বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের অসন্তোষ
সদরে কড়া পাহারা, খিড়কি খোলা
সাঁওতালডিহি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে নেমে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। তাঁদের মতে, যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সদর দরজাতেই। আর পিছনের পাঁচিলের ভাঙা অংশ দিয়েই অবাধে যাতায়াত করছে দুষ্কৃতীরা। পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে কয়েকটি পদক্ষেপ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। প্রশাসনকেও তিনি পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এই সাঁওতালডিহি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিতর থেকে মাঝে মধ্যেই নানা জিনিসপত্র চুরি যাচ্ছে। অভিযোগ, সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মীদের একাংশ আর্জি জানিয়েছেন। বিশেষ লাভ হয়নি। কিন্তু মাস খানেক আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণের পরেই নড়েচড়ে বসেন কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে আসেন পুলিশ কর্তারা। আর তাতেই উঠে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে রয়েছেন বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার রক্ষীরা। সদর দরজায় তাঁদের কড়া পাহারা। সেখানেই রয়েছে পুলিশের একটি টহলদারি ভ্যানও। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পিছনে উত্তর দিকে প্রায় ১০০ মিটার পাঁচিল ভাঙা পড়ে রয়েছে। অন্যত্রও মাঝে মধ্যে পাঁচিলে গর্ত রয়েছে। অথচ সেখানে রক্ষীদের দেখা যায় না বলে কর্মীদেরই অভিযোগ।
পরিদর্শনে যাওয়া পুলিশ আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পাঁচিলের ওই ভাঙা অংশ দিয়েই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকছে দুষ্কৃতীরা। চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে লোহা, কয়লা থেকে নানা যন্ত্রপাতি। পুলিশের দাবি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিতরে টার্বো জেনারেটর এলাকায় দামি যন্ত্র চুরির উদ্দেশে ঢুকে পড়েছিল বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অভিযুক্ত ওই যুবক। কিন্তু তেলের পাইপ লাইনের ভালভ ভেঙে ফেলায় তেল ও হাইড্রোজেন গ্যাস বেরিয়ে এসে মৃদু বিস্ফোরণ ঘটে। তাই দুষ্কৃতীদের প্রবেশ আটকানোই প্রাধান্য দিচ্ছে পুলিশ। নিরপত্তা ব্যবস্থার গলদ রয়েছে আরও। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে নজরদারি চালানোর জন্য নেই ওয়াচ টাওয়ারও। পুলিশের অভিযোগ, বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার প্রায় ৮০ জন রক্ষী থাকার কথা। প্রতি শিফটে তাদের পালা করে পাহারা দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তাদের কম সংখ্যায় দেখা যায়। এসডিপিও-র (রঘুনাথপুর) কথায়, “কয়েকবার বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। কিন্তু কখনই পর্যাপ্ত সংখ্যক রক্ষী দেখতে পাইনি।” ওই বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার সুপারভাইজার সুশীল মণ্ডলের দাবি, “আমাদের পর্যাপ্ত রক্ষী রয়েছে। নিয়মিত তাঁরা টহল দেন।” তবে পুলিশের অভিযোগ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, “বহু বার সিআইএসএফ মোতায়েন করার দাবি উঠেছে। মাঝে পিডিসিএল এ ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।”
কী প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ? এসডিপিও (রঘুনাথপুর) বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিতরে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করতে বলেছি। পাঁচিলের ভাঙা অংশও নির্মাণ করতে হবে। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সদর দরজায় সর্বক্ষণের জন্য টহলদার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীরা সর্বত্র নজর রাখতে পারবেন।” তিনি জানান, কোনও গোলমাল দেখতে পেলেই রক্ষীরা পুলিশ কর্মীদের ডেকে নেবেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকও বলেন, “বিস্ফোরণের পরেই সেখানকার নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করার জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধিকারিকদের বলা হয়েছে।” বিধানসভার বিদ্যুৎ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কে পি সিংদে-র মতে, দ্রুত ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচিল তৈরি করা-সহ নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই তাঁরা নির্দিষ্ট প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট সব মহলকে দিয়েছেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, “পুলিশের প্রস্তাব অনুযায়ী ওয়াচ টাওয়ার নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু একাধিকবার পাঁচিল তৈরি করা হলেও কাঁচা অবস্থাতেই দুষ্কৃতীরা তা ভেঙে দিয়ে যায়। বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.