রাজভবনে উষ্মা জানালেন পার্থও
রাইসিনায় প্রণবদাকে ফোন মমতার, রাজ্যপালকে সামলান
লকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে রঞ্জিতকুমার পচনন্দার অপসারণ নিয়ে গত কাল অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। রাজ্যপাল প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করায় আজ সরাসরি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ফোন করে ক্ষোভ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল শুধু তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই কথা বলছেন, অন্য কোনও দলের ‘অশোভন’ কার্যকলাপ সম্পর্কে কিছু বলছেন না এমন ক্ষোভও তৃণমূল তথা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দানা বাঁধছে। সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতির কাছে মমতা অভিযোগ করেছেন, রাজ্যপাল তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। এ ব্যাপারে তাঁকে সতর্ক করা হোক।
প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী চাইলেই কি এ ভাবে নালিশ জানাতে সরাসরি রাষ্ট্রপতিকে ফোন করতে পারেন? সরকারের একটি সূত্র বলছে, প্রোটোকল অনুযায়ী কোনও মুখ্যমন্ত্রী চাইলেই রাজ্যপাল সম্পর্কে এ ভাবে দেশের সাংবিধানিক প্রধানের কাছে ক্ষোভ জানাতে পারেন না। তবে প্রণববাবুর সঙ্গে মমতার রাজনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও তিনি যে প্রণববাবুকে ‘প্রণবদা’ বলেই সম্মোধন করবেন, তা মমতা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন। সম্ভবত সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই মমতা আজ ফোন করেন প্রণববাবুকে। এবং প্রণববাবুও ফোন ধরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন।
কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে পচনন্দাকে সরানোর প্রসঙ্গে গত কাল রাজ্যপাল বলেছিলেন, “যদি গত ক’দিনের ঘটনার জেরে তাঁকে সরানো হয়ে থাকে, তবে তা খতিয়ে দেখতে হবে। মনে হচ্ছে, কোথাও ভুল হয়েছে।” তিনি এ-ও বলেন, “শাসক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এসেছে। তাদেরই প্রমাণ করতে হবে, তারা সরকার চালাতে পারবে কি না।”
সম্প্রতি ভাঙড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা নিয়েও তাঁর প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যপাল বলেছিলেন, “যা চলছে তা হল গুন্ডারাজ।” নারায়ণন সেই মন্তব্য করার পর রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেছিলেন। এমনকী, নারায়ণনকে কটাক্ষ করে সুব্রতবাবু এ-ও বলেছিলেন, “আপাতত রাজ্যপালকে হলুদ কার্ড দেখানো হল। পরে লাল কার্ড দেখানো হবে।” যদিও পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সুব্রতবাবু পিছু হঠেন। এমনকী, সরকারের মুখপাত্রের পদ থেকেও সুব্রতবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সেই বার্তার পর নারায়ণন-মমতা সম্পর্ক অনেকটাই শুধরোয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সরকারের প্রশংসাও করেন রাজ্যপাল। তবে পচনন্দার অপসারণ নিয়ে রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে ফের চটেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সংশয় নেই, রাজ্যপালের এই সব মন্তব্য বারবার তৃণমূল তথা মুখ্যমন্ত্রীর অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে। প্রচার মাধ্যমে রাজ্যপালের এমন মুখ খোলা যে রাজ্য সরকার খুব ভাল ভাবে দেখছে না, সেই মনোভাব আজ নারায়ণনের কাছে পৌঁছে দেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে আজ দুপুরে রাজভবনে যান পার্থবাবু। সরকারি ভাবে এই সাক্ষাতের উদ্দেশ্য ছিল মার্চে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন ডাকার দিনক্ষণ নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা। তখনই গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক পদক্ষেপের প্রসঙ্গ ওঠে।
মন্ত্রী রাজ্যপালকে জানান, তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কোনও শিথিলতা চলবে না। সেই কাজ ঠিক মতো হয়নি বলেই সরানো হয়েছে পচনন্দাকে। যে সব অভিযুক্তকে ধরা যায়নি, খোঁজ চলছে তাদের। সরকার প্রয়োজনে আরও কড়া হবে। রাজ্যপাল যে ভাবে সরকারের সমালোচনা করেছেন, সেটা দুঃখজনক।
এরই পাশাপাশি রাজ্যপালকে পার্থবাবু এ দিন বলেন, বহরমপুরে জেলাশাসকের অফিস চত্বরে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী যে ভাবে কংগ্রেসের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেটাও খুব গর্হিত কাজ। কিন্তু রাজ্য সরকার ‘দুঃখের সঙ্গে’ দেখল যে, রাজ্যপালের তরফে কংগ্রেসের ওই ভূমিকা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি।
সূত্রের খবর, পার্থবাবুর মাধ্যমে রাজ্যপালের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ মুখ্যমন্ত্রীর অগোচরে হয়নি।
সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে টেলিফোন করেন, তিনি তখন রাষ্ট্রপতি ভবনে এক সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে ছিলেন। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন প্রণববাবু। রাজ্যপালের বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেও সরব হয়েছেন তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা। দলের সাংসদ সুলতান আহমেদের মন্তব্য, “রাজ্যপাল প্রাক্তন আইপিএস অফিসারের মতো আচরণ করতে পারেন না। নিজের পদমর্যাদা তাঁর মনে রাখা উচিত।”
রাজ্যপালের ভূমিকা সমর্থন করে রেল প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “রাজ্যপাল একেবারেই সংবিধান বহির্ভূত কাজ করেননি। ব্যক্তিগত শত্রুতা নিয়ে সরসারি কারও বিরুদ্ধেও তিনি মত জানাননি। রাজ্যপাল তাঁর সাধারণ পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন মাত্র। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যপাল কোনও বিষয়ে তাঁর মতামত জানাতেই পারেন। তা ছাড়া দিনদুপুরে এক জন পুলিশ যখন দুষ্কৃতীর গুলিতে মারা যাচ্ছে এবং সামগ্রিক ভাবে পুলিশকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ছে, তখন রাজ্যপাল একেবারে চুপ করেই বা থাকবেন কী করে?”
অন্য দিকে, সর্বভারতীয় কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, আসলে মমতার সঙ্গে নারায়ণের সম্পর্ক এখন রৌদ্রছায়ার মতো। মমতা নারায়ণনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চান ঠিকই।
কিন্তু নারায়ণন প্রকাশ্যে উনিশ থেকে বিশ কোনও মন্তব্য করলেই মমতা চটে যান।
অথচ অতীতে প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী যখন বামফ্রন্ট সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে সমালোচনা করতেন, তখন মমতা খুশি হতেন। কিন্তু নিজে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি সেটা আর মেনে নিতে পারছেন না। এমনকী, রাজ্যপাল কোনও কারণে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ডেকে বৈঠক করলেও মুখ্যমন্ত্রী রেগে যাচ্ছেন।
আজই অবশ্য রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে রাজভবনে ডেকেছিলেন নারায়ণন। বৈঠকটি পূর্ব নির্ধারিত। তবু অনিবার্য ভাবেই ওঠে গার্ডেনরিচ-প্রসঙ্গ। রাজ্যপাল ফের জানিয়ে দেন তাঁর মনোভাব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.