চেষ্টা করেও দলমোড়, ঢেকলাপাড়া-সহ ৪টি বন্ধ চা বাগান এখনও খোলাতে না পারায় তাঁর উদ্বেগ আড়াল করছেন না শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। অস্বস্তিতে উত্তরবঙ্গ উন্ননয় মন্ত্রী গৌতম দেবও।
শনিবার শ্রম দফতরের উদ্যোগে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের একটি প্রেক্ষাগৃহে সংগঠিত এবং অসংগঠিত শ্রমিকদের সচেতনতা এবং সহায়তা শিবিরের এক অনুষ্ঠানে চা বাগানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। এ ভাবে চললে পরিস্থিতি যে আরও গুরুতর হয়ে উঠবে তা স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। শ্রমমন্ত্রী বলেন, “গৌতমবাবু বাগানগুলির পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তা আমিও অনুভব করি। কলকাতায় ফিরে শীঘ্রই বাগান সমস্যা নিয়ে বৈঠক করব। আমরা চাই না বাগানে না খেতে পেয়ে, রোগে ভুগে কেউ মারা যাক।”
ঢেকলাপাড়া, দলমোড় ছাড়াও পাহাড়ে রিংটং এবং ডুয়ার্সে রেডব্যাঙ্ক চা বাগান বন্ধ। রোগে ভুগে দলমোড় চা বাগানে শুক্রবার এক বাগান শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত জুলাই মাসে বাগান বন্ধ হওয়ার পর এই নিয়ে ২৫ জন বাগান শ্রমিকের মৃত্যু হল। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানের শ্রমিকদের পরিস্থিতিও খারাপ। ওই বাগান নিয়ে একটি মামলাও চলছে। গৌতমবাবু জানান, ঢেকলাপাড়ার যে শ্রমিক পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা খাবার জোগার করতে অক্ষম তাঁদের রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থদের সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাগানের একাংশে এখনও বিদ্যুৎ নেই। রয়েছে পানীয় জলের অব্যবস্থা, হাতির উপদ্রব। গৌতমবাবু বলেন, “এ ভাবে বেশি দিন চলবে না। উত্তরবঙ্গে চা শিল্প বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সরকার চেষ্টা করছে বন্ধ বাগানগুলি খোলানোর। জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ভাবে চললে দলমোড় আর একটা ঢেকলাপাড়ার চেহারা নেবে।” তিনি জানান, এক সময় ২২টি বাগান বন্ধ ছিল। তাঁরা উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন বাগান খুলিয়েছেন। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত যখন বাগানে পাতা থাকে না সে সময় বাগান বন্ধ করে অনেক মালিক চলে যান। তা উদ্বেগের।
অন্য দিকে শিশু শ্রমিক বন্ধ করতে শ্রম দফতর তথা রাজ্য সরকার উদ্যোগী বলে জানান শ্রমমন্ত্রী। সম্প্রতি একটি বাগান থেকে শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়। স্কুল ছুট শিশু শ্রমিকদের জন্য বিশেষ হোমের ব্যবস্থা করতে এ দিন শ্রমমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। এ ব্যাপারে এসজেডিএ’র জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে প্রস্তুত। শ্রমমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় অনুদান ছাড়া এ ধরনের হোম চালাতে সমস্যা রয়েছে। তবে এসজেডিএ জায়গার ব্যবস্থা করলে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ভবন করে দিলে হোম চালানোর বিষয়ে বাকি সহায়তা তিনি করবেন।
চা শিল্পের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে পরিবহণ শিল্প (উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম) ধুঁকছে। বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি রায়গঞ্জ স্পিনিং মিলের। বর্তমান সরকার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে তৎপর বলে দাবি করেন শ্রমমন্ত্রী। তাঁর দাবি, বাম জমানায় অসংগঠিত শ্রমিকদের যে সুযোগ সুবিধা মিলেছে বর্তমান সরকার দেড় বছরে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সুবিধা দিতে পেরেছে। |