|
|
|
|
|
|
স্বপ্নময় চক্রবর্তী |
ধান কাটা হয়ে গেলে বাংলার হাট-ঘাট-মাঠে ঝুমুর ঝুম। গুটুরুতেও ছোটখাটো মেলা বসে। নাগরদোলা, জিলিপি-গজা-নিমকির দু-চারটে দোকান আর ম্যাজিক! ম্যাজিক দেখায় গাঁয়ের ছেলে পানু সর্দার। প্রচার হয় পি সি সরদার। প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায় শো। সামনের টেবিলে টিকিট বিক্রি করে লম্বু।
সকাল থেকে লম্বু চোঙা নিয়ে পাবলিসিটি করে। লম্বু আসলে বামন। গুটগুটি। লম্বা চোঙা মুখে দিয়ে বলতে বলতে যায় ম্যাজিক! ম্যাজিক! ম্যাজিক! জাদু রত্নাকর...জাদু শিরোমণি পি-ই-ই সি-ই-ই-ই সরদার্র্র্...। জল থেকে আগুন বেরোবে, দেশলাই কাঠি লাচবে, লাল বেলুন নীল হবে, টাকার বংশবৃদ্ধি... লম্বুর পিছন পিছন বাচ্চাকাচ্চারা লাইন লাগায়। গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে পাবলিসিটি করে লম্বু। সামনের দুটো দাঁত ভাঙা।
আমি তখন ভূমি সংস্কারের চাকরিতে। গুটুরুতে আমার হলকা ক্যাম্প। লম্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, সামনের দাঁত দুটো কী হল?
—পাবলিক ইট মেরে ভেঙে দিয়েছে।
ও ওর বাবাকে দেখেনি কখনও। মা ওকে কোলে বসিয়ে ভিক্ষে করত। বড় হয়ে গেলে আর কোলে বসিয়ে ভিক্ষে করা যায় না। চা-দোকানে কাজ করত। ওখান থেকে চুরিবিদ্যে শুরু। রসুলপুরে ম্যাজিক দেখতে গিয়ে এক ব্যাগ জুতো চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। দাঁত দুটো ওখানেই যায়। তখন ম্যাজিশিয়ান পি সি সর্দার উদ্ধার করে। বলে, এখানেই থেকে যা, ম্যাজিক করে তোর আবার দাঁত উঠিয়ে দেব।
থেকে গেল। ওর মা ডাকত খোকা, চায়ের দোকানে নাম হয়েছিল বোকা। যখন আর লম্বা হল না, নাম হয়েছিল বেঁটে, ম্যাজিশিয়ান নাম রাখল মিস্টার লম্বু। মিঃ লম্বু ম্যাজিশিয়ানের অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম জোকার। স্টেজে টুলে উঠে ম্যাজিশিয়ানের কানে কানে কথা বলে, জাদুকর ওকে রুমাল বেলুন দেশলাই বাক্স ধরতে দিলে লাফায়। লাফিয়ে হাত বাড়ায়। বেঁটে কিনা, পাবলিক হাসে। লম্বুও হাসে। হাসলে ওর ফোকলা দাঁত দুটোয় অন্ধকার।
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
পানু সর্দারের ভিটে এই গুটুরু গাঁয়েই। চাষজমি নেই। আশ্বিন থেকে বৈশাখ ঘুরে ঘুরে ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়ায়। বর্ষাকালটা গাঁয়েই থাকে। লম্বু সে সময়ে ঘরের যাবতীয় কাজকর্ম করে। লাউগাছে মাচা দেয়, জলা-ডোবায় মাছ ধরে, ম্যাজিশিয়ানের পা টেপে, মদের গেলাস এনে দেয়, ধুয়ে দেয়।
