ফের গাছ কাটার অভিযোগ। ফের সেই একই জবাব, “গাছ কাটা নয়, গাছ ছাঁটার জন্য পুরসভাকে জানিয়েছি।” ঘটনাস্থলও সেই এক, সল্টলেক।
সম্প্রতি সল্টলেকের ডিএল ব্লক ও পরে বিজে ব্লকে গাছ কাটা নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে। এমনকী প্রশাসনেরও একাংশের নাম জড়ায়। স্থানীয় কাউন্সিলরের দাবি ছিল, “গাছ কাটা নয়, ছাঁটার নির্দেশ দেন তিনি।” এর জেরেই বিতর্ক তৈরি হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, একটি চক্র সক্রিয়। তদন্তের আশ্বাসও মেলে প্রশাসনের তরফে।
ফের এমন ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়েছে সল্টলেকে। এ বার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাষ্ট্রীয় হোমিওপ্যাথি হাসপাতালে। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের (আয়ুস) আওতাধীন এই হাসপাতালের অধিকর্তা সমীরকুমার নন্দা-ই জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ‘কেউ’ গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তার ভিত্তিতে তদন্তও চলছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই অভিযোগ খোদ অধিকর্তার বিরুদ্ধেই। |
সমীরবাবু জানান, গত বছর হাসপাতালের কয়েক জন ছাত্র ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো অসুখে আক্রান্ত হয়। হাসপাতাল চত্বরে গাছগাছালি, আবর্জনা, ইমারতি দ্রব্যের স্তূপ, জমা জলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সে সময়ে সাফাইয়ের কাজের সঙ্গে গাছ ছাঁটার জন্য তিনি বিধাননগর পুরসভাকে আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেন, “কোনও গাছ কাটা হয়নি, ছাঁটা হয়েছে।” অধিকর্তার অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মী-শিক্ষকদের একাংশের কাজের অনীহা নিয়ে তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন। সে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
ছাত্রদের একাংশেরও দাবি, গাছ কাটা হয়নি। কিন্তু নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাংশের দাবি, শনি এবং রবিবারগুলিতে গাছ কাটার কাজ হয়েছে, যে দু’দিন ছুটির দিন। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে তাঁদের বিষয়টি নজরে পড়ে। কিন্তু তাঁরা কোনও অভিযোগ জানাননি।
ওই ছাত্রদের আরও দাবি, ৫০টিরও বেশি গাছ কাটা হয়েছে। মেহগনি, ইউক্যালিপ্টাসের মতো মূল্যবান গাছও আছে সেই তালিকায়। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে। এমনকী প্রকাশ্যেই গাছ কেটে ম্যাটাডরে করে বাইরে পাচারও করা হয়েছে। অনেকেই তা দেখেছেন, কিন্তু ভয়ে তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
তবে গাছ যে শুধু ছাঁটা হয়েছে, অধিকর্তার এমন দাবি কতটা সত্য, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, একটি গাছ গুঁড়ি থেকে শুধু কাটাই হয়নি। শিকড় সমেত উপড়ে ফেলার চেষ্টাও হয়েছে। গাছ যদি ছাঁটা হয়ে থাকে, তবে এমনটা হল কেন? সদুত্তর মেলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে।
খোদ অধিকর্তা জানান, গত বছরের অক্টোবরে বিধাননগর পুরসভার কর্মীরা গাছ ছাঁটার কাজ করেছেন। সেই সব ‘পুরকর্মী’দের এক জনের স্বাক্ষরও রয়েছে বলে তাঁর দাবি। অধিকর্তার দাবি অস্বীকার করে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, “আমাদের কোনও কর্মী ওই হাসপাতালে গাছ ছাঁটার কাজ করেননি।” পুরসভা সূত্রে খবর, অধিকর্তা যাকে পুরকর্মী হিসেবে দাবি করেছেন, তিনি আদতে পুরকর্মী নন। তিনি গাছ কাটার ‘ঠিকাদার।’ বাম আমলে তিনি গাছ কাটার কাজ করতেন। পুলিশ সূত্রের খবর, সল্টলেকের গাছ কাটার ঘটনার তদন্তে ওই ‘ঠিকাদারে’র নাম উঠেছে।
এ দিকে বন দফতরেও এই ঘটনার রেশ পৌঁছেছে বলে সূত্রের খবর। ওই হাসপাতালে কোনও গাছ কাটা কিংবা ছাঁটার অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে এক আধিকারিকের দাবি। ওই ঘটনা সম্পর্কে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছিলেন গাছ কাটার চক্র সক্রিয় সল্টলেকে। বিতর্কও তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের ঘটনা কার্যত সেই বিতর্ককেই আরও উস্কে দিল বলে অভিমত নানা মহলের। |