অঞ্জন-ব্যঞ্জন
৩৫ হাজারের শুক্তো
ই সে দিন। পুনে থেকে ফিরছিলাম। ইন্ডিগোর ফ্লাইট। ভায়া আমদাবাদ। চটজলদি কিছু মিটিং সারতে গিয়ে লাঞ্চটাই করা হয়নি। আবার সেই বিচ্ছিরি স্যান্ডউইচ। নয় ওই কুৎসিত বার্গার। তার চেয়ে ঘুমোনো ভাল বা গান শোনা। অ্যাটলিস্ট, খিদের কথা মনে থাকবে না। কিন্তু, বাঙালি ভাবে এক, হয় আর এক। ৩৫০০০ ফুট উঁচুতে এক অভুক্ত পেটুকের নাকে কোত্থেকে যেন ভেসে এল শুক্তোর গন্ধ। শুক্তো? অবিশ্বাসী নাক কিছুতেই মানবে না। ধোকলা মানতে পারি। ইডলি মানতে পারি। তা বলে শুক্তো? তাও আবার পুনে-আমদাবাদ ফ্লাইটে? টয়লেটে যাওয়ার নাম করে সরেজমিন তদন্তে না নেমে পারলাম না। শিকারি নাক খুঁজে নিল এক বাঙালি পরিবারকে।
পুনে থেকে কলকাতা যাচ্ছেন ওঁরা এবং সঙ্গে নিয়ে ফুলকোর্স বাঙালি লাঞ্চ প্যাক। শুক্তো দিয়ে শুরু, চাটনি দিয়ে শেষ। মধ্যে আলুপোস্ত, পোনা মাছের ঝোল। হ্যাটস অফ না জানিয়ে পারলাম না। জিও বাঙালি! শেষ অবধি, তুমি শুক্তোকেও আকাশবিহারী করে ছাড়লে?
ঘটনাটা আমার আগমার্কা বাঙালি মধ্যবিত্ত মানসিকতাকে একটু ঝুঁটি ধরে নাড়িয়ে দিল আর কি। সচরাচর ফুল সার্ভিস এয়ারলাইনের আপ্যায়নে অভ্যস্ত, আমার চোখ খুলে গেল। এর আগে, যত বার এই ধরনের ইকনমি এয়ারলাইনে ট্রাভেল করেছি, এন্তার গালাগাল দিয়েছি মাড়োয়ারি কি গুজরাতি বা দক্ষিণী কো-প্যাসেঞ্জারদের। টেক-অফের সঙ্গে সঙ্গে যাঁদের একের পর এক খাবার বেরিয়ে আসে হ্যান্ডব্যাগ আর বাস্কেট থেকে। আর সে দিন যখন, খিদে পেটে সেই মন কেমন করা ঘি সাঁতলানো শুক্তোর গন্ধ নাকে এল, কী বলব, আমার সব রাগ গলে ঝোল!
আসলে যে কোনও জাতির মতোই, বাঙালিরাও সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ বাঙালি খানায়। ঠিক যে কারণে, নাগাড়ে বড়া পাও বা দহি বড়া খেতে খেতে পরবাসী বাঙালি মনের সুখে মাছ-মাংস প্যাঁদায় দেশে ফিরে। ইংল্যান্ড-আমেরিকাতে যে কারণে, বাংলাদেশি রেস্তোরাঁগুলো রমরমিয়ে চলে। দেশের খাবারের সত্যি কোনও তুলনা হয় না। আজ দেশ জুড়ে যখন বিভিন্ন দেশের খাবারের যে নাগরিক আয়োজন, তার মধ্যে গ্ল্যামার থাকতে পারে, থাকতে পারে অ্যাডভেঞ্চার, শান্তি নেই! কিন্তু সবার চাইতে ভাল পাঁউরুটি আর ঝোলাগুড়।
তো, মোদ্দা কথা হল দেশি স্বাদের কোনও বিকল্প নেই। যে কারণে, বিদেশে গেলে আমার ব্যাগে আর কিছু থাক না থাক, খান কতক গন্ধরাজ লেবু থাকবেই! কত বিখ্যাত বিদেশি শেফদের ঘায়েল করেছি গন্ধরাজের ওই ভুবনমোহিনী সুবাসে। আর এ বার থেকে ঠিক করেছি, দেশের মধ্যে হপিং ফ্লাইট হলে আমিও সেই পুনের বাঙালি পরিবারের মতো বাঙালি খাবার ক্যারি করব। আর মনে মনেও, কোনও দিন মাড়োয়ারি, গুজরাতি বা দক্ষিণীদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোনও আওয়াজ দেব না!

মেনুর হিট
শুক্তোর রেসিপি

উপকরণ


আলু, কাঁচকলা, রাঙাআলু, সজনেডাঁটা, সিম, বিন, পেঁপে, বেগুন,
উচ্ছে অথবা করলা। নারকেল, দুধ ও বিউলির ডালের ঝোলের বড়ি।
প্রণালী

• প্রণালী প্রথমে বড়ি ছাঁকা তেলে ভেজে তুলে রাখতে হবে।
• পরে আলাদা করে প্রত্যেক সব্জি ভেজে তুলতে হবে। কড়াইতে তেলে তেজপাতা,
শুকনোলঙ্কা, পাঁচফোড়ন, রাঁধুনি দিয়ে সুগন্ধ বের হলে সব সব্জি দিতে হবে।
• মেশাতে হবে আদাবাটা, রাঁধুনিবাটা, সরষেবাটা, নারকেলের দুধ।
• ভাল করে কষে দিতে হবে নুন, মিষ্টি ও দুধ।
• সব্জি সেদ্ধ হয়ে গেলে ঘি দিয়ে নামাতে হবে।
সূত্র: সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার

ছবি: শুভেন্দু চাকী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.