বাবা জ্ঞান দিয়ো না
জিমে গিয়ে আর ভুল ওয়ার্ক আউট নয়
তিন ধরনের মানুষ জিমে যান। একদল সবজান্তা। কারও পরামর্শেরই দরকার নেই। একদল চান তড়িঘড়ি ফল পেতে। ৭-১০ দিন জিমে গেলেই যেন কেল্লা-ফতে!
বাকিরা শিকার হন ভুল পরামর্শের। তা হলে কী করণীয়? দরকার ফিটনেস বিশেষজ্ঞের সঠিক পরামর্শ। না হলেই হতে পারে শারীরিক ক্ষতি।
জিমে গেলেও হাঁটা ও দৌড়োনো চলবেই: ভুঁড়ি কমানোর তাগিদে স্লিমিং সেন্টারের ভাইব্রেটর মেশিনের নীচে শুয়েছেন এমন লোক নেহাত কম নেই। বিনা পরিশ্রমে ‘ইঞ্চ লস’-এর এ রকম এর চক্করে পড়লে হতে পারে কোমরে ব্যথার মতো দীর্ঘমেয়াদি বিপত্তি।
পেটের ওপর ক্রমাগত মেশিন চলায় স্পাইনের ওপর চাপ বাড়ে। ক্ষতি হয় কোমরের। ওজনও কমে না। কাজেই যোগব্যায়ামই ভরসা। বিরতি নিয়ে কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্ক আউট করতে পারেন। করতে পারেন ওজন নিয়ে ‘স্ট্রেংথ ট্রেনিং’ও। সপ্তাহে তিন দিন করলেই হবে। আর ব্যায়ামের এই পুরো পদ্ধতিটা করতে সময় লাগবে ৩০-৩৫ মিনিটের মতো। হাঁটতে বা দৌড়োতে চাইলে ২০-২৫ মিনিট বরাদ্দ রাখুন।

বুকের জন্য চারটে ব্যায়াম করলে পিঠের জন্যও চারটে
অনেকেই ‘অ্যাডভান্সড এক্সারসাইজ’ করে বুকের ছাতি বাড়াতে গিয়ে এক একটা পেশিকে টানা খাটাতে থাকেন। এতে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে কাঁধে চোটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই পেশি বাড়াতে এক একটা পেশিকে ৪৮ ঘণ্টা পর পর খাটালেই যথেষ্ট। বুকের পেশিকে বাড়াতে গেলে অবহেলা করা চলবে না পিঠের পেশিকেও। সপ্তাহে তিন দিন বুকের জন্য চারটে ব্যায়াম করলে পিঠের জন্যও করুন চারটে।

মেদ ঝরাতে ওষুধ নয়
রোগা হতে গিয়ে ফ্যাট বার্নার খুব চলছে। ফ্যাট বার্নার দু’রকম। হয় স্লিমিং পিল কিনতে হবে, নইলে পাউডার, যাকে চলতি কথায় বলে ফ্যাট বার্নার। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে মেয়েরাই এগুলো ব্যবহার করে বেশি।
ফ্যাট বার্নার ব্যবহারের বিপত্তি অনেক। শুরু হতে পারে সাধারণ হজমের সমস্যা দিয়ে। রাতে ঘুম কম হওয়া, মাথা ঝিমঝিম করার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে ক্রমশ।
তাই এক্সারসাইজ ছাড়া গতি নেই। খাবারের দিকেও নজর দিতে হবে। একেবারে অনেকটা না খেয়ে খান দিনে আট বার। অল্প অল্প করে। খাবার তালিকায় থাকুক তাজা ফল, সবজি, মাছ-মাংস।
জিমে যাবার আগে পেশির প্রস্তুতি
বেশিরভাগ জিমেই শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই বেশি পরিমাণে লাফানো-ঝাঁপানোর ব্যায়াম করানো হচ্ছে। ফিটনেসের ভাষায় ‘প্লায়োমেট্রিক্স’ বা ‘হাই ইনটেনসিটি ওয়ার্ক আউট’ নামেই এরা বেশি পরিচিত। জিমের ট্রেনারদের বোঝা দরকার, যে এই এক্সারসাইজগুলো করাতে গেলে আগে শরীরের পেশি তৈরিস পায়ের পেশি তৈরির দিকে নজর দিতেই হবে। নইলে হাঁটু-কোমর, সারা শরীর ব্যথার মতো সমস্যা থেকে যেতে পারে সারা জীবন।
এর থেকে স্পট জগিং, ২০ মিটার দৌড়ের মতো এক্সারসাইজ করতে হবে নিয়মিত। তবেই শরীর অভ্যস্ত হতে পারবে ‘হাই ইনটেনসিটি ওয়ার্ক আউট’-এর জন্য।