গুটুরুর প্রথম রজনীর শো। বারান্দার এক ধারে একটা শাড়ি টান-টান। লম্বু এসে শাড়ি খুলে দিল। মানে, স্টেজের পর্দা উঠল। বলল: লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান, আই অ্যাম মিঃ লম্বু। নাউ আই স্টার্ট ম্যাজিক। ইকরুং বিকরুং টিকরুং কাম হিয়ার ম্যাজিকশিয়ান পি-সি-সরদার্র্র্। রংচটা গোলাপি আলখাল্লা পরা জাদুকর চলে আসে। নমস্কার। পর্থম খেলা ওয়াটার্র্র্ অফ ইনডিয়া।
লম্বু তত্ক্ষণাত্ খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। চোখ বোজে। মুখে ফোকলা হাসি। ম্যাজিশিয়ান ওর তলপেটে একটা ফাঁকা কাচের গেলাস ধরে থাকে, সেটা জলে ভরে যায়। ম্যাজিশিয়ানের বউও লিপস্টিক ঘষে, সালোয়ার-কামিজ পরে স্টেজে আসে। লম্বু বলে, ইনি হলেন মিসেস ভানুমতী সরদার। ওর গা স্পর্শ করেই চিত্পটাং হয়। বলে, বাপ রে, গায়ে কী কারেন্! ইলেকটিরির শট্ নেঁগে গেল। জাদুকর বউয়ের হাতে-পায়ে-কপালে দেশলাই ঘষলেই কাঠি জ্বলে ওঠে। কী একটা খেলা দেখাবার জন্য ট্রে-তে করে কাচের গেলাস আনছিল লম্বু, কিছুটা নেচে-নেচে। হাত ফসকে ট্রে পড়ে গিয়ে গেলাস ভেঙ্গে যায়। ম্যাজিশিয়ান লম্বুকে টেনে চড় মারে। প্রথমে ভেবেছিলাম ‘শো’-এরই অংশ। কিন্তু সন্দেহ হচ্ছিল। চড়ে বেশ জোর ছিল। লম্বুকে জিজ্ঞাসা করতে ও বলেছিল, সত্যিকারের চড়। ম্যাজিকশিয়ান এখন খুব খিটখিটে হয়েছে, মাঝে মাঝেই মারে। সে দিন দুপুরে বউদিদির মাথার উকুন বেছে দিচ্ছিল লম্বু, তখনও লাথি মেরেছে। বউদিদির ডেরেসে জরি খুলে গেছিল, লম্বু সেলাই করে দিচ্ছিল। ‘তুই কেন? এই মাগি পারে না?’ বলে থাপ্পড় মেরেছে। বউদিদির একুন একটাই ডেরেস। সব ছিল গো বাবু, ভেলভেট ইস্কিরিন, পিতলের জাদুকাঠি, চুমকি বসানো পাগড়ি, বউদিদির চার-পাঁচ রকম ডেরেস। সব গেছে। ম্যাজিকশিয়ানের দোষ আছে।
কী দোষ?
আলুর। এগারো বছর ওর সঙ্গে আছি। এর মধ্যে এটা তিন নম্বর বউদি। যেখানে যায় ফিট করে, আগের বউদিকে তাইড়ে দেয়। এটাকেও তাড়াবার মতলব। এটা খুব ভাল। এত অত্যেচার সয়েও এখানে রয়ে গেলাম এই বউদিদির জন্য। অন্য ম্যাজিকওলারা বলে তো, আমার কাছে আয়, জোকারি করবি...।
একটা গ্রামীণ অফিসে বছর দেড়-দুই থাকতে হয়। ওদের সে বারের ম্যাজিক শো চলে গেল ভিন গাঁয়ে। আবার ফিরতেও দেখলাম ওদের। পি সি সর্দারের পেটটা বেশ ফুলে গেছে। মরেও গেল। লম্বু বলছিল, পোড়াবার সময় ফয়রার মতো জল বেরুচ্ছিল পেট থেকে। শেষ হয় না। ওয়াটার অফ ইনডিয়া।
