|
|
|
|
|
|
|
নানা রকম ১... |
|
মনের মিলনমেলা |
সার্ধ-শতবর্ষে বিবেকানন্দ। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। দেখে এলেন বিপ্লবকুমার ঘোষ। |
রামকৃষ্ণ মিশন লোকশিক্ষা পরিষদের চার দিনের অনুষ্ঠান যেন প্রকৃত পক্ষেই হয়ে ওঠে মনের মিলনমেলা। যাত্রা, নাটক, বাউল গান সহ বিভিন্ন গ্রামীণ সংস্কৃতিতে এ যেন প্রকৃতই লোকসংস্কৃতির সুন্দর মেলবন্ধন। এ ছাড়াও ছিল বিভিন্ন ইউনিটের প্রদর্শনী। হৈমন্তী শুক্লর ভক্তিগীতি বা বিবেকানন্দের বাণী প্রতিধ্বনিত হয় ‘যুগনায়ক বিবেকানন্দ’ যাত্রাপালায়। প্রথম দিনই উদ্বোধন করলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী সুপূর্ণানন্দ। ছিলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আগত অতিথিদের বিভিন্ন বক্তৃতায় ফুটে ওঠে সমাজ ও মানবজীবনে লোকশিক্ষার সুফল এবং সুন্দর সমাজের প্রতিফলন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যেও এ বার প্রাধান্য পেয়েছে লোকশিক্ষার বিভিন্ন আঙ্গিক। উৎসবে নজর কেড়েছেন সার্ধ-শতবর্ষে দাঁড়িয়ে বিবেকানন্দও। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত মনের সাড়া মিলল ‘যুগনায়ক বিবেকানন্দ’ পালায়। অন্য দিকে বিপন্নতা বা ক্রাইসিস কাটাবার সমাধান। মানুষ-মানুষের বিভেদ, অনিশ্চয়তা বা অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে সহজ সরল উপায় খুঁজে পাওয়ার পথ। কী সেই পথ? এই উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন শক্তি হালদার। |
|
মেলাপ্রাঙ্গণেই দেখা হয়ে গেল তাঁর সঙ্গে। তিনি বললেন, এই মেলা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, আগামী দিনের অনিশ্চয়তার চটজলদি সুরাহা খোঁজারও চেষ্টামাত্র। তাই এই উৎসবের শেষ দিনে রাখা হয়েছিল রাগ-অনুরাগ মিউজিক রিসার্চ অ্যাকাডেমির একটি সঙ্গীত-নির্ভর অনুষ্ঠান যেখানে কথায়, গানে এবং যন্ত্রের সুরে সংকট-ভয়-বিপন্নতা কাটিয়ে তোলা যায়। অনুষ্ঠানটি দেখতে দেখতে মানুষের মনে যে ভাবাবেগ তৈরি হয়, তার প্রকৃত অর্থ মানুষেরই তৈরি সমস্যা। মানুষই তো পারে সমাধান করতে। এ কঠিন বাস্তবের জগতে অনেকের মনেই হতে পারে, পৃথিবী জুড়ে এই সন্ত্রাস কেন? কবেই বা এর শেষ হবে? এ ছাড়াও মানুষ নাজেহাল প্রাকৃতিক বিপর্যয়-অনাচার-অত্যাচার ও ভ্রষ্টাচারে। স্মৃতি লালা যিনি এই সমাধানের পথ বাতলেছেন শুধুমাত্র সঙ্গীতকেই অবলম্বন করে। এমনকি বিবেকানন্দের গানও সংযোজিত হয়েছে এই সংযোজনায়। তাঁর কথায়, “গানের বাণীতে জীবনের সুর। সংকটমোচনের লক্ষ্যে সঙ্গীতের প্রয়োগ। এর থেকেই বেরিয়ে আসে মানুষের মনের শুদ্ধিকরণ। রামকৃষ্ণ মিশন লোকশিক্ষা পরিষদের এই আমন্ত্রণ তাই আমাদের কাছে বড় আশীর্বাদ।” উল্লেখ্য, এই সংযোজনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সপ্তসুরকে। ভুল পদক্ষেপ বা অন্যায়ের শিকার হয়ে অনেকেই চেনা পথ হারিয়ে ফেলেন। সপ্তসুর এমনই একটি সঙ্গীতের ধারা যেখানে সেই হারানো পথের সন্ধান মিলবে।
বিবেকানন্দ যেখানে জাতিকে আরও উজ্জীবিত আর প্রাণবন্ত করে তুলতে চেয়েছিলেন, সেই বিবেকানন্দেরই সার্ধশতবর্ষে স্মৃতি লালার এই প্রযোজনা মানুষের নজর কেড়েছে। সন্ত্রাস নিরসনে বা অশান্তির প্রতিকারে বেশ কিছু বাছাই করা কবিতার অংশও এ দিন মূল সঙ্গীতের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যা এক কথায় দাঁড়ায় শান্তি-স্বস্তি ও সহাবস্থান।
এই অসাধারণ অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও পরিচালনায় স্মৃতি লালা নিজেই।
সব মিলিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন লোকশিক্ষা পরিষদের এই আয়োজন বহু দিন মনে রাখার মতো। অবশ্য এই একই সময়ে ছিল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রদর্শনীও। সেখানেও ছিল বিবেকানন্দের জন্ম-সার্ধ-শতবার্ষিকী। উদ্বোধনে ছিলেন কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেল। |
|
|
|
|
|