শ্রমিক সংগঠনের বাধায় ফের বন্ধ হয়ে গেল ঘোজাডাঙা ভারত-বাংলাদেশ স্থল-বন্দরের কাজকর্ম।
শ্রমিক সংগঠনের জঙ্গি আন্দোলনে ১৯ জানুয়ারি থেকে টানা ১৭ দিন ওই স্থল-বন্দর দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ ছিল। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে বাণিজ্য শুরু হয় ৫ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সাত দিন যেতে না যেতেই ফের জঙ্গি আন্দোলনের জেরে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সীমান্ত-বাণিজ্য। তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি বুধবার থেকে ২০টি পেঁয়াজভর্তি ১০ চাকার ট্রাক বসিরহাটে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন রফতানিকারীরা। এই পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই প্রায় ৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে শুল্ক দফতর সূত্রের খবর। জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”
শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, ঘোজাডাঙা সীমান্তে সেতু তৈরির আগে ১০ চাকার কোনও ট্রাকই যেতে পারছিল না। তাই ট্রাকগুলিকে মাঝপথে মাল খালাস করতে হচ্ছিল। ছোট লরিতে তুলে তা পাঠানো হচ্ছিল বাংলাদেশে। ওই কাজে তিনটি শ্রমিক সংগঠনের শ্রমিকেরা যুক্ত ছিলেন। সেতু তৈরির পরে ফের ১০ চাকার ট্রাক বাংলাদেশে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাংলাদেশ-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তাঁরা ১০ টাকার ট্রাক ছাড়া, অন্য লরি থেকে মাল খালাস করবেন না। ১০ চাকার ট্রাক চলাচল শুরু হলে মাঝপথে যে সব শ্রমিক মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করতেন তাঁরা কাজ হারাবেন এই অভিযোগ তুলে ১৯ জানুয়ারি থেকে ঘোজাডাঙা সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় শ্রমিক সংগঠনগুলি।
৫ ফেব্রুয়ারি বসিরহাটে জেলাশাসক সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে জানিয়ে দেন, তিনি নিজে কাজ হারানো শ্রমিকদের দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালিত হয়নি বলে অভিযোগ শ্রমিক সংগঠনগুলির। তাই তাঁরা ফের আন্দোলনে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন ওই স্থল-বন্দরের শ্রমিক সমন্বয় কমিটির অন্যতম কর্তা তথা তৃণমূল নেতা স্বদেশ মণ্ডল। এ বারের আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভাবে সামিল না হলেও, একই বক্তব্য বন্দরের আইএনটিইউসি নেতা তপন পাল এবং সিটু নেতা আলি বৈদ্যেরও। বন্দরের ‘ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষে কান্তিলাল দত্ত বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছে না। অনেক লরি ফিরে যাচ্ছে। ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে আমাদের কর্মবিরতি।”
ঘোজাডাঙা সীমান্ত শুল্ক বিভাগ সূত্রের খবর, যে ১৭ দিন বাণিজ্য বন্ধ ছিল তাতে ৭০ কোটিরও বেশি টাকা ক্ষতি হয়েছিল। বুধবার থেকে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় এখনও পর্যন্ত ব্যবসায় ৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে শুল্ক বিভাগ সূত্রের খবর। রফতানিকারীদের অভিযোগ, টানা চার দিন পেঁয়াজ-ভর্তি ২০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। তাতে পেঁয়াজ কী অবস্থায় আছে তাঁরা জানেন না। কত পেঁয়াজ চুরি হয়েছে তা-ও তাঁরা জানেন না। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলেও, পাহারারও ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
কেন প্রতিশ্রতি দিয়েও তা রাখলেন না জেলাশাসক? জেলাশাসক বলেন, “১০০ দিনের কাজে ওই সব শ্রমিককে কাজ দেওয়ার কথা হয়েছে। সংগঠনগুলিকে কাজ হারানো শ্রমিকদের তালিকা দিতে বলা হয়েছিল। তালিকা পেলে ওই সব শ্রমিককে আমরা ১০০ দিনের প্রকল্পে অবশ্যই কাজ দেব। কিন্তু সেই তালিকা এখনও পাইনি।”
শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, ওই তালিকা তৈরির মতো পরিকাঠামো তাদের নেই। এ জন্য প্রশাসনকেই উদ্যোগী হতে হবে। |