সঞ্জিত মিশ্র আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তা বাড়ানোর। তিনি সফল হলেও ক্ষতি কিন্তু কৃষ্ণেন্দুরই। |
বিষয়আশয় |
কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী |
২০১১ |
২০১৩ |
• মোট আয় (২০০৮-০৯) |
১,৪৩,৬৯০ |
• মোট আয় (২০১১-১২) |
৭,২৭,২৫৪ |
• নগদ |
২৫,০০০ |
• নগদ |
২,০৮,৯৬০ |
• ব্যাঙ্ক এবং অন্যত্র জমা |
১,০২,৭৩৬ |
• ব্যাঙ্ক এবং অন্যত্র জমা |
৫,২৮,৬৯১ |
• বিমা এবং অন্যান্য |
৬৯,২৬৯ |
• বিমা এবং অন্যান্য |
২,৮৩,৬৩৯ |
• অলঙ্কার |
৮৪,০০০ |
• অলঙ্কার |
৮৪,০০০ |
• স্থাবর সম্পত্তি |
৮০,০০০ |
• স্থাবর সম্পত্তি |
২,৮০,০০০ |
• মোট সম্পত্তি |
৩,৬১,০০৬ |
• মোট সম্পত্তি |
৩৪,২০,৯৭৫ |
স্ত্রী কাকলি চৌধুরী |
• মোট সম্পত্তি
৪,৪১,৮৮০ |
• মোট সম্পত্তি
৪,২০,০০০ |
ছেলে কৃশ চৌধুরী |
• মোট সম্পত্তি
৪,০৬,৭০০ |
মেয়ে কুসুম চৌধুরী |
• মোট সম্পত্তি
৮,৫০১ |
মেয়ে কোয়েল চৌধুরী |
• মোট সম্পত্তি
২,৮৬,৯৭৫ |
* হিসেব টাকার অঙ্কে। |
|
|
|
|
|
|