ঘরের কোঁদল বিদেশে টেনে নিয়ে যেতে রাজি নন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তাই তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে টালবাহানার জন্য সাংবাদিকদের যাবতীয় উষ্মা যখন আছড়ে পড়ছে ঢাকায় না থাকা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে, ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। সাফ জানালেন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে, “আপনারা ভুল বুঝছেন ওঁকে। আমি দীর্ঘদিন ধরে মমতাজিকে চিনি। অতি বিচক্ষণ মানুষ তিনি। বাংলাদেশের প্রতি বিন্দুমাত্র বিদ্বেষ তিনি পোষণ করেন না।”
এ দিন ঢাকায় এসে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে বাংলাদেশকে চূড়ান্ত আশ্বাস দিলেন খুরশিদ। জানিয়ে দিলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে সংশয়ের কোনও কারণ নেই। এই চুক্তি না হওয়া নিয়ে মমতাকে দোষারোপ করে লাভ নেই। বললেন “মমতা বাংলাদেশের বন্ধু। তাঁর আপত্তির অনেক কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় স্তরে আলাপ-আলোচনা করে আমরা তা নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।” মমতা যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নন, তা বোঝাতে এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন সলমন। পাশাপাশি স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়েও বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, আসন্ন বাজেট অধিবেশনে এ বিষয়ে সংসদে বিল আনা হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যেই ওই বিলে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দিয়েছে। এমনকী বিজেপিও ওই বিলটির বিরোধিতা করবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। |
শনিবার ঢাকায় সলমন খুরশিদকে স্বাগত জানাচ্ছেন দীপু মণি। ছবি: পিটিআই |
দু’দেশের একাধিক বিষয় নিয়ে আজ খুরশিদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণির দীর্ঘ বৈঠক হয়। বৈঠক হয় দু’দেশের যৌথ পরামর্শদাতা কমিশনেরও। দু’দেশের মধ্যে আজ বেশ কিছু চুক্তি ও প্রোটোকলও স্বাক্ষর হয়। আগামিকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন খুরশিদ। আজ বিমানবন্দরে সলমনকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি। সাংবাদিক সম্মেলনে আজ দীপু মণিকে প্রশ্ন করা হয়, বৈঠকে কি কিছু এগোলো? জবাবে দীপু বলেন, “এত কিছুর পর আপনারা প্রশ্ন করছেন, কিছু হল কি না! অনেক কিছু হয়েছে। সেগুলিকেই এখন ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” ২০১৩ সালেই তিস্তা চুক্তি করতে ভারত বদ্ধপরিকর। সে কথাটিও আগামিকাল খুরশিদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাতে চলেছেন। হাসিনা-কন্যা পুতুলকে নয়াদিল্লিতে সনিয়া গাঁধী ও প্রণব মুখোপাধ্যায় কিছু দিন আগেই এই আশ্বাস দিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেস এখন ইউপিএ সরকারেও নেই। তা সত্ত্বেও আজ মমতার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিলেন কেন খুরশিদ?
বিদেশ মন্ত্রক বলছে, বিদেশে গিয়ে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করা কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রীর শোভা পায় না। তাতে নিজের দেশেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তা শিষ্টাচারবিরোধীও। দ্বিতীয়ত, সংঘাত এড়িয়ে কার্যসিদ্ধি করাটাই কূটনীতির অঙ্গ। খুরশিদ সেই পথেই হেঁটেছেন।
জরিপ করে নতুন করে সীমান্ত নির্ধারণের প্রক্রিয়া শেষ করেছে দুই দেশ। এ বিষয়ে সহমতির অঙ্গ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক ১১৪৯টি খণ্ড মানচিত্র বিনিময় করেছে। এ ছাড়া আর্থিক দুর্নীতি রোধ ও দ্বৈত কর আরোপ রুখতে একটি চুক্তিতে সই করেছে দুই দেশ। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিনিময়ের বিষয়েও কিছু বোঝাপড়া হয়েছে। কাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগিরের সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন সলমন খুরশিদ। |