পুলিশ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক
রবার বুলেট চান সিপি
মিশনার বদলের সঙ্গেই বুলেটও ফিরছে কলকাতা পুলিশের হাতে। তবে সিসার নয়, রবারের।
দায়িত্ব নেওয়ার পরে থানার ওসি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, সব স্তরের অফিসারদের নিয়ে শনিবার দুপুরে আলিপুর বডিগার্ড লাইনসে বৈঠক করেন নতুন কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। সেখানেই তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে পুলিশের হাতে রবার বুলেট তুলে দেওয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি, জলকামান ব্যবহারের উপরেও জোর দেন তিনি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে স্বামীরমৃত্যুর খবর পেয়ে তাপস চৌধুরীর স্ত্রী মিনতিদেবীর আক্ষেপ ছিল সে দিন দুষ্কৃতীরা সশস্ত্র ছিল, আর পুলিশ ছিল নিরস্ত্র। পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকলে তাঁর স্বামীকে বেঘোরে প্রাণ দিতে হত না। এ দিন কমিশনারের নতুন নির্দেশে সেই আক্ষেপ কতটা মিটবে, তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ে পুলিশ-কর্তারাই।
পুলিশ-কর্তাদের বক্তব্য, গোলমালের দিনও পুলিশের হাতে ‘গ্যাস গান’ ছিল। কিন্তু অস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি দেখার পরেও তাদের সামনে আনা হয়নি। এমনকী, দুষ্কৃতীরা বোমা ফাটানোর পরেও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার নির্দেশ পায়নি বাহিনী। তা হলে এ সব আয়োজনের মানে কী, প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ মহলেই।
এ দিনের বৈঠকেই কমিশনার জানতে পারেন, কলকাতা পুলিশের হাতে দু’টি জলকামান আছে।
কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই গাড়ি কার্যত অকেজো হয়েই পড়ে রয়েছে।
কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন এক কমিশনার অবশ্য মনে করেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ দাঁড়িয়ে পুলিশ কোন পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে, সেটা সংঘর্ষস্থলে উপস্থিত পুলিশ অফিসারদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। বাহিনীর আত্মরক্ষার্থে কখন গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া উচিত, সেটা তাঁরাই ভাল বোঝেন।
মহাকরণ কিংবা লালবাজার থেকে কোনও নির্দেশ গেলে, তা সব সময় পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায় না বলে মত ওই প্রাক্তন কমিশনারের। তিনি বলেন, “দুষ্কৃতীরা যদি নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে মেতে ওঠে, তাতে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে বাহিনী ‘অতি সক্রিয়’ হলেও তার পিছনে কর্তাদের পরোক্ষ সমর্থন থাকা উচিত।”
কেন এ রাজ্যে পুলিশের এই হাল? রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, ২০১১-তে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যুর পরেই কার্যত নিধিরাম সর্দারে পরিণত হয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, তার পর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের উপরে রাশ টানা হয়। মহাকরণের এক কর্তা বলেন, মাস দুয়েক আগে ভাঙড়ে একের পর এক গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার সময়ও ঘটনাস্থলে পুলিশকে দেখা যায়নি। অভিযোগ, উন্মত্ত জনতার মুখে নিরস্ত্র অবস্থায় যেতে চাননি পুলিশ-কর্মীদের একাংশ। তার আগে বীরভূমের লোবায় এক দল বিক্ষোভকারীর তিরে জখম হয় পুলিশ। এক জন পুলিশকর্মীর মাথা তিরে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। এর পরেই নদিয়ার তেহট্টে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় এক জনের। সেই ঘটনায় তৎক্ষণাৎ সরিয়ে দেওয়া হয় সেখানকার মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে। একের পর এক ঘটনা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে পুলিশ এখন অতি-সতর্ক, অনেক সময় নিরস্ত্রও। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, অস্ত্র ছাড়া ডিউটি করতে করতে বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাচ্ছিল। রবার বুলেট ব্যবহারের উদ্যোগ সেই ঝিমোনো মনোবলকে কিছুটা হলেও চাঙ্গা করতে পারে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ‘গোপন খবর’ জোগাড়েও এ দিনের বৈঠকে জোর দিয়েছেন কমিশনার। সুরজিৎবাবু বলেছেন, গোয়েন্দা পুলিশের (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) আগাম রিপোর্ট ঠিক থাকলে অনেক ক্ষেত্রে বড় বিপত্তি এড়ানো সম্ভব। লালবাজার সূত্রের খবর, কয়েক দিনের মধ্যেই বেশ কিছু থানা ঢেলে সাজানো হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.