|
|
|
|
কার্যকর হয় না শাস্তির সুপারিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
গত পাঁচ মাসে তিন দফায় আবাসিক পালানোয় প্রশ্নের মুখে পড়েছে মেদিনীপুরের একমাত্র সরকারি হোমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জেলা প্রশাসনের অন্দরেও। সেই ক্ষোভ আরও চড়ছে জেলার সুপারিশ কার্যকর না হওয়ায়। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য জেলা প্রশাসনের কর্তারা মুখ খুলতে নারাজ। জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে এক আবাসিক পালানোর ঘটনার তদন্তে নেমে হোমের দুই কর্মীর গাফিলতি খুঁজে পায় জেলা প্রশাসন। তদন্তে দেখা যায়, ওই দুই কর্মী যদি তাঁদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতেন, তা হলে এমন ঘটনা ঘটত না। এরপর ওই দুই কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সমাজকল্যাণ দফতরে আবেদন জানায় জেলা। যদিও সেই আবেদন এখনও কার্যকর হয়নি।
আবেদন জানানো যে হয়েছিল, তা মেনে নিয়ে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বলেন, “আমরা শো-কজ করতে পারলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে দফতরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে দফতরের অনুমতি মেলেনি বলেই দুই কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আবাসিকের দেখভালে এসে বুধবার নিখোঁজ হন পিঙ্কি দাস নামে বছর একুশের অন্য এক আবাসিক। শুক্রবার পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি। |
মেদিনীপুরে হোমছুট |
নভেম্বর’০৯ পাঁচিল টপকে দু’দফায় ৯ তরুণী পালিয়ে যান।
মার্চ’১০ পালিয়ে যান ১৬ জন তরুণী। সিবিআই তদন্ত করছে।
অক্টোবর’১২ নিরাপত্তার ফাঁক গলে পালায় দুই কিশোরী।
নভেম্বর’১২ এক কিশোরী পালায়। পরে বিনপুরে উদ্ধার হয়।
ফেব্রুয়ারি’১৩ মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে পালান পিঙ্কি দাস। |
|
এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। অসুস্থ আবাসিকের দেখভালের জন্য হোমের কর্মীদের থাকার কথা। সেখানে হোম থেকে অন্য আবাসিকদের পাঠানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নের সদুত্তর নেই হোম সুপার ভারতী ঘোষের কাছে। হোমের অন্য এক আধিকারিকের বক্তব্য, “হোমে কর্মীর সংখ্যা কম। তাই এই পরিস্থিতি।” তাঁর কথায়, “সমস্যার কথা বহুবার দফতরে জানানো হয়েছে। সুরাহা হয়নি।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ৯টি হোম আছে। এর মধ্যে মেদিনীপুরের ‘বিদ্যাসাগর বালিকা হোম’ সরকার পরিচালিত। সব মিলিয়ে ৪২৫ জনের থাকার বন্দোবস্ত আছে সেখানে। বর্তমানে রয়েছেন ২৩৪ জন। মূলত, আদালতের নির্দেশে কিংবা যারা অনাথ তাদের এখানে রাখা হয়। গুড়াপ কাণ্ডের পর হোমগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে। তৎপর হয় রাজ্য সরকার। তবে, পরিস্থিতির যে বিশেষ হেরফের হয়নি, তার প্রমাণ বুধবারের ঘটনা। মেদিনীপুরের এই হোম থেকে আগে যাঁরা পালিয়েছেন, তাঁরা অনেকেই রাতের অন্ধকারে প্রাচীর টপকে পালিয়েছেন। পরে প্রাচীর উঁচু করা হয়। ফলে, এখন আর প্রাচীর টপকে পালানো সম্ভব নয়। এখন পালাতে গেলে একাংশ কর্মীর মদত কিংবা তাঁদের কাজে গাফিলতিই উপায় আবাসিকদের।
গত কয়েকটি ঘটনায় কী তাই হয়েছে?
প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশাসনের অন্দরেই। হোমের জন্য ২ জন নৈশ প্রহরী রয়েছেন। সঙ্গে রয়েছে পুলিশ ক্যাম্পও। সেখানে ৮ জন রোটেশনে ডিউটি করেন। এমন নজরদারির মধ্যে কী ভাবে আবাসিক পালানোর ঘটনা ঘটে, সেই প্রশ্নও উঠছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “বুধবারের ঘটনাটি অন্য রকম। অসুস্থ এক আবাসিকের দেখভালের জন্য অন্য দুই আবাসিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে এক আবাসিক পালিয়ে যান। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|