আবার মেলা বসেছে। নাগরদোলা। মেলার মধ্যে বিয়ে হল লম্বু আর সেই বউদিমণির। লম্বু বেঁটে কিনা, বউদিদির গলায় হাত যাবে না। তাই নাগরদোলায় দাঁড়িয়ে রইল। দোলাওয়ালা ঘোরাল এক পাক...দুই পাক...সাত পাক।
লম্বু চোঙা নিয়ে বের হল আসুন, দেখুন, জাদুকর লম্বুর আজব ম্যাজিক... |
|
সুমিত্র বসাক |
|
• বাসে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। কে যেন গায়ে হাত রেখে পয়সা চাইল।
কন্ডাক্টর ভেবে পঞ্চাশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলেন। তাকিয়ে দেখেন, উল্লসিত ভিখিরি! |
|
|
• ভারত-পাক দুর্দান্ত টি-টোয়েন্টি চলছে। শেষ ওভার।
বারো তুললে
ভারত জিতবে। এমন সময় কলিং বেল।
একতলার বুড়ো দম্পতি দু’গাল হেসে হাজির,
নাতির মুখেভাতে নেমন্তন্ন করতে। |
• প্রাণপণ নিয়ম মেনে পথচারীর হাঁটার সিগনাল সবুজ
হতে তবেই রাস্তা পেরচ্ছেন আর অশিক্ষিত দেশে আপনি
কেমন দায়িত্বশীল নাগরিক ভেবে গর্ব পোয়াচ্ছেন, আচমকা
আপনার সিগনাল লাল আর সব গাড়ি থেকে খিস্তি। |
|
|
|
|
• গতিপ্রেমী অনেকের কাছেই উইকএন্ড মানে ন্যাশনাল হাইওয়েতে লং ড্রাইভ, নয়তো টিভির পর্দায় বিদেশি ফর্মুলা ওয়ান ট্র্যাকে ভেটেল-হ্যামিলটনের দ্রুতির লড়াই দেখে কল্পনায় স্বপ্নের গাড়ি নিয়ে ধাঁ। জীবনভর দুধের সাধ ঘোলে মেটানো লক্ষ ভারতীয়ের প্রাণের কথাটি পড়লেন বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিট কর্তৃপক্ষ, ভারতের সবেধন নীলমণি আন্তর্জাতিক এফ ওয়ান ট্র্যাকে ‘ওপ্ন ট্র্যাক ডে’ পালন করে। আজ ইচ্ছে করলেই নিজের গাড়ি বা বাইকটি ছোটাতে পারেন বুদ্ধ টারম্যাকে, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখালেই মিলবে গ্রিন সিগনাল। কর্তারা আগে যাচাই করবেন গাড়ির যান্ত্রিক-ইলেকট্রনিক শরীর-স্বাস্থ্য, অতঃপর এক প্রস্থ উপদেশপর্ব, বিষয়: ড্রাইভিং-টেকনিক, নিরাপত্তা ও ইমার্জেন্সি-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ। সঙ্গে গুনতে হবে টাকাও, বাইক হলে সেশন-প্রতি (এক ঘন্টায় এক সেশন) তিন হাজার, গাড়ি হলে চার। বিশেষ অফার: তিনটে সেশনের আগাম বুকিংয়ে ফোর্থটা মিলবে মুফতে। নিজের গাড়ি নেই, তবু ছুটতে চান? মিলবে ট্র্যাক-রেডি হরেক মডেলের মার্সিডিজ বেন্জ ট্যাক্সি, মাথাপিছু ভাড়া ১৫০০ থেকে ৭৫০০ টাকা। মাখন-মোলায়েম ট্র্যাকে সগৌরব রেসে অংশী হওয়ায় মিশে আছে যে অ্যাড্রিনালিন-সম্ভোগ, তার পাশে গাঁটের এই ক’টি কড়ি খরচা তো নস্যি!
