আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে হারানোর লক্ষ্যে বাকি সব ক’টি রাজনৈতিক দলকে জঙ্গলমহলে পিছন থেকে সাহায্য করার পরিকল্পনা নিয়েছে মাওবাদীরা। পুলিশের দাবি, ইতিমধ্যেই মাওবাদীরা এ ব্যাপারে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে, যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের বক্তব্য, মাওবাদীরা চায়, যে দলই জিতুক না কেন, পঞ্চায়েতে তৃণমূল যেন রাজনৈতিক ফায়দা না তুলতে পারে। রাজ্যের নতুন অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (আইন-শৃঙ্খলা) বাণীব্রত বসু এ দিন মহাকরণে বলেন, “এই অবস্থায় পুলিশ মাওবাদীদের গতিবিধি, কাজকর্মের উপরে নজর রাখছে।”
লালগড় আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেণজি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। সিপিএম তথা বামফ্রন্ট আগাগোড়াই মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাঁতের অভিযোগ করে এসেছে। কিন্তু মমতা ক্ষমতায় আসার পরে যৌথবাহিনী প্রত্যাহার না করা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূলের সঙ্গে মাওবাদীদের মতবিরোধ শুরু হয় এবং বেশ কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল নেতা ২০১১ সালে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের হাতে নিহত হন। শেষমেশ ২০১১-র নভেম্বরে বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কিষেণজি মারা যান।
তার আগে থেকেই গোয়েন্দারা খবর পাচ্ছিলেন যে, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকায় মাওবাদীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাজনীতিতে নতুন করে নামতে বলছে সেই সব সিপিএম নেতাদের, যাঁরা বছর তিনেক আগে মাওবাদীদের হুমকিতেই সক্রিয় রাজনীতি এক রকম ছেড়ে দিয়েছিলেন। সিপিএম অবশ্য এ কথা মানেনি। তা ছাড়া, জঙ্গলমহলের সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, মাওবাদীদের সঙ্গে তাঁরা সমঝোতাতে যাবেন না। কারণ, মাওবাদীদের হাতে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁরাই হয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কিছু এলাকায় মাওবাদীরা আবার প্রচারও করেছে, তৃণমূল ছাড়া বাকি যে কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে মাঠে নামতে কোনও অসুবিধা নেই। এখন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল বাদে বাকি রাজনৈতিক দলগুলিকে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করার মধ্যে দিয়ে মাওবাদীদের সেই পরিকল্পনা ফের সামনে এল বলে পুলিশ মনে করছে।
সেই সঙ্গে এডিজি জানান, ওড়িশায় মাওবাদীরা নিজেদের গণ সংগঠনের সদস্যদের পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। সেই রাজ্যে পঞ্চায়েত দখল করে পঞ্চায়েতের বরাদ্দ টাকা থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক কিনত তারা। এডিজি-র দাবি, এখানেও সেই পদ্ধতিতে মাওবাদীরা কাজ করতে চায় এবং তাদের গণ সংগঠনের সদস্যেরাও সেই ভাবে তৈরি হচ্ছেন। বাণীব্রতবাবু জানান, এখনও পর্যন্ত ধরা না পড়া মাওবাদী নেতাদের মধ্যে রঞ্জিত পাল, বিকাশ, আকাশ, জয়ন্ত, সচিনদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। |