দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘মাথায় কাঁটার মুকুট, মহামহিম বেচারা রাজ্যপাল’ (১৭-১) শীর্ষক প্রতিবেদনে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষয়িষ্ণু দিকের আবরণ উন্মোচন করে প্রশাসনিক সদাচার ও রাজনৈতিক মূল্যবোধ বিষয়ে মৌলিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ দেশে রাজ্যপালের ভূমিকা ঠিক কী, এক্তিয়ারই বা কতটুকু? ভারতীয় সংবিধানে কোথাও তা স্পষ্ট ভাবে বলা নেই। এ-ও বলা নেই, রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান কী বলতে পারবেন বা কী বলতে পারবেন না। শীর্ষ আদালত এবং উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সময়ের রায়ের দরুন রাজ্যপালদের আগের সেই দাপট আর নেই। তবু থেকে থেকে বিভিন্ন রাজ্যে ভেসে ওঠে তথাকথিত লাটসাহেবদের কণ্ঠস্বর। বিতর্ক শুরু হয়। কিন্তু কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার। ১৯৯৬-এর জুনে দিল্লিতে যুক্তফ্রন্ট সরকার কায়েম হলে রাজ্যপালের ক্ষমতা ও এক্তিয়ারের বিষয়টি পাদপ্রদীপে উঠে এসেছিল। দেবগৌড়া সরকারের ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচিতেও এটা স্থান পেয়েছিল। আন্তঃরাজ্য পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক বার আলোচনা হয়। পরে উত্তরপ্রদেশের ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭-এর ১০ ডিসেম্বর দিল্লিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরালের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত আন্তঃরাজ্য পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে রাজ্যপাল নিয়োগ ও কার্যাবলি সংক্রান্ত আলোচনায় সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্রটি অক্ষুণ্ণ রাখতে রাজ্যপাল নিয়োগের ক্ষমতাও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের হাতে দেওয়ার দাবি তোলেন জ্যোতি বসু। তাঁর সুস্পষ্ট সুপারিশ ছিল, রাজ্যপাল পদের জন্য সর্বভারতীয় স্তরে সামাজিক সম্মানিত সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করবেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের শাসকদলভুক্ত, নিজ রাজ্যে রাজনীতিতে যুক্ত এবং বর্তমান রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত কোনও ব্যক্তি এই পদে আদৌ বিবেচিত হবেন না। রাজ্যপালদের বাধ্যতামূলক দায়বদ্ধতা বিষয়ে কিছু মৌলিক সুপারিশও করেন জ্যোতিবাবু।
ক) নির্বাচনের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলপতিকে তলব করে তাঁর গরিষ্ঠতা প্রমাণ করার সুযোগদান।
খ) কোনও দল একক গরিষ্ঠতা না-পেলে ভোটের আগে জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলির গরিষ্ঠতা বিবেচনা করা।
গ) জোটভুক্ত দলগুলি সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হলে ডাকতে হবে নির্বাচনোত্তর আঁতাতবদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলির প্রত্যেক শরিককে।
ঘ) এই সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে একক গরিষ্ঠ দলকে অন্য দল ও নির্দল বিধায়কদের সহায়তা নিয়ে সরকার গড়ার সুযোগ দিতে হবে।
ঙ) প্রতি ক্ষেত্রে যথাশীঘ্র বিধানসভা ডেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ অত্যাবশ্যক।
চ) সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণিত হবে একমাত্র বিধানসভায়, রাজভবন বা অন্য কোথাও নয়।
ছ) বিধানসভা স্থগিত থাকার সময়ে কোনও মন্ত্রিসভা গরিষ্ঠতা হারালে মুখ্যমন্ত্রীকে বিশেষ অধিবেশন ডেকে গরিষ্ঠতা প্রমাণের পরামর্শ দিতে হবে রাজ্যপালকে। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যপালকে যুক্তিপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারবেন। মূলত জ্যোতিবাবুর পরামর্শ মেনে আন্তঃরাজ্য পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়,
ক) পাঁচ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোনও রাজ্যপাল সেই রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান পদে পুনরায় মনোনীত হতে পারবেন না।
