সিএবি লিগে আম্পায়ার নিগ্রহ ঘিরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি স্থানীয় ক্রিকেটে।
বৃহস্পতিবার জর্জ টেলিগ্রাফ বনাম ওয়াইএমসিএ ম্যাচে আম্পায়ার সমীর ঘোষকে চড় মারার অভিযোগ ঘিরে তীব্রতা এতটাই যে, ময়দানের বেশ কিছু আম্পায়ার স্পষ্ট জানাচ্ছেন স্থানীয় ক্রিকেটে আম্পায়ারদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। কাঠগড়ায় সিএবি-ও। প্রবল অভিযোগ, সিএবিকে এ সব জানিয়ে লাভ হয় না। বরং আপস করতে বলা হয়! মিডিয়ায় মুখ খুললে অবধারিত ভাবে ‘পোস্টিং’ বন্ধ! তাই বেশির ভাগ আম্পায়ার নির্যাতন সহ্য করেন। অর্ধেক কথা আম্পায়ার্স রিপোর্টেও লেখা হয় না!
সদ্য নির্যাতিত সমীর ঘোষ যদিও সমস্ত কিছুই রিপোর্টে লিখছেন। সাফ বলছেন, “কেন লিখব না? এত অপমানিত জীবনে হইনি।” গত বছর তরুণ আম্পায়ারদের মধ্যে সেরা হয়েছিলেন, আর তাঁকেই কি না চড় খেতে হল? “আমি তো বুঝলামই না দোষটা কোথায়? ম্যাচের শেষ দিন চা বিরতিতে জর্জের কর্তা পার্থ সিংহ, কোচ অনুপ দাস-রা আমাকে ঘিরে ধরল। অকথ্য গালিগালাজ করল। চড়ও মারল। বলল, আগের দিন কেন ওদের ব্যাটসম্যানকে আমি রান আউট দিয়েছি? আমাদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।” বলা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ওই কর্তাকে উস্কেছিলেন জর্জ কোচ।
যে ঘটনা চূড়ান্ত ন্যক্কারজনক ঠেকছে স্থানীয় আম্পায়ার-মহলে। এক অভিজ্ঞ আম্পায়ার বলছেন, “ইয়ারফোন গুঁজে আম্পায়ারিং করতে দিলে ভাল হত। যা গালিগালাজ চলে! বারবার সিএবিকে বলেছি মাঠে অবজার্ভার পাঠাতে। কেউ পাত্তা দিল?” |
এক নয়, অভিযোগ একগুচ্ছ।
১) মাঠে কর্মকর্তাদের দাপটে টেকা যায় না। এ দিক-ও দিক হলেই গালাগাল।
২) আউটের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে তেড়ে আসে ক্রিকেটার, কর্তারা।
৩) কড়া আম্পায়ারদের মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়।
৪) সিএবি আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান নিজে আম্পায়ার ছিলেন না। তাঁকে বলে লাভ হয় না।
জর্জ-ওয়াইএমসিএ ম্যাচ শুধু নয়, গতকাল ইস্টবেঙ্গল বনাম বেলগাছিয়া ম্যাচেও আম্পায়ার অভিজিৎ দত্তগুপ্তকে গালিগালাজের অভিযোগ উঠেছে। আম্পায়ারদের বক্তব্য, ফুটবলে রেফারিদের হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা। তাঁরা দোষী ফুটবলার বা কর্তাকে মাঠ থেকে বার করে দিতে পারেন। ক্রিকেটে যা হয় না। দাবি উঠছে আইন করে পরিস্থিতি পাল্টানোর।
অভিযুক্ত কর্তা পার্থ সিংহর ফোন বন্ধ। তবে ময়দানের কোনও কোনও কোচকে তিনি এ দিন বলেছেন, “আমি চড় মারব কী করে? ঘটনার সময় আম্পায়ারের থেকে অনেক দূরে ছিলাম।” জর্জের সর্বময় কর্তা সুব্রত দত্ত বলছেন, “ব্যাপারটা জানি না। এটা ঘটে থাকলে অন্যায় হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে ওই কর্তার সঙ্গে ক্লাব বসবে।”
সিএবি আবার প্রবল চাপে। খুব তাড়াতাড়ি টুর্নামেন্ট কমিটির বৈঠক হবে। উচ্চপদস্থ কিছু কর্তার মতে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে পার্থ সিংহর মাঠে ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ইন্ধন দিয়ে থাকলে শাস্তি দেওয়া উচিত কোচকেও। যুগ্ম-সচিব সুজন মুখোপাধ্যায় বলছেন, “সরকারি ভাবে এখনই কিছু বলা যাবে না। তবে কয়েক দিন আগে দু’জন প্লেয়ারকে শাস্তি দিয়েছি এই কারণে। অভিযোগ প্রমাণ হলে কোচ, কর্তারও শাস্তি হতে পারে।” |