|
|
|
|
লক্ষ্য বাজেট অধিবেশন |
কপ্টার-তদন্তে বিরোধী দাবি মানতে রাজি কেন্দ্র
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কপ্টার দুর্নীতির মেঘ কাটিয়ে সংসদ চালানোই এখন সরকারের সামনে সব থকে বড় চ্যালেঞ্জ। আর তাই বাজেট অধিবেশন শুরুর দু’দিন আগে সব দলের সঙ্গে বৈঠকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ জানিয়ে দিলেন, “শুধু যৌথ সংসদীয় কমিটি কেন, বিরোধীরা যে ধরনের এবং যত ধরনের তদন্তে সন্তুষ্ট হবেন, তাতেই সরকার রাজি। কিন্তু সংসদ এ বার চলতে দেওয়া হোক।”
সরকারের এতটা মরিয়া প্রয়াসের কারণটাও অজানা নয়। লোকসভা ভোটের আগে কার্যত আর এক বছর সময় হাতে রয়েছে মনমোহন সিংহ সরকারের। তার আগে প্রচারের অস্ত্র করতে কংগ্রেস অন্তত চারটে বিল এ যাত্রায় সংসদে পাশ করাতে মরিয়া। সেগুলি হল, খাদ্য সুরক্ষা, জমি অধিগ্রহণ, লোকপাল এবং মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য ফৌজদারী আইন সংশোধন বিল।
আর সেই কারণেই কংগ্রেস সব ধরনের তদন্তে রাজি হওয়ার মতো উদারতা দেখানোর কৌশল নিয়েছে বলে মত রাজনীতির কারবারিদের। তবে মূল প্রশ্ন হল, বিরোধীরা কি আশ্বস্ত করলেন সরকারকে? বিজেপি নেতারা মুখে বলছেন, তাঁরা সংসদ অচল করার পক্ষপাতী নন। এর পরপরই অরুণ জেটলির মতো নেতা আবার বলছেন, সংসদ সচল রাখতে গেলে হিন্দু সন্ত্রাস মন্তব্যের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দেকে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁরা জমি বিল, খাদ্য সুরক্ষা বিল ও ফৌজদারী সংশোধন বিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বা সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানোর দাবিও জানিয়েছেন।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে সংসদের অধিবেশনকে কৌশলে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেস-বিরোধিতার সুর আরও চড়াতে চায় তারা। তাই বাম-তৃণমূল-সহ অন্য অ-কংগ্রেসি দলগুলির সঙ্গেও কথা শুরু করে দিয়েছে তারা। আজই সব দলের মুখ্য সচেতকরা বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে সরকারের শরিক এনসিপি নেতৃত্বের বক্তব্য, দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এটা এই সরকারের শেষ অধিবেশন! বৈঠকে সিপিএম আবার জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারপার্সন পি জে কুরিয়েন পদত্যাগ না করলে তারা রাজ্যসভা অচল করে রাখবে। সরকারের নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, সরকার পেট্রোপণ্য, সার-সহ নানা জিনিসের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে! তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “আমরা এগুলি নিয়ে জবাব চাইব।”
আজই লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়িতে বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়, দুর্নীতি, আর্থিক দুর্দশা, মূল্যবৃদ্ধি, ভারতীয় জওয়ানদের মুন্ডু কেটে নেওয়ার মতো ঘটনাগুলি নিয়ে সংসদে সরব হবে দল। দলের নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “প্রত্যেক অধিবেশনের আগে একটি করে নতুন দুর্নীতি সামনে আসে। গত অধিবেশনের আগে এসেছিল কয়লা দুর্নীতি, যাতে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং কাঠগড়ায় রয়েছেন! আর এ বারের অধিবেশনের মুখে এসেছে কপ্টার দুর্নীতি। আমরা চাইছি, মনমোহন-সরকারের বিদায় হোক।”
স্পিকার মীরা কুমার জানিয়েছেন, তিনি আগামিকাল সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। আজ তিনি বলেন, “সংসদ চলবে না, এই ভেবে অধিবেশন শুরু করার পক্ষপাতী নই আমি। সরকার ও বিরোধী সব পক্ষের সঙ্গেই কথা বলে সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করব।” আগামিকাল স্পিকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকে আডবাণী ও সুষমা স্বরাজ উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি সংসদের অধিবেশনের আগে গা-গরম করতে কাল পথে নামছেন রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি, নিতিন গডকড়ী, বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতো শীর্ষ বিজেপি নেতারা। সুশীল শিন্দের ‘গেরুয়া সন্ত্রাস’ মন্তব্যের প্রতিবাদে তাঁরা সভা করবেন। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যাওয়ারও চেষ্টা করবেন।
শিন্দে ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, সংসদ চালানোর স্বার্থে গেরুয়া সন্ত্রাস প্রসঙ্গে সংসদে ব্যাখ্যা দিতে রাজি। তবে এই প্রসঙ্গে কমলনাথ আজ জানান, বিজেপি বিষয়টি আগে সংসদে ওঠাক। তার পর সরকার বিবেচনা করে দেখবে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর কথায়, “সংসদে সাধারণ বাজেট ও রেল বাজেট পেশ ও পাশ করানোর পর কিছু বিল সরকার পাশ করাতে চায়। বিশেষ করে খাদ্য সুরক্ষা, জমি অধিগ্রহণ, ফৌজদারী আইন সংশোধন ও লোকপাল বিল এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধীরা এই বিলগুলি ফের সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুললেও সরকার রাজি নয়। মোটামুটি সম্মতি গড়ে হলেই বিলগুলি পাশ করানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|