দু’টো টুর্নামেন্টই প্রায় সমবয়সি। বহু পুরাতন। ঐতিহ্যেও তাই। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়। কিন্তু এই মুহূর্তে বেটন কাপ হকি, না কি সাউথ ক্লাবে জাতীয় গ্রাসকোর্ট টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপকোনটা বেশি দুর্দশাগ্রস্ত, কুইজ-এর আসরেও বেশ কঠিন প্রশ্ন। যেন টুর্নামেন্ট করতে হয় বলে তাই করা। নমো নমো করে করা বললেও সত্যের অপলাপ হবে। কয়েক মাস আগের বেটন ফাইনালের মতোই শনিবার জাতীয় টেনিসের ফাইনাল হল কার্যত ফাঁকা মাঠে। শহরের টেনিসমহলের চেয়ে ফুটবলসমাজের লোকের উপস্থিতি যেখানে বেশি। চুনী গোস্বামী-শ্যাম থাপা-প্রদীপ চৌধুরীদের পাশে যেন টিমটিম করে জ্বলছিলেন জিশান-আখতার আলি-জয়দীপ মুখোপাধ্যায় (তিনি তো টুর্নামেন্টের প্রধান উদ্যোক্তাই)। দেশের সবচেয়ে মর্যাদামণ্ডিত টেনিস টুর্নামেন্টঅথচ রাজ্য টেনিস সংস্থার প্রতিনিধিরা গরহাজির।
কোর্টের বাইরের মতোই দীনহীন আবহ কোর্টের মধ্যেও। একে তো ‘প্রাচ্যের উইম্বলডন’ সাউথ ক্লাবের ঐতিহাসিক সেন্টার কোর্ট ঘাসের বদলে অধুনা ‘রিবাউন্ড এস’ হার্ডকোর্টে পরিণত হয়েছে। আধুনিকতা আর পেশাদারিত্বের বিচারে হয়তো সেটা ঠিক। কলকাতার ডেভিস কাপ আয়োজনের বরাত পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী টেনিস ক্লাবের একেবারে এক কোণে ঘাসের কোর্টে জাতীয় ফাইনাল হতে দেখাটাও টেনিস রোম্যান্টিকের কাছে কেমন যেন কষ্টের! তা-ও কি না মেয়ে আর পুরুষ, দু’টো ফাইনাল সব মিলিয়ে তিন ঘণ্টারও কমে খতম হওয়া দেখা! |
দুই চ্যাম্পিয়ন। রামনাথন-অঙ্কিতা। শনিবার সাউথ ক্লাবে। —নিজস্ব চিত্র |
আমদাবাদের মেয়ে, শেষ পাঁচ বছর পুণের অ্যাকাডেমিতে থাকা অঙ্কিতা রায়না প্রথমে ৬-১, ৬-২ গোয়ার নাতাশা পালহা-কে হারিয়ে ২০০৯-এর পর তাঁর দ্বিতীয় জাতীয় খেতাব জিতলেন। তার পরে কলকাতার সৌরভ সুকুলকে ৬-২, ৬-১ উড়িয়ে দিয়ে চেন্নাইয়ের আঠারো বছরের রামকুমার রামনাথন টিন এজেই জাতীয় সিনিয়র চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। সুকুলের তীরে এসে তরী ডুবল, বিখ্যাত ফুটবলার নইমুদ্দিনের ডেভিসকাপার-পুত্র ফজলউদ্দিনের তেরো বছর পর বাংলায় জাতীয় টেনিস খেতাব আনার বিরল স্বপ্নের।
এমন একপেশে জাতীয় টেনিস ফাইনাল যিনি শেষ খেলেছিলেন সাউথ ক্লাবে, সেই জিশান আলি বলছিলেন, “সে-ও তো প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল! রিকোকে (এনরিকো পিপার্নো) স্ট্রেট তিন সেটে হারাতে গিয়ে গোটা ম্যাচে মাত্র চারটে গেম খুইয়েছিলাম। কিন্তু মোটেও এতটা ম্যাড়মেড়ে ছিল না তখন জাতীয় টেনিস।” উইম্বলডনের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট কুইন্স ক্লাব খেলতে লন্ডনে এখন বিশ্বসেরারা