দুই শহর, দুই সাধনা।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া মহাযুদ্ধের বাকি আর সাত দিন। ২২ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে চেন্নাইয়ে শুরু হচ্ছে প্রথম টেস্ট। তার আগে ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহাতারকাকে দেখা গেল দুই ভিন্ন লক্ষ্যের যুদ্ধে। ভৌগলিক অবস্থানের বিচারে খুব কাছাকাছি দুই শহরে।
এক জন, গৌতম গম্ভীর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দু’টো টেস্টে তিনি নেই। কিন্তু শনিবার তাঁর ১৬৪ বলে ১১২ রানের ইনিংস, এটা অন্তত বুঝিয়ে দিল যে শেষ দুই টেস্টের দল নির্বাচনের সময় তাঁর নামটাও ভাবতে হবে। আর গম্ভীরের ব্যাটের শাসন চলল কোথায়? চেন্নাইয়ে। খোদ বোর্ড প্রেসিডেন্টের শহরে।
দ্বিতীয় জন, সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দু’টো টেস্টের টিমে আছেন। কিন্তু সঙ্গে আছে চরম টেনশনও। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ ভাল যায়নি সচিনের। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ খেলেননি। বরং অবসর নিয়ে ফেলেছেন ওয়ান ডে ক্রিকেট থেকে। সাত দিন বাদে টেস্ট শুরু, সামনে সেই বহু প্রতীক্ষার অস্ট্রেলিয়া। পারবেন সচিন? |
বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ‘রিহার্সালের’ যা নমুনা, তাতে আশাবাদী না হওয়ার কারণ নেই। শনিবার থেকে শুরু হল ভারতীয় দলের তিন দিনের শিবির। যেখানে আচমকা চশমা পরে মাঠে নেমে সবাইকে চমকে দিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ। যদিও ব্যাটিংয়ের সময় চশমা খুলে ফেললেন। তবে সহবাগ নন, যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন সচিনই। যিনি প্রথম দিন জাতীয় অ্যাকাডেমির নেটে পড়ে থাকলেন ঝাড়া দু’ঘণ্টা। অশোক দিন্দা, ভুবনেশ্বর কুমারদের পেস যেমন সামলালেন সহজাত দক্ষতায়, তেমনই হরভজন সিংহর মতো অভিজ্ঞ স্পিনারকেও লিফট করে ফেলে দিতে অসুবিধা হল না।
ঠিক যেমন অসুবিধা হল না গম্ভীরের ফর্মে ফিরতে। ম্যাচ শুরুর আগে ভারতীয় ‘এ’ দলের অধিনায়ক গম্ভীর টুইট করেন, ‘ভারতের পাশে ‘এ’ শব্দটা শুধু নামেই আছে। ভারতের হয়েই আপনারা গলা ফাটান। আর এটা কিন্তু একটা টিম খেলছে, কোনও ব্যক্তি নয়।’ মাঠেও তাঁকে দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের কারও কারও মনে হয়েছে, ‘এ’ টিম নয়, জাতীয় দলের জার্সিতেই নেমে পড়েছেন গম্ভীর। ১৩টা বাউন্ডারির সঙ্গে তিনটে ছক্কা। তিন বছর পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফের সেঞ্চুরি করলেন গম্ভীর। নির্দয় ভাবে শাসন করলেন অস্ট্রেলিয়ার পেস-স্পিনকে। বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগারকে পরপর দু’টো ছক্কা মেরে হাফসেঞ্চুরি এল। যা দেখে অজি স্পিনার জেভিয়ার ডোহার্টি বলে ফেলেছেন, “গম্ভীর স্পিনটা অসম্ভব ভাল খেলে। তাই ওকে এ ভাবে ব্যাট করতে দেখে মোটেই অবাক হইনি।” তবে ডোহার্টি মেনে নিচ্ছেন, দিনটা মোটেও তাঁদের ভাল যায়নি। বলে দিয়েছেন, “স্পিনাররা কেউ-ই কিছু করতে পারলাম না।” |
শুধু স্পিনার কেন, ভারতে পা দেওয়ার পর থেকে মাইকেল ক্লার্কের গোটা টিমই বিশেষ কিছু করতে পারেনি। প্র্যাকটিস ম্যাচকে টেস্টের সূচক ধরা হয় না ঠিকই, কিন্তু স্পিনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের যে মোটেই সাবলীল দেখায়নি, সেটাও ঘটনা। কখনও পারভেজ রসুল নামের অনামী স্পিনার সাত উইকেট নিয়েছেন। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং। ভারত ‘এ’-র বিরুদ্ধে আবার চরম লাঞ্ছিত অস্ট্রেলীয় বোলিং। প্রথম দিনের শেষে ভারত ‘এ’ ৩৩৮-৪। এবং শুধু গম্ভীর নন, অস্ট্রেলীয়দের সংহারে মত্ত দেখিয়েছে মনোজ তিওয়ারি, রোহিত শর্মাদেরও। রোহিত ৭৭ করে আউট। কিন্তু মনোজ নন। প্রথম দিনের শেষে বাংলার সেরা ব্যাটসম্যান ৭৭ ব্যাটিং। ১০৬ বল খেলে বারোটা বাউন্ডারি, একটা ওভার বাউন্ডারি। চোখ যে তাঁর আটকে সেঞ্চুরির সীমানায়, সেটা মনোজের টুইট থেকেই স্পষ্ট। যেখানে মনোজ লিখেছেন, ‘টিমের কাজে আসতে পেরে ভাল লাগছে। কাল বড় স্কোরের কথা মাথায় রেখেই ব্যাট করতে নামব।’ |