বুক ভরা উত্তেজনা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে মাজদিয়ার সুধীরঞ্জন লাহিড়ী মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তনয় সমাদ্দার এসেছিলেন ভোট দিতে। এসে দেখেন কোনও আয়োজনই নেই। কিছুক্ষণের বিহ্বলতা কাটিয়ে জানতে পারেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য জুড়ে কলেজ ভোট পিছিয়ে গিয়েছে মাস ছয়েক।
শুধু তিনিই নন, এ দিন জেলার বিভিন্ন কলেজে অনেকেই ভোট দিতে এসে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরেছেন। জেলা প্রশাসনই ঠিক করেছিল মঙ্গলবার, ১৯ তারিখ জেলার সমস্ত কলেজে অনুষ্ঠিত হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। সেই মতো কলেজগুলিতে উদ্যোগও প্রায় সারা হয়ে গিয়েছিল। ছাত্র সংগঠনগুলিও তাদের প্রচার কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু এক দিন আগে ভোট বাতিলের সিদ্ধান্তে হতাশ তারাও।
নদিয়ার ১৭টি কলেজের মধ্যে বেশ কয়েকটি কলেজে বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। কল্যাণী মহাবিদ্যালয়, চাকদহ কলেজ, হরিণঘাটা কলেজ, কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়, ডিএল রায় কলেজ, আসাননগরের মদনমোহন তর্কালঙ্কার ও নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজে টিএমসিপি ছাড়া অন্য ছাত্র সংগঠন মনোনয়নই জমা দেয়নি। বাকি ১০টি কলেজে এ দিন ভোট গ্রহণের কথা ছিল। তা স্থগিত হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য, এত দিন ধরে প্রচার চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ভোট না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করার নামান্তর। এসএফআই-এর জেলা সভাপতি কৌশিক দত্ত কার্যত হুমকির সুরে বলেছেন, “সরকার পড়ুয়াদের গণতান্ত্রিক অধিকারে থাবা বসিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে রাস্তায় নামব। এ জন্য অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে তার দায় সরকারের।” যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ টিএমসিপি’র রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরাও গণতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী। কিন্তু ভোটের আগে পড়ুয়াদের ভবিষ্যত্ নিয়ে ভাবা দরকার। সামনে পরপর পরীক্ষা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত।” এক কলেজ অধ্যক্ষও বলেন, “প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। আগে জানতে পারলে সেই টাকা ব্যয় হত না।” শান্তিপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শঙ্কর সোম বলেন, “আগে জানলে এত পরিশ্রম হত না। খরচ হত না টাকা পয়সাও।”
তবে হঠাত্ ভোট বন্ধের এই সিদ্ধান্তে খুশির হাওয়া নেমে এসেছে প্রশাসনিক মহলে। এমনিতেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে বেথুয়াডহরি-সহ কয়েকটি কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “ভোট বাতিল হওয়ায় আমরা খুশি। কারণ আমরা চাইনি নদিয়াতেও আর একটা গার্ডেনরিচ হোক।” |