দহিজুড়িতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর রহস্য-মৃত্যু
খুন করেছে পরিচিত, সন্দেহ পুলিশের
ক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে খুনের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল পশ্চিম মেদিনীপুরের দহিজুড়িতে।
রোজ রাতের মতো বৃহস্পতিবারও সম্পর্কিত মামার মোবাইল ফোনের দোকানে ঘুমিয়ে ছিলেন দীপ্তেন্দু মাহাতো (১৮)। শুক্রবার সকালে বিনপুর থানার দহিজুড়ির ডাকবাংলো এলাকার ওই দোকানের বন্ধ শাটারের তলা দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে পড়তে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। খবর দেওয়া হয় দোকানের মালিক দীপ্তেন্দুর সম্পর্কিত মামা দীপঙ্কর মাহাতোকে। শাটারের পাশে একটি ভোজানো দরজা ঠেলে দেখা যায়, মেঝেয় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দীপ্তেন্দুর নিথর দেহ।
দীপ্তেন্দুর বাড়ি শালবনির ভীমপুর অঞ্চলের পাথরনালা গ্রামে। পিড়াকাটা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ছাত্র দীপ্তেন্দু। পড়াশুনার পাশাপাশি বিনপুরের দহিজুড়িতে সম্পর্কিত মামা দীপঙ্করবাবুর দোকানে মোবাইল ফোন সারানোর কাজ শিখতেন তিনি। এর জন্য স্কুলে যাতায়াত ক্রমেই কমে আসছিল। তবে, দহিজুড়ির বলরামডাঙায় দীপঙ্করবাবুর বাড়িতে থাকতেন না দীপ্তেন্দু। দিনের বেলা ঝাড়গ্রাম শহরে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন তিনি। স্নান-খাওয়া দাওয়া করতেন সেখানেই।

দীপ্তেন্দু মাহাতো।
এ দিন খবর পেয়ে এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) সন্তোষকুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে বিনপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে তদন্তে আসে। মৃতদেহের গলায় মোবাইল ফোনের চার্জারের তার পেঁচানো ছিল। মাথায় পিছনে ও মুখমণ্ডলে ধারালো অস্ত্রের একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল। ডান কানটি কাটা ছিল। এলাকাবাসী পুলিশকে মৃতদেহ তুলতে বাধা দেন। তাঁরা দাবি করেন, পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত করাতে হবে। সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ শিলদা ক্যাম্প থেকে পুলিশ কুকুর নিয়ে আসার পর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পুলিশ-মর্গে। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা ও ঝাড়গ্রামের এসপি ভারতী ঘোষ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, দীপ্তেন্দুকে শ্বাসরোধ করে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।
পুলিশের অনুমান, দীপ্তেন্দুকে মোবাইলে ফোন করে ঘুম থেকে তোলা হয়েছিল। আততায়ীরা দীপ্তেন্দুর খুবই পরিচিত ছিল বলে পুলিশের অনুমান। কারণ, দোকানের পাশের দরজাটি ভিতর থেকে খোলা হয়েছিল। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দহিজুড়ি ও ঝাড়গ্রামের কিছু তরুণের সঙ্গে দীপ্তেন্দুর বন্ধুত্ব ছিল। তাঁদের মধ্যে দু’এক জন মাঝে-মধ্যে দীপ্তেন্দুর সঙ্গে রাতে দোকানে থাকতেন বলে স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জেনেছে। বৃহস্পতিবার রাতে এমন কেউ দীপ্তেন্দুর সঙ্গে দোকানে ছিলেন কি-না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোকানের ভিতর পার্টিশানের এক দিকে একটি ছোট খাটে শুতেন দীপ্তেন্দু। কিন্তু দীপ্তেন্দুর মৃতদেহটি পড়ে ছিল মেঝেতে। যা থেকে পুলিশের সন্দেহ, জেগে থাকা অবস্থায় দীপ্তেন্দুর উপর হামলা চালানো হয়েছিল। আরও একটি বিষয় পুলিশকে ভাবাচ্ছে। দোকান ভর্তি দামি মোবাইল ফোন-সেট থাকলেও সেগুলিতে দুষ্কৃতীরা হাত দেয়নি। দীপঙ্করবাবু অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছেন, দোকানের ড্রয়ার থেকে নগদ কয়েক হাজার টাকা খোওয়া গিয়েছে। এ দিন পুলিশ দোকানের অন্য একটি ড্রয়ার থেকে নগদ কয়েকশো টাকা পায়। পুলিশের সন্দেহ, ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশের জেরেই দীপ্তেন্দুকে খুন করা হয়েছে। খুন হয়েছে ভোরের আলো ফোটার আগেই। ঝাড়গ্রামের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বক্তব্য, “সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ সুত্রের খবর, দীপ্তেন্দুর মোবাইল ফোনটি মৃতদেহের পাশ থেকে রক্তমাখা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। মোবাইল ফোনের কল লিস্ট দেখে বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। তবে, এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.