সম্পাদকীয় ১...
কীসের শাস্তি
দিঘা সফর শেষে মুখ্যমন্ত্রী ‘কঠোর’ হইলেন। তাঁহার কোপে পড়িলেন রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁহাকে কলিকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ হইতে সরাইয়া একটি অকিঞ্চিৎকর পদে ঠেলিয়া দিলেন। কেন এই সিদ্ধান্ত, তাহার পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী স্বভাবতই একটি কুযুক্তির অবতারণা করিয়াছেন। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পর মহাকরণে কার্যত একটিই কণ্ঠস্বর শোনা গিয়াছিল। তাহা ফিরহাদ হাকিমের। ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে তিনি নির্দোষ প্রতিপন্ন করিতে সচেষ্ট ছিলেন। তাপস চৌধুরীর হত্যার পরে প্রায় আড়াই দিনে ইহাই ছিল একমাত্র ‘সরকারি প্রতিক্রিয়া’। প্রশাসনের তরফে কিন্তু প্রথম সক্রিয় হন পচনন্দাই। তাঁহারই উদ্যোগে মূল অভিযুক্তসহ বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। তাহার জন্য পুলিশ কমিশনার আলাদা স্বীকৃতি দাবি করিতে পারেন না তিনি তাঁহার কর্তব্য সম্পাদন করিয়াছিলেন মাত্র কিন্তু তাঁহাকেই যখন নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সরানো হয়, তখন বুঝিতে হয় মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পিছনে অন্য কারণ আছে। নিরপেক্ষ ভাবে, রাজনৈতিক রং বিচার না করিয়া কাজ করিবার চেষ্টার ফলেই এই অপসারণ।
পরিবর্তন-পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকদের কেন সরিতে হয়, সে বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত অনুমান করিবার বিভিন্ন উপাদান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত পৌনে দুই বৎসর ধরিয়া ছড়াইয়া রাখিয়াছেন। দময়ন্তী সেন সাক্ষ্য দিবেন। আর এক আই পি এস অফিসার ভি মুরলীধরও স্বাধীন চিন্তা পোষণ করিবার ‘অপরাধে’ পুলিশের মহাফেজখানায় নিক্ষিপ্ত হইয়াছেন। নন্দিনী চক্রবর্তী, গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ থাকিলেও কথায় কথায় মেলা এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের বিরোধিতা করিয়া তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর কুনজরে পড়িয়াছেন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টান্তটিও উল্লেখ্য। অনিন্দ্য মিত্রও নজিরবিহীন ভাবে পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডভোকেট জেনারেলের পদ ত্যাগ করিয়াছেন। যুক্তিসঙ্গত অনুমান বলিবে, মুখ্যমন্ত্রীর কাজের ধরনে এমন কিছু উপাদান আছে, যাহাতে তিনি প্রশিক্ষিত পেশাদারদের সহিত, এবং প্রশিক্ষিত পেশাদাররা তাঁহার সহিত, কাজ করিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করিতেছেন না। এই প্রতিটি উদাহরণই চোখে আঙুল দিয়া দেখায়, যাঁহারা প্রশিক্ষিত পেশাদার, তাঁহাদের স্বাধীন ভাবে কাজ করিবার পথে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁহার সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ বাধা হইয়া দাঁড়াইতেছেন। মুখ্যমন্ত্রী কাহাকেও জমি ছাড়িতে নারাজ কথাটি বস্তুত রূপকার্থেও সত্য। ফলে, কেহ স্বাধীন ভাবে আপন দায়িত্ব সম্পাদন করিতে চাহিলেই মুখ্যমন্ত্রীর সহিত সংঘাত অনিবার্য এই বিষম বার্তা কেবল যাঁহারা সরিলেন তাঁহাদের জন্য নহে, যাঁহারা রহিলেন এবং রহিবেন, তাঁহাদের জন্যও ছড়াইয়া পড়িতেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার কুর্সির দৌলতে আপাত ভাবে এই লড়াই জিতিতেছে বটে, দীর্ঘমেয়াদে তাঁহার রাজ্য কিন্তু গোহারান হারিতেছে। স্পষ্টতই তৃণমূল কংগ্রেস দলটির অভ্যন্তরেও ‘জো হুজুর’ বলিবার জন্য ছাড়া মুখ খুলিবার নিয়ম নাই। নেত্রী আর কোনও কথাই শুনিতে নারাজ। ভিন্নমতের আঁচ পাইলেই তিনি রাগিয়া উঠেন। ফলে যাঁহারা তাঁহার চারিপার্শ্বে ঘোরাফেরা করেন, তাঁহারা ওই দুইটি শব্দই উচ্চারণ করিয়া থাকেন। দলের অভ্যন্তরে বিতর্ক তো দূর, আলোচনারও অবকাশ দেখা যায় না। কিন্তু দল আর রাজ্য এক নহে। তাঁহার দলে তিনি যে ভঙ্গিতে বিচরণ করেন, সেই একই ভঙ্গিতে রাজ্য চালানো যায় না। যথেচ্ছাচারের স্বাধীনতা দলনেত্রীর থাকিতে পারে, মুখ্যমন্ত্রীর নাই। দলে তিনি জো-হুজুর বাহিনী প্রতিপালন করুন, কিন্তু রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদেরও সেই দলের সদস্যে পরিণত করিতে পারেন না। যাঁহারা প্রশিক্ষিত পদাধিকারী, তাঁহাদের স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত লইতে এবং কাজ করিতে দেওয়াই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁহার কর্তব্য। সহমত, অন্যমত, ভিন্নমত সবই তাঁহাকে শুনিতে হইবে, প্রশাসনের স্বার্থে দলের স্বার্থ ভুলিতে হইবে, দলের রাজনৈতিক হিসাবে ঘা পড়িতে পারে, এমন সিদ্ধান্তের পথে বাধা হইলে চলিবে না। তিনি যে কেবল একটি দলের নেত্রী নহেন, গোটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী: সেই মৌলিক সত্যটি কি তিনি ভুলিয়া যান?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.