• সম্প্রতি জানা গেল, বিলাসবহুল জীবন যাপনের মাপকাঠিতে এশিয়ার তাবড় মহানগরগুলোর মধ্যে বরাবর ওপরে থাকা হংকংয়ে এক লক্ষ মানুষের বাসস্থান সুরম্য হর্ম্যশীর্ষ নয়, লোহার খাঁচা। মাত্র ষোলো বর্গফুট ঘেরের জীবন, তার মধ্যেই বাঙ্ক বেড বানিয়ে ল্যাবরেটরির ইঁদুর-গিনিপিগের মতো গিজগিজ থাকা, ছারপোকার উপদ্রব এড়াতে তোশকের বদলে কাঠের তক্তার ওপর মাদুর-কাগজ-ক্যানভাস পেতে শোওয়া, কোনার একটা বেসিনে রাঁধাবাড়া, দু’হাত সমান জায়গায় চানবাথরুম। এরই মাসপ্রতি ভাড়া ১৬৭ মার্কিন ডলার। জীবন এখানে দমবন্ধ অসুস্থ, পূতিগন্ধে পূর্ণ, মরিয়া, রাগী। উন্মুক্ত বাজার-অর্থনীতির আবহে হংকংয়ে কোটিপতিদের সংখ্যা-সম্পদ ক্রমবর্ধমান, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাড়ির দামও, ঘরভাড়া আকাশছোঁয়া। গৃহহীন লক্ষ মানুষ শহরের জরাজীর্ণ ফ্ল্যাটবাড়িদোকান-কারখানা যেখানে পারেন ঢুকে পড়ছেন, বানিয়ে নিচ্ছেন আক্ষরিক অর্থেই মাথাটুকু গোঁজবার ঠাঁই। সরকারের কাছে ‘পাবলিক হাউসিং’-এর আবেদন পাহাড়প্রমাণ, চার বছর ধরে দু’লক্ষ নাম ওয়েটিং লিস্টে। মওকা বুঝে শুরু হওয়া সুযোগসন্ধানী রাজনীতির হাড়িকাঠে মানবিক অধিকার সামাজিক সুস্থিতি বলিপ্রদত্ত। |
|
|
১৪০
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে
বিশ্বের ১৭৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান যত
নম্বরে
বলে প্রকাশ এক ফরাসি সমীক্ষায় |
৪২১
যত মিনিট ধরে খেলা হল
ডেভিস কাপের
দীর্ঘতম
টেনিস ম্যাচ
(বার্ডিচ-রসোল
ও
ওয়ারিঙ্কা-চিউডিনেল্লি জুটির মধ্যে) |
|
১১
যত শতাংশ ব্রিটিশ পুরুষ
চুপি চুপি কিছু না কিছু মেক-আপ
করেন বলে সমীক্ষায় প্রকাশ।
লিস্টিতে আছে কনসিলার, লিপ গ্লস,
এমনকী আই-লাইনারও।
|
২৮০০০০০০
ওপ্রা উইনফ্রে-কে দেওয়া ল্যান্স আর্মস্ট্রং-এর
স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষাত্কার টিভিতে যত দর্শক দেখেছেন
|
১২৮৫২০০০০০০০
ভারতীয়দের যত টাকা
গচ্ছিত আছে
সুইটজারল্যান্ডের
বিভিন্ন ব্যাঙ্কে |
|
১০৪৫২৭২
ফেসবুকে মার্ক জুকারবার্গ-এর ‘বিয়ে করছি’
স্টেটাস আপডেটে
যতগুলো ‘লাইক’ পড়েছিল |
১০৯২
এ বারের কলকাতা বইমেলায় যত নম্বর বই
প্রকাশিত হল
লেখক পৃথ্বীরাজ সেনের। গিনেস বুক অফ
ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ পাঠানো হবে তাঁর বইয়ের তালিকা |
২১২০০০০০০
এ বছরের মধ্যেই বিশ্ব জুড়ে
মোট যত
লোক বেকার হয়ে
পড়বেন বলে প্রকাশ
আন্তর্জাতিক
শ্রম সংগঠন-এর রিপোর্টে |
|
|
|
|
|
অ
সী
ম
চৌ
ধু
রী |
|
|
টাকা নেই হা-হুতাশ সবই বুঝি মেকি?
গান গেয়ে ধান ভানে সরকারি ঢেঁকি!
টাকা মাটি মাটি টাকা। মহা কলরবে,
মাটি উত্সব মেশে টাকা উত্সবে। |
উত্সব হাসি সমতলে আর পাহাড়ে... দিঘার বিচে
অন্ধকারের মহড়া তখনই ঠিক প্রদীপের নীচে
হৃত্পিণ্ডতে অচেনা বুলেট চেনা গার্ডেনরিচে
ক্ষমতা যখন বিবৃতি দেয় অর্ধসত্য... মিছে
রক্ত গড়ায়... গড়াতেই থাকে... রাজপথে কালো পিচে |
|
|
|
লেটারিং বেটারিং |
|
প্যাসিভ আত্মহত্যা |
|
আপনিও লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের একটা রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন,
রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|
|