আকর্ষণ অমোঘ। তবু হাতফেরতা বাজার তৈরি না হওয়ার কারণেই এখনও সে ভাবে সঞ্চয়ের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারেনি হিরে। তাই এ বার সোনার মতো হাতফেরতা হিরেরও বাজার তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছে ওই শিল্প নিজেই।
লগ্নি বিশেষজ্ঞদের মতে, দামের বিচারে হিরে ঢের বেশি হলেও, সঞ্চয়ের পছন্দের গন্তব্য হিসেবে তাকে বহু যোজন পিছনে ফেলে দেয় সোনা। কারণ, বিশ্ব বাজারে সর্বত্র সোনার দাম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা যায়। তাই তা বিক্রির ঝক্কিও নেই। অথচ এই সুবিধা না থাকার জন্যই ভবিষ্যতের লগ্নি হিসেবে হিরে কেনা থেকে পিছিয়ে যান অনেকে। বিশেষজ্ঞ শৈবাল বিশ্বাসের কথায়, “সোনা সহজেই কেনা-বেচা করা যায়। তার নির্দিষ্ট দাম রয়েছে। কিন্তু হিরের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা এখনও তেমন নেই। আবার দরের নির্দিষ্ট সূচক না থাকায় দাম কতটা বেড়েছে বা কমেছে, তা জানাও সাধারণ মানুষের পক্ষে মুশকিল। তাই গয়না হিসেবে আকর্ষণ থাকলেও সঞ্চয়ের জন্য হিরে কেনার লোক নেই বললেই চলে।”
আর ঠিক এই শূন্যতা ভরাট করেই বাজার ধরতে চাইছে মুম্বইয়ের ডিভাইন সলিটেয়ার্স। গয়নায় বসানোর জন্য হিরে তৈরি করা এই সংস্থা এ বার চাইছে হিরের দামের সূচক ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে। এমনকী সংস্থার প্রধান জিগনেশ মেহতার দাবি, নিজেদের বিক্রি করা হিরে পরে ক্রেতার থেকে ফের কিনে নিতেও তৈরি তাঁরা। যা করতে চান না অধিকাংশ গয়না প্রস্তুতকারকই। তিনি বলেন, “দাম নিয়ে অস্বচ্ছতা দূর করতে প্রতি মাসে নানা ধরনের হিরের দামের সূচক প্রকাশ করি। সংস্থার ওয়েবসাইটেও তা আছে।”
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এই স্বচ্ছতা এলে, সঞ্চয়ের জন্য সোনার মতো হিরেও কিনবেন মানুষ। ২০১১-’১২ সালে হিরের গয়নার আন্তর্জাতিক বাজারের মাপ ছিল ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। তার আগের বছর ওই অঙ্কটা ছিল ৩ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি। ফলে পৃথিবী জুড়েই হিরের বাজার বাড়ছে চোখে পড়ার মতো।
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারতের হিরে বাজারও। ২০০৫ -এও এর আয়তন ছিল ৮০০০ কোটি টাকা। এখন ৪৬ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে (যার ১৫% পূর্বাঞ্চলে)। এর মধ্যে ৫০ শতাংশই ‘সলিটেয়ার’ বা এক খণ্ডের হিরের দখলে। চাহিদার নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের পরেই রয়েছে ভারত। এই দেশে ফি-বছর হিরের গয়নার চাহিদা বাড়ছে ১৭% হারে। চিনের (১৮%) পর যা দুনিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দর-সূচকের হাত ধরে হিরের দামে স্বচ্ছতা এলে, ভারতের বাজার আরও বহু গুণ বাড়বে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট শিল্প।
যেমন, এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে এম পি জুয়েলার্সের রুদ্র রায় চৌধুরি বলেন, দামের সূচক একদম নেই, তা নয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তাই সব মাপকাঠি মেনে সূচক হলে, তা অবশ্যই স্বাগত। এতে হিরের ব্যবসা বাড়বে। |