ভোটের আগে শেষ রবিবার। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে শেষ প্রচারের জৌলুস মাটি। কাদা রাস্তায় নেমে নাকাল রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। গ্রামের মানুষ কিন্তু বলছেন, বারবার ভোট এসেছে, গিয়েছে, এলাকার রাস্তা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই। এলাকার মানুষের ‘পথের দাবি’ শুধু প্রতিশ্রুতিতেই আটকে থেকেছে।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বা রেলপথ ধরে রেজিনগর ঢোকার মুখে দেখা যায় মূল রাস্তা থেকে দু’পাশে বেরিয়ে গেছে অসংখ্য সর্পিল গ্রামীণ রাস্তা। তার মধ্যে অনেক রাস্তা আনকোরা। কোনওটি আবার নির্মীয়মান। আবার অনেক জায়গায় স্রেফ মাটি কিংবা লাল ধুলো। সামগ্রিক বিচারে গত কয়েক বছরে রেজিনগরে যেমন নতুন কিছু রাস্তা তৈরি হয়েছে, তেমনি আবার বেহাল রাস্তার সংখ্যাটাও কম নয়। রেজিনগর বিধানসভা এলাকার মাঝ বরাবর বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী। বিধানসভা ক্ষেত্রের মোট ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে নদীর পূর্বদিকে রয়েছে ন’টি। অন্য দিকে পাঁচটি। জাতীয় সড়কের উপর রেজিনগর মোড় থেকে নারকেলবাড়ি কিংবা শক্তিপুর ঘাট যাওয়ার রাস্তাটি রেজিনগরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ ছাড়াও রামনগর ঘাট থেকে সলুয়াবাটি যাওয়ার রাস্তা, ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে শক্তিপুর ঘাট থেকে শক্তিপুর হাই স্কুল ও শক্তিপুর বাজার এবং গরদুয়ারা ঘাট থেকে মাণিক্যহার মোড় যাওয়ার রাস্তাগুলোও দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
রেজিনগর মোড় থেকে শক্তিপুর যাওয়ার রাস্তা শেষ কবে এই রাস্তার সংস্কার হয়েছে তা মনে করতে পারছেন না এলাকাবাসী। একটু এগিয়ে রামপাড়া মাঙ্গনপাড়া হাই স্কুলের পর থেকে শুরু হচ্ছে লাল মোরামের রাস্তা। বর্তমানে ওই রাস্তায় পাথর ও পিচের কাজ চলছে। অন্য দিকে শক্তিপুর নদী তীরের যাওয়ার রাস্তাও অনেকটাই অগম্য।
আবার জাতীয় সড়ক ও রেজিনগর স্টেশন থেকে শক্তিপুর ব্লক দফতর যাওয়ার রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ।
গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর এমন বেহাল দশা কেন? স্থানীয় জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্য মোজাম্মেল হক (সম্প্রতি যিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন) বলছেন, “জেলা পরিষদের অবহেলা ও জেলা কংগ্রেসের উদাসীনতার জন্যই এলাকার রাস্তার এমন দশা।’’ রামনগর বাছরা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাগীরথীর পাড় থেকে রামনগর হয়ে সলুয়া যাওয়ার ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার বেহাল দশা। এই প্রসঙ্গে রামনগর বাছরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সত্যনারায়ণ রায় (যিনি সিপিএমের টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন) বলেন, ‘‘ওই রাস্তার কাজ এ বার হয়ে যাবে। তবে প্রশাসনিক কারণে ও জেলা পরিষদের জটিলতায় এই রাস্তা এতদিন হয়নি।’’ সিপিএমের সোমপাড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক তাজারুল হকের কথায়, ‘‘অতীতে বর্ষার সময় রাস্তা দিয়ে চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ত। সেই নিরিখে এখন এলাকার রাস্তাঘাট যথেষ্ট ভাল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দোপুকুরিয়া, বিদুৎপাড়া এবং রামপাড়া এই তিনটি এলাকায় দুই কিলোমিটার করে ঢালাই রাস্তা করা হয়েছে। তবে শক্তিপুর বিট হাউসের সামনের রাস্তা, মিঞা, কাটাইকোণার রাস্তা এখনও বেহাল।’’ দাদপুরের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের আব্দুল হান্নান মল্লিক বলেন, ‘‘দাদপুর স্কুল যাওয়ার রাস্তা ও অমরপুর থেকে মরাদিঘি যাওয়ার রাস্তা একেবারেই ভাল নয়।’’ বেগুনবাড়ি পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান আনারুল ইসলাম বলছেন, ‘‘কিছুই হয়নি এমন বললে কিন্তু ভুল বলা হবে।” |