সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লি সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই সফরেই তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরেই সেপ্টেম্বরে তাঁর ভারত সফরের ঘোষণাটি করেন। তিনি বলেন, তিস্তা ও স্থল-সীমান্ত চুক্তি নিয়ে সংশয়ের কারণ নেই। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির বিষয়টি বিবেচনায় রেখেও তিস্তা চুক্তিটি করে ফেলার বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। খুরশিদ তাঁর ঘোষণায় সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
খুরশিদের ঘোষণার পরেই বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলে স্বস্তির আবহ দেখা যায়। তাঁরা বলছেন, এ বছরের শেষেই ভোট হতে পারে বাংলাদেশে। তার আগে তাঁর ভারত সফরে তিস্তার জলের ভাগ নিয়ে বাংলাদেশ জুড়ে যে আরও এক দফা আশার সঞ্চার হবে, হাসিনা তা বিলক্ষণই জানেন। সুতরাং তিস্তা চুক্তি নিয়ে একেবারে চূড়ান্ত আশ্বাস না পেলে তিনি এই কর্মসূচি নিতেন না। হাসিনার আগের ভারত সফরেই তিস্তা চুক্তির বিষয়ে দু’দেশের সহমতি হয়। ঠিক হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরেই দু’দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জলের ভাগ নিয়ে মমতার আপত্তিতে সে চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়।
এ দিনও খুরশিদ মমতার পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই আপত্তির অর্থ কিন্তু এই নয় যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের বিরোধী। জলবণ্টন চুক্তিতে তাঁর আপত্তি নেই, আপত্তি কিছু খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে।
আলোচনার মাধ্যমে সেই আপত্তি দূর করতে ভারত সরকার এখনও সচেষ্ট। ” বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেই সব খুঁটিনাটি বিষয়কে আপাতত বাদ রেখে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে চুক্তি সই করতে রাজি হয়েছে দুই দেশ। ভারতের কূটনীতিকরা এ দিন শেখ হাসিনাকে বলেন, অতীতে প্রায় সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তিই আগে স্বাক্ষর হয়েছে, তার পরে আলোচনার মাধ্যমে খুঁটিনাটি বিষয়গুলি চূড়ান্ত করা হয়েছে। গঙ্গার জলবণ্টন নিয়ে দু’দেশের চুক্তিও আগে স্বাক্ষর হয়, তার পরে আলোচনার মাধ্যমে জলের পরিমাণ নির্দিষ্ট হয়। বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসার বলেন, বৈঠকে ভারতের প্রস্তাবে সায় দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা চলুক, আগে চুক্তিটি করে নিই আমরা।” তার পরেই সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
আদতে তিস্তার জল ভাগ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে মমতার কোনও আপত্তি ছিল না। তাঁর সঙ্গে কথা না বলে দিল্লি জলের পরিমাণ নির্ধারণ করাতেই তিনি রুষ্ট হন। জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশকে জল দেওয়া যাবে না। বস্তুত গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তির সময়েও জলের পরিমাণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল। সে সময়ে ঠিক হয়, আগে চুক্তিটি হয়ে যাক, তার পরে আলোচনা করে জলের পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। হয়ও তাই। ভারতের কূটনীতিকরা আজ তিস্তা চুক্তি নিয়েও একই ফর্মুলা মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। অর্থাৎ, চুক্তির পরেও মমতার সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খোলা থাকছে। খুরশিদ মনে করেন, কূটনীতিতে সঙ্ঘাতের কোনও জায়গা নেই। আলোচনার মাধ্যমেই আপত্তি ও মতভেদ মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। সেই কারণেই তিনি ঢাকায় এসেও মমতার ঢালাও প্রশংসাই করে গিয়েছেন।
এ দিন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগিরের সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন খুরশিদ। আলমগির জানিয়েছেন, ফেরার আসামিদের দু’টি তালিকা বিনিময় করেছে দুই দেশ। সীমান্তে চোরাচালান আটকানো এবং বিএসএফের গুলিচালনা বন্ধ করা নিয়েও তাঁদের আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশকে ৫০টি বিশেষ ধরনের আর্টিকুলেটেড বাস দিচ্ছে ভারত। প্রথম দফায় তার ১০টি ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনা ও খুরশিদ যৌথ ভাবে তার সূচনা করেন। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণিও অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। |