আলু গাছে তিলে ধসা ও নাবি ধসা দেখা দিয়েছে বলে আগেই দাবি করেছিলেন চাষিরা। কৃষি দফতরও স্বীকার করেছে, কিছু কিছু জায়গা থেকে এই রোগের খবর মিলেছে। এর মধ্যে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চাষিদের আশঙ্কা, এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তা রুখতে শীঘ্র আলুর জমিতে উপযুক্ত ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা।
ঠান্ডা কমতে থাকায় আলু গাছে নাবি ধসা এবং তিলে ধসার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন চাষিদের। সে ক্ষেত্রে মার খাবে ফলন। কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, কিছু কিছু জায়গা থেকে ওই দুই রকম রোগ সংক্রমণের খবর এসেছে। এর মধ্যে বৃষ্টি নামায় সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলেও চাষিদের দাবি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ম মেনে ওষুধ স্প্রে করলে ভয়ের কিছু নেই।
জেলার আলু ফলনশীল এলাকাগুলির মধ্যে কালনা মহকুমা অন্যতম। রবি মরসুমে কালনা ১ ও ২ ব্লকে বহু জমিতে জ্যোতি আলুর চাষ হয়। চাষিরা জানান, বর্তমানে যে জমিতে আলু লাগানো হয়েছে, তার বয়স কোথাও ৬৫ দিন, কোথাও বা ৭০ দিন। বেশির ভাগ জায়গাতেই আলু মাটির তলায় বাড়তে শুরু করেছে। তাঁদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে বহু জায়গাতেই নাবি ধসা এবং তিলে ধসা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সুলতানপুর পঞ্চায়েতের ন’পাড়া, হরিশঙ্করপুর, বোহার পঞ্চায়েতের বড়া, কালনা ২ ব্লকের বড় ধামাস-সহ বহু গ্রামেই আলুর জমিতে গাছের পাতার দু’পাশে প্রথমে গোলাকৃতি খয়েরি দাগ দেখা দিচ্ছে। এর পরে কুঁকড়ে গিয়ে পাতা পচে যাচ্ছে। পাতা থেকে ডাঁটিতে রোগ ছড়াচ্ছে। এ ভাবে গোটা গাছই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বড়া গ্রামের চাষি অরুণ চক্রবর্তী বলেন, “সপ্তাহ দুয়েক আগে ঠান্ডা খুব কমে গিয়েছিল। ঘন কুয়াশাও হচ্ছিল। তার পর থেকে জমিতে গাছ ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়তে থাকে। বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেও গাছ বাঁচানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে।” অরুণবাবুর দাবি, এই সময়ে আলুর ওজন বাড়ে। সুতরাং গাছ না বাঁচাতে পারলে ফলন কমে যাবে। |
কালনা ২ ব্লকের চাষি কুতুবউদ্দিন শেখের বক্তব্য, ‘‘মাঝখানে গরম পড়ার পরে শীত ফিরে আসে। তাই সংক্রমণ বড় আকার নেয়নি। তবে এখনও অন্তত পনেরো দিন ভাল ঠান্ডা থাকা দরকার। তা না হলে ফলন অনেকটা মার খাবে।” মহকুমা কৃষি দফতর জানায়, এই ধরনের রোগকে নাবি ধসা বলা হয়। এই রোগের জীবাণু মাটিতে মিশে থাকে। এ ছাড়াও আলুর জমিতে পাতার উপরিভাগে অজস্র কালো বিন্দু দেখা যাচ্ছে। চাষিদের দাবি, কিছু কিছু গাছ বাদামি বর্ণের হয়ে যাচ্ছে। ফলে থমকে যাচ্ছে গাছের বৃদ্ধি। কুঁকড়ে যাচ্ছে গাছের পাতাও। চাষিরা এই ধরনের রোগের নাম তিলে ধসা বললেও কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, এর পোশাকি নাম ‘সারকোস্পোরা লিভস্স্পট’।
আলুর জমিতে দু’ধরনের রোগের কথা স্বীকার করেছে মহকুমা কৃষি দফতর। দফতরের মুখ্য আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক বলেন, “কিছু কিছু এলাকা থেকে এই দুই রোগের প্রার্দুভাবের খবর এসেছে। চাষিরা নিয়ম মেনে ওষুধ স্প্রে করলে উপকৃত হবেন।” তাঁর দাবি, কয়েক দিন গরম আবহাওয়ার পরে ফের ঠান্ডা পড়ায় নাবি ধসা রোগ বড় আকার ধারন করতে পারেনি। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের বক্তব্য, “বহু চাষি ঠিকঠাক ওষুধ প্রয়োগ করতে পারেন না। ফলে রোগ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে চাষিরা আমাদের কাছে এসে সমস্যার কথা জানালে তাঁদের সাহায্য করা হবে।” তিনি জানান, মাটিতে অম্লত্ব বেশি থাকার কারণে নাবি ধসা রোগ বাড়ে। সে ক্ষেত্রে রোগ ছড়ানো জমির শোধন করা জরুরি। এ ছাড়াও জৈব সারের বেশি মাত্রায় প্রয়োগ এবং রাসায়নিক সারের নিয়ন্ত্রণ এই রোগের প্রার্দুভাব কমায়।
রোগ সংক্রমণ ঠেকাতে কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রথমে সাইমক্সিল (৮%) এবং ম্যানকোজেব (৬৮%)-এর মিশ্রণ তৈরি করে আড়াই গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। অথবা ফেনামিডন (১০%) এবং ম্যানকোজেব (৫০%)-এর মিশ্রণ দু’গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে স্প্রে করলে চাষিরা উপকার পাবেন। রোগের প্রার্দুভাব বেড়ে গেলে এবং এই দুই ওষুধে ফল না মিললে মেটালক্সিল (৮%) এবং ম্যানকোজেব (৬০%)-এর মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে। তিলে ধসার ক্ষেত্রে জিনেব অথবা ম্যানকোজেব জাতীয় ওষুধ আড়াই গ্রাম প্রতি লিটারে গুলে স্প্রে করতে হবে। তা হলেই রোগ সংক্রমণ থেকে গাছ মুক্তি পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশ্বাস। |