ভিন দেশের মন্ত্রীকে গন্ডার সংরক্ষণের কৌশল শেখানোর সময়ই মুখ পুড়ল কাজিরাঙার। আজ সকালে বাগোরি রেঞ্জের কাওইমারি এলাকায় ফের একটি পুরুষ গন্ডারের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ মিলল। চলতি বছর এটি অসমে দশম ও কাজিরাঙায় নবম গন্ডার হত্যার ঘটনা। খড়্গহীন দেহটির কাছে মেলে .৩০৩ বোরের দু’টি রাইফেল ও একাধিক কার্তুজ। ফলে, প্রাণী সংরক্ষণের ‘ছাত্র’ হয়ে এসে কার্যত ‘শিক্ষকের’ ভূমিকা নিলেন নেপালের বনমন্ত্রী ও ডিজি (বন্যপ্রাণ)। তাঁরাই শিখিয়ে গেলেন, কোন মন্ত্রে গত দুই বছরে নেপালে মাত্র দুটি গন্ডার মারা পড়েছে।
এশীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংরক্ষণ ও সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে বিশদে জানতে অসমে এসেছেন নেপালের মন্ত্রী যদুবংশ ঝা ও ডিজি (বন্যপ্রাণ) মেখবাহাদুর পাণ্ডে। সঙ্গে আছেন নেপালের এক সেনাকর্তা ও দিল্লি থেকে আসা বনমন্ত্রকের প্রতিনিধিরা। গত কাল কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের অধিকর্তা এন কে ভাসু কাজিরাঙা ঘোরানোর পাশাপাশি সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে কাজিরাঙার বিভিন্ন সংরক্ষণ কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই, সম্প্রতি এই উদ্যানে যে পাইরারি হারে গন্ডার নিধন হচ্ছে সেই প্রসঙ্গ ওঠে। অস্বস্তি বাড়ায় আজকের ঘটনা। কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষ মুখ বাঁচাবার জন্য সাফাই দেন, জাতীয় উদ্যানের বাইরেই গন্ডার হত্যা বেশি হয়। ভিতরের নিরাপত্তা পোক্ত। |
প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে যদুবংশ ঝা। ছবি: শশাঙ্ক বরবরুয়া |
কথাবার্তার এই পর্যায়েই নেপালের প্রতিনিধিরা জানিয়ে দেন, তাঁদের দেশে চিতওয়ান উদ্যানের বাইরে থাকা ৫ লক্ষ মানুষ যে ভাবে একজোট হয়ে গন্ডার সংরক্ষণে বনরক্ষী ও সেনাবাহিনীর হাত মজবুত করেছেন তা থেকে কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষ শিক্ষা নিতে পারেন। কাজিরাঙার ক্ষেত্রে বনকর্তাদের সঙ্গে অরণ্যের আশপাশের গ্রামবাসীদের মানসিক দূরত্ব বহুদিনের ঘটনা। কার্যত, গ্রামবাসীদের মদতেই শিকারিরা অরণ্যের ভিতরে ও বাইরে শিকার চালাচ্ছে। সীমিত পরিসরে গ্রামবাসীদের সাহায্য পেলেও কাজিরাঙার বনকর্মী বা পুলিশদের থেকে সাধারণত গ্রামবাসীরা দূরত্ব বজায় রাখেন। যা গন্ডার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পান্ডে বলেন, “নেপালে চিতওয়ান অরণ্যের বাইরের সব গ্রামের মানুষ এই ক্ষেত্রে একজোট। সেখানে কেবল গন্ডারের সুরক্ষা দিতে, স্বতন্ত্র্য পরিষদ গড়া হয়েছে। সেনাবাহিনী সরাসরি বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। কাজিরাঙায় জাতীয় উদ্যানের বাইরে জনতা, পুলিশ ও প্রশাসনের আরও সজাগ, সক্রিয় ও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।”
অবশ্য কাজিরাঙার বির্স্তীণ তৃণভূমি দেখে ঝা ও পাণ্ডে মুগ্ধ। তাঁদের কথায়, “চিতওয়ানের প্রধান সমস্যা হল তৃণভূমির অভাব। সেখানে ঘাস জমিতে বড় বড় গাছ রয়েছে। আছে মৌমাঝির ঝাঁক। সেদিক থেকে গন্ডারের আদর্শ বিচরণভূমি হিসাবে কাজিরাঙা অনন্য।” কাজিরাঙার অপর যে বৈশিষ্ট্য নেপালিদের মুগ্ধ করেছে তা হল এখানকার প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিডব্লিউআরসি)। ডব্লিউটিআই ও ইফাওয়ের যৌথ উদ্যোগে গত ১১ বছরে কাজিরাঙায় প্রায় দুই হাজার প্রাণীর প্রাণ বাঁচিয়েছে এই কেন্দ্র। দীর্ঘক্ষণ সিডব্লিউআরসি ঘুরে দেখেন ঝা ও পাণ্ডে। দুধ খাওয়ান গন্ডার শাবককে। পাণ্ডে বলেন, “এই ধাঁচেই চিতওয়ানে একটি প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করছি আমরা।” কাজিরাঙা থেকে ফিরে, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ঝা ও পাণ্ডে দিল্লিতে, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
এ দিকে, গন্ডার হত্যার প্রতিবাদে ও গন্ডার সংরক্ষণের বার্তা নিয়ে আজ কাজিরাঙায় এক পদযাত্রা হয়। অভিনেত্রী নিশিতা গোস্বামী, ক্রীড়াবিদ ভোগেশ্বর বরুয়া, গিনেসে নাম তোলা অভিজিৎ বরুয়া-সহ বহু স্কুল-কলেজের বহু ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষ তাতে পা মেলান। |