ভারি ওজন তোলার সঠিক পদ্ধতি জানুন
লুক গুডের তাগিদে অতি দ্রুত ওজন তোলার এক্সারসাইজ করানো হয়। যেমন ‘পাওয়ার ক্লিন’, ‘ক্লিন অ্যান্ড প্রেস’ ইত্যাদি। কিন্তু পদ্ধতিটা মোটেই ঠিক নয়। এতে শরীরে চোট, আঘাতের পাশাপাশি ব্যথা বেদনাও হতে পারে।
তাই এগুলো করার আগে করতে হবে হাঁটু আর কোমরের কোর-স্টেবিলিটি এক্সারসাইজ। যেমন ধরুন কোমরের জন্য যদি করেন প্ল্যাঙ্ক বা সাইড প্ল্যাঙ্ক, তা হলে হাঁটুর জন্য করুন স্কোয়াট, এক পায়ে ডেড লিফ্টের মতো ব্যায়াম। কাঁধের জন্য করতে পারেন স্ক্যাপিউলার পুশ-আপ এবং উপুড় হয়ে এক্সটারনাল রোটেশন।

মাত্রা রেখে ব্যায়াম
অনেকেই এক টানা ট্রেডমিল এক্সারসাইজ বা টানা জগিং করেন। হাঁটার ব্যাপারেও মাত্রার পরোয়া করেন না। এদের বিশ্বাস, টানা ট্রেডমিল করলে, জগিং করলে বা হাঁটলে খুব তাড়াতাড়ি শরীরের সব মেদ ঝরে যাবে। কী হতে পারে সে সম্পর্কে কিন্তু ওয়াকিবহাল নন এঁরা। হতে পারে হাঁটু আর গোড়ালিতে ‘ওভার ইউজ ইনজ্যুরি’। তা পরিণত হতে পারে স্থায়ী সমস্যায়। মাত্রা রাখাটা তাই জরুরি। এক্সারসাইজ করুন বিরতি নিয়ে। ধরুন ১ মিনিট জোরে হাঁটলেন। পরের ১ মিনিট হাঁটুন আস্তে। নিয়মিত যদি হাঁটতে বা জগিং করতে চান, তা হলে ২৫-৩০ মিনিটেই সেরে ফেলুন সেটা।

অকারণে জিমে দৌড়োনোর দরকার নেই
অনেকেই অ্যাবকিন মেশিন দিয়ে ক্রমাগত সিট-আপ করেন। ভাবেন ভুঁড়ি কমিয়ে ‘সাইজ জিরো’ ফিগার বানিয়ে ফেলবেন। এঁরা বোধহয় জানেন না যে, এই ভাবে সিট-আপ করলে মেদ কোনও ভাবেই কমে না, বরং মেরুদণ্ড ক্রমশ গোলাকার হয়ে গিয়ে কোমরের ডিস্কে সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে তাই প্ল্যাঙ্ক, বার্ড-ডগ, ব্রিজ-হোল্ড, উডচপের মতো কোর-স্টেবিলিটি এক্সারসাইজ করতেই হবে। ওয়ার্ক আউটগুলো করতে পারেন বাড়িতে বসেই। খালি খালি জিমে দৌড়নোর দরকার নেই।

কী খাবেন, কী খাবেন না
পেশি বাড়াতে দিনে তিন বার করে প্রোটিন পাউডার খাচ্ছেন। সঙ্গে গ্লুটামাইন, ক্রিয়েটিন মনোহাইড্রেটের মতো সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করছেন এমন লোকের অভাব নেই। জেনে রাখা ভাল এগুলোর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে কিডনি-লিভারের সমস্যা ছাড়াও হতে পারে রক্তের চাপ, হজমের সমস্যা। এমনকী মুড স্যুইংও। তাই বিজ্ঞানভিত্তিক এক্সারসাইজের ওপর জোর দিন। আর্টিফিশিয়াল সিন্থেটিক খাবারের পরিবর্তে বেছে নিন প্রাকৃতিক সব খাবার। ডিমের সাদা অংশ, মুরগির মাংস, রাজমা, সোয়াবিনের ফুড ভ্যালু আপনাকে শুধু দর্শনীয় চেহারাই দেবে না, দেবে ভরপুর সুস্বাস্থ্যও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.