প্রায় কেউ যান না। বিশ্ব টেনিসমহলে কথা উঠছে, এত খরচ করে ঘাসের কোর্টের ওই টুর্নামেন্ট আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে। ভারতীয় টেনিসমহলেও অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় গ্রাসকোর্ট টুর্নামেন্ট চালু রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অবাক হওয়ার নেই। সাউথ ক্লাবের একাংশে অবশ্য এ দিন একটা ফিসফিসানি ছিলবিদ্রোহী প্লেয়ারদের জোটের পৃষ্ঠপোষক এক ফেডারেশন-কর্তার উদ্বোধন করা টুর্নামেন্টকে এআইটিএ-র শীর্ষস্থানীয় র্যাঙ্কিং প্লেয়াররা এড়িয়ে গিয়েছেন দেশের চলতি টেনিস বিতর্কের জেরে। রঞ্জিত, বিজয়ন্ত, এমনকী ডেভিস কাপ টিমের রিজার্ভ দুই প্লেয়ারকেও সাউথ ক্লাবে দেখা যায়নি। এআইটিএ-র র্যাঙ্কিংয়ে ১৩ নম্বর প্লেয়ার কি না শীর্ষ বাছাই!
কিন্তু অন্ধকার সুড়ঙ্গ-পথ শেষে যেমন আলোর রেখার দেখা মেলে, তেমনই ফাইনালের নায়ক রামকুমার যেন ভারতীয় টেনিসে নতুন আলোর রেখা। টিএনটিএ-র কোটি কোটি টাকা স্পনসরশিপে বছরের সিংহভাগ বার্সেলোনায় এমিলিও সাঞ্চেজ অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করছে। যেখানে আরান্থার ট্রেনিংও মাঝেমধ্যে পায়। অস্ট্রেলীয় ওপেন জুনিয়র কোয়ালিফায়ার খেলতে গিয়ে নিজের ‘আইডল’ ফেডেরারের (নাদালের দেশের অ্যাকাডেমিতে খেলা শিখলেও) থেকে টিপস পেয়েছে সম্প্রতি। ছ’ফুটের ছিপছিপে চেহারার রামকুমারের টেনিস-দর্শন খুব সিম্পল— জোরালো সার্ভ-ভলি, ফোরহ্যান্ড, ডিপ রির্টান। গোটা স্পেনে একটাও ঘাসের কোর্ট না থাকা সত্ত্বেও রামকুমারের খেলায় চিপ অ্যান্ড চার্জ-এর চমকপ্রদ ছাপ। বললও, “ক্লে-তে খেলা শিখলেও গ্রাসকোর্ট আমার প্রিয়।” ছেলেটার “আমি খুব শিগগির ডেভিস কাপ খেলব” বলার মধ্যে যেমন আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ছিল তেমনই সনাতন ভারতীয় টেনিসের প্রতি অনুরাগও। “প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাপারে কিছু জানি না। আমরা প্রায় কেউই জানি না। দেশের হয়ে খেলাটাই আমার কাছে চূড়ান্ত স্বপ্ন।”
|
চোটের জন্য প্রায় এক বছর কোর্টে পা দিতে পারেননি তিনি। সেই সেরেনা উইলিয়ামসই এ দিন নতুন টেনিস ইতিহাস গড়লেন। সবচেয়ে বেশি বয়সের মহিলা হিসেবে টেনিস বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরের সিংহাসন পাওয়ার নজির গড়লেন মার্কিন টেনিস তারকা। যে কীর্তির পরে অঝোরে কেঁদেও ফেললেন ৩১ বছরের সেরেনা। কুড়ি বছর বয়সে প্রথম বার বিশ্বের এক নম্বর হয়েছিলেন তিনি। দোহায় কাতার ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে এ-দিন চেক প্রতিপক্ষ পেত্রা কিভিতোভা-কে হারালেন সেরেনা। সেমিফাইনালে তার প্রতিপক্ষ মারিয়া শারাপোভা। |