যে কোনও স্বনির্ভর মানুষকে অবসরের আগে ও পরে, সব সময়েই স্বনির্ভর থাকতে হয়। তাই অবসর জীবনের আর্থিক সংস্থানের জন্য তাঁদের ভাবতে হয় অনেক আগে থেকে। টাকা জমাতে হয় লম্বা মেয়াদে।
একই কথা প্রযোজ্য অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মীদের ক্ষেত্রেও। ছোট ব্যবসা ও পেশায় নিযুক্ত বহু মানুষেরই অনেক সময়ে টানা আয়ের নিশ্চয়তা থাকে না। তাই তাঁদের সঞ্চয়ের পথে এগোতে হয় আয় শুরুর সঙ্গে সঙ্গে। ব্যবসার সুদিনে সামান্য বেশি টাকা এলেই জমাতে হয়। এবং সামর্থ্য অনুযায়ী জমিয়ে যেতে হয় গোটা কর্মজীবন ধরেই। সঞ্চয়কে দিতে হয় চিকিৎসার মতো অত্যাবশক খরচের মর্যাদা। ছোট সঞ্চয় লম্বা মেয়াদে বড় তহবিল হয়ে ওঠে। ব্যবসায় নিযুক্ত অনেকে উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যবসাতেই লাগাতে চান। কারণ সেখানে লাভের হার অনেক সময়ে ব্যাঙ্ক সুদের থেকে বেশি হয়। কিন্তু ব্যবসায় উত্থান-পতন আসেই। তাই সুদিনে বাড়তি আয় হলে, তার বড় অংশ অবসর জীবনের জন্য সরিয়ে রাখা জরুরি। টাকা রাখতে হবে অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গায়। সুদ সামান্য কম হলেও আপস করা যাবে না সুরক্ষার সঙ্গে। আজ আমরা দেখব স্বনির্ভর মানুষেরা কোন কোন প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদে সঞ্চয় করতে পারেন।
রেকারিং ডিপোজিট: ব্যাঙ্ক, ডাকঘরে খাতা খোলা যায়। টাকা জমাতে হয় প্রতি মাসে। অতি অল্প জমাতেও খোলা যায় অ্যাকাউন্ট। একটি অ্যাকাউন্টের মেয়াদ শেষ হলে সুদ-সহ প্রাপ্ত টাকা মেয়াদি আমানতে রেখে খোলা যায় নতুন রেকারিং অ্যাকাউন্ট। এই ভাবে চালানো যায় জীবনভর। ফ্লেক্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা থাকলে এ ধরনের অ্যাকাউন্টে একটি ন্যূনতম কিস্তি সাপেক্ষে সুবিধা মতো টাকা জমা করা যায়।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড: স্বনির্ভর মানুষের নিয়মিত টাকা জমানোর শ্রেষ্ঠ জায়গা। ব্যাঙ্ক এবং বড় ডাকঘরে খোলা যায় ১৫ বছর মেয়াদি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট। বছরে জমা করতে হয় ন্যূনতম ৫০০ টাকা এবং সর্বাধিক ১ লক্ষ টাকা। টাকা জমা করা যায় অনধিক ১২টি কিস্তিতে। বাৎসরিক জমায় করছাড় মেলে ৮০সি ধারায়। সুদ এখন ৮.৮% এবং পুরো করমুক্ত। অ্যাকাউন্টের মেয়াদ প্রথম ১৫ বছরের পর ৫ বছর করে বাড়ানো যায়।
নিউ পেনশন স্কিম: অবসর জীবনে নিয়মিত পেনশনের ব্যবস্থা করে এনপিএস। প্রকল্পটির উদ্যোক্তা কেন্দ্র। এতে নতুন সরকারি কর্মচারী ছাড়াও বেসরকারি কর্মী ও স্বনিযুক্ত মানুষেরা যোগ দিতে পারেন। বয়সের সীমা ১৮-৬০। এখানে বছরে কত লগ্নি করবেন, কতটা ঝুঁকি নেবেন, কোন ফান্ড ম্যানেজার তহবিল পরিচালনা করবে, সবই ঠিক করবেন আপনি। কর ছাড় পাবেন বাৎসরিক জমায়। ন্যূনতম জমা ৫০০ টাকা। বছরে এক বা একাধিক কিস্তিতে রাখতে হবে ৬,০০০ টাকা। জমার ঊর্ধ্বসীমা নেই। এনপিএস ফান্ড পরিচালনার দায়িত্ব ৬টি ফান্ড ম্যানেজারের। গ্রাহকের পছন্দ মেনে ফান্ড ম্যানেজার লগ্নি করবে ইক্যুইটি, স্থির আয়যুক্ত লগ্নি প্রকল্প, সরকারি ঋণপত্র ইত্যাদিতে। গ্রাহকের বয়স ৬০ বছর হলে জমে ওঠা তহবিলের অন্তত ৪০ শতাংশের বিনিময়ে আইআরডিএ থেকে অ্যানুইটি কিনতে হবে। বাকি টাকা এক বারে বা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত কিস্তিতে তোলা যাবে।
মিউচুয়াল ফান্ড এসআইপি অ্যাকাউন্ট: রেকারিং ডিপোজিটের মতো মিউচুয়াল ফান্ডেও খোলা যায় এসআইপি অ্যাকাউন্ট। দীর্ঘ মেয়াদে নিয়মিত জমালে বাজারের সুদিনে ভাল লাভ হবে। তবে লগ্নি ঝুঁকিমুক্ত নয়। ইসিএস পদ্ধতিতে টাকা জমা করা যায় প্রতি মাসে।
করমুক্ত বন্ড: উঁচু হারে করদাতারা প্রতি বছর কিছু করমুক্ত বন্ড কিনে রাখতে পারেন। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে বাজারে ছাড়া হয় করমুক্ত বন্ড। শেয়ার বাজার থেকেও সংগ্রহ করা যায় এই বন্ড।
সোনা: ভবিষ্যতে সোনার দরকার থাকলে, একটু একটু করে লগ্নি করুন প্রকৃত সোনা, মিউচুয়াল ফান্ডের গোল্ড ফান্ড, গোল্ড ইটিএফ বা গোল্ড শেয়ারে।
সম্পত্তি: ছোটখাটো সম্পত্তিও কিনে রাখা যায়। সম্ভাবনাময় জায়গায় ফ্ল্যাট ও জমি কেনা থাকলে, অবসরের পর তা বিক্রি করে বড় তহবিল গড়া যায়। এই তহবিলের সুদ থেকে আপনি মেটাতে পারেন অনেক খরচ। আয়ের ব্যবস্থা করা যায় ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েও।
বিমা: জীবনবিমা করা দরকার। জরুরি স্বাস্থ্যবিমাও।
শেয়ার: ঝুঁকি নিতে পারলে নিয়মিত ভাল শেয়ার কিনুন। সেনসেক্স বা নিফ্টির অন্তর্গত কিছু শেয়ার বাছাই করে মাঝেমধ্যে কিনে রাখুন ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে। দীর্ঘ মেয়াদে সেগুলি বড় সম্পদে পরিণত হতে পারে। মন্দার বাজারে লগ্নি করা যায় সুবিন্যস্ত মিউচুয়াল প্রকল্পেও।
স্বনির্ভর মানুষেরা অবসরের সংস্থান ছাড়াও তহবিল গড়ে তুলতে পারেন দূরভ্রমণ, গাড়ি কেনা, বাড়ি সারানোর মতো বিশেষ প্রয়োজন বা শখ মেটাতে। |