“মেয়েকে এই দিনটায় কিছু বারণ করতে পারি না। নিজের ছোটবেলার দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে যায়”বলছিলেন বনগাঁ শহরের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের এক মহিলা। সরস্বতী পুজো ঘিরে যাঁর মনে নিজের ছেলেবেলার স্মৃতি ভিড় করে। সারা বছরের কড়া অনুশাসনে থাকা সদ্য তরুণী মেয়েটিকে এ দিনটায় নিয়মে বাঁধতে প্রাণ চায় না মায়ের।
বনগাঁ শহরে সরস্বতী পুজো যেন প্রকাণ্ড এক উত্সব। যৌবনের বাঁধ ভাঙা দিন। দু’টি উন্মুখ মনের কত যে ইঙ্গিত, রহস্য বাতাসে ভেসে বেড়ায়...।
শহরের রাস্তায় সকাল থেকেই এ দিন সুসজ্জিত তরুণের ভিড়। অনেকেরই সঙ্গী মোটর বাইক। কোথাও আবার বাইকের পিছনে সুবেশা সঙ্গিনীও। বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের তরুণীটিকে বহু দিন থেকেই কথাগুলো বলব বলব করে বলা হয়ে ওঠেনি সদ্য যুবকের। নিজেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়া নিয়ে ব্যস্ত। |
এ দিন বন্ধুরা সাহস জোগালো। কলেজে ঠাকুর দেখতে আসা মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে সে বলেই ফেলল ‘গোপন কথাটি।’ ‘একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে’ বাসা বাঁধল সাতটি অমরাবতী। দু’তরফের বন্ধুরা হই হই করে উঠল। “হ্যাঁ বলেছে, হ্যাঁ বলেছে...।” আশপাশে চাপা গুঞ্জন। অতঃপর এল মিষ্টির হাঁড়ি। শুরু হল আরও একটি প্রেমের গল্প।
সকলের কপাল অবশ্য ততটা খোলেনি। দুপুরের পরে ক্লান্ত পায়ে বাড়ি ফিরছিল মায়ের পাটভাঙা হলুদ জামদানি শাড়িতে সদ্য প্রস্ফুটিত কিশোরীটি। চোখের উপরে এসে পড়ছে বিষণ্ণ চুলের গোছা। “মন ভাল নেই নাকি?” প্রশ্ন শুনে করুণ হাসি ছুঁয়ে গেল চোখে-মুখে। বলল, “ভেবেছিলাম ও আজ বলবে আসল কথাটা। এত দিন ধরে আকারে-ইঙ্গিতে কত কিছুই তো বলল। কিন্তু সামনে এসে সাহস করে যতক্ষণ না জানাচ্ছে, হ্যাঁ বলি কী করে?” অকাট্য যুক্তি। হায় ভীরু যুবক। সে-ই বা কেমন করে জানবে, তার গোপন প্রেমের স্বীকৃতি দিতে চেয়ে উম্নুখ কেউ!
তবে সব মিলিয়ে এ দিন চোখে পড়েছে প্রেমের বহু দাপুটে দৃশ্য। রাস্তায় হাতে হাত ধরে হাঁটা আজকাল আর তত বিষদৃশ্য নয়। কিশোর-কিশোরীরা দিব্যি একে অন্যের কাঁধে হাত রাখতে দ্বিধা বোধ করে না। মেলামেশাটা অনেক আগলমুক্ত।
বৃহস্পতিবারই ছিল ভ্যালেন্টাইনস ডে। সে দিন বনগাঁ শহরে সেই উত্সাহ-উদ্দীপনা কোথায়? সরস্বতী পুজোর দিন প্রেম-উদ্যাপনের চিরায়ত ধারার সামনে ডাহা গোল খেল সে। |