খ) রাজ্যপাল নিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচনা বাধ্যতামূলক।
গ) মেয়াদ শেষের আগে কোনও রাজ্যপালকে সরাতে হলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে। তা ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারকে বিষয়টি সংসদে জানাতেই হবে।
ঘ) মেয়াদ শেষে রাজ্যপাল আপন ইচ্ছানুযায়ী যে-কোনও স্বীকৃত রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারবেন।
ঙ) বিধায়কদের শক্তিপরীক্ষার একমাত্র জায়গা হল বিধানসভা। রাজভবনে অথবা অন্য কোনও স্থানে বিধায়কদের জমায়েত করিয়ে শক্তি পরীক্ষা করতে পারবেন না রাজ্যপাল।
চ) সরকার গড়ার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে ডেকে এক সপ্তাহের মধ্যে গরিষ্ঠতা প্রমাণের ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যপালকে। সিদ্ধান্ত ছয়টি পরবর্তী আন্তঃরাজ্য পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে পাশ করিয়ে নেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। ’৯৬-এর ১৯ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশকারী রাজ্যপাল রমেশ ভাণ্ডারীর ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে এবং ওই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়ে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, “সংবিধানের ১৬৪ ধারাবলে নিরঙ্কুশ না-হলে ও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে ডাকা বাধ্যতামূলক না-হলেও রাজ্যপালের উচিত ছিল একটি নির্বাচিত সরকার গঠনে সম্ভাব্য সব পন্থা নেওয়া। এ জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পরামর্শ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রাজ্যপালের নেই। বস্তুত, রাজ্যপাল বিধানসভার মতামত চাওয়ার প্রয়োজনীয়তাটাই অনুভব করেননি।” এতে স্পষ্ট, স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি উচ্চ আদালতের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত রাজ্য সরকারের গণতান্ত্রিক বৈধতাকে রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান রূপে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োজিত রাজ্যপালের নিয়োগকর্তার মর্জিমাফিক খারিজ করে দেওয়ার সুপারিশ দানের ক্ষমতা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার চরিত্র এবং গণতন্ত্রের মৌল ভাবাদর্শ বিরোধী। আর সেই কারণেই আশির দশকে সি পি এম দলের তরফে রাজ্যপালের পদটি তুলে দিতে কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক পুনর্বিন্যাস তথা প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য গঠিত সরকারিয়া কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছিল। পরে সি পি এম অবশ্য ওই আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
মানসকুমার রায়চৌধুরী। কলকাতা-২৬
|
সেই কিশোর বয়স থেকেই লীলার প্রতি আকর্ষণের শুরু। কিছু কিছু ভালবাসা কোনও দিন মরে না। লীলার কাছে আমি বহু বার গিয়েছি। কখনও দুপুরে, কখনও বিকেলে, কখনও রাতে। কৈশোর থেকে যৌবন যখনই গিয়েছি আনন্দ পেয়েছি, দুঃখ পেয়েছি, রোমাঞ্চিত হয়েছি, আবেগতাড়িত হয়েছি। লীলার বেশি চাহিদা ছিল না। অনেক কম পয়সাতেই লীলার সান্নিধ্য পেয়েছি। লীলা কোনও দিনই ফিরিয়ে দেয়নি।
কিছু দিন ধরেই দেখছিলাম লীলার শরীরটা খুব খারাপ। মুখটা কালি, চেহারা বিবর্ণ। এক দিন দেখি, লীলার মুখ ও শরীরটা কারা যেন ঢেকে দিয়েছে। দুঃখ পেলাম। কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না। আজ দেখলাম লীলা আর নেই। চলে গেছে, চির দিনের মতো।
লীলা আমাদের দমদম অঞ্চলের সুপ্রাচীন সিনেমা হল ছিল। লীলাকে ধুলোয় মিশিয়ে ওখানে অট্টালিকা হবে। লীলা, তুমি ওখানে না-থাকলেও আমাদের হৃদয়ে থাকবে, চির দিন।
প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা-২৮ |