|
|
|
|
মোদী ধরে পিছু টান সঙ্ঘ-দলেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মোদী বিনে মুখ নেই আপাতত। তবু তাঁকেই থামাতে উদ্যত বিজেপি ও সঙ্ঘের একটি শক্তি।
ফলে ক্রমশই পিছোচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে দলের মুখ করার ঘোষণা।
তৃতীয় বার গুজরাত জয়ের পর মোদী ক্রমেই যে রকম অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন, তাতে এখনই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা না হোক, অন্তত দলের প্রধান মুখ হিসাবে তুলে ধরা ছাড়া যে গতি নেই, সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্বের কাছে তা স্পষ্ট। কিন্তু সেটাই ঠেকানোর জন্য আরএসএসের সঞ্জয় জোশী, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রবীণ তোগাড়িয়া ও দলের কিছু নেতা কট্টর মোদী-বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। এমনকী লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহরাও যে মন থেকে মোদীকে মেনে নিচ্ছেন, তেমনটাও নয়।
রাজনাথ ফের সভাপতি হওয়ার সময়ই প্রমাণিত হয়েছে, বিজেপিতে এখনও আডবাণীর ‘ভেটো’ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। স্বয়ং মোহন ভাগবত নিতিন গডকড়ীকে দ্বিতীয় বার সভাপতি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালালেও আডবাণী কার্যত তাঁর সেই আপত্তির অধিকার প্রয়োগ করেই তা হতে দেননি। আডবাণী এখনও মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান করার পক্ষপাতী নন। ফলে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে যখন দলের সংসদীয় বোর্ডে এনে জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে, সেই সময় আডবাণী ও সুষমা স্বরাজরা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকেও সেখানে সামিল করার দাবি জানাচ্ছেন। শিবরাজের সঙ্গে মোদীকে এক সারিতে বসাতেই এই উদ্যোগ। কারণ এ বছরের শেষে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ফের জিতে এলে শিবরাজের মুকুটেও মোদীর মতো
তৃতীয় বার জয়ের শিরোপা জুটবে।
সম্প্রতি প্রয়াগে মহাকুম্ভে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যে ধর্মসংসদ হয়েছে, সেখানে অশোক সিঙ্ঘল থেকে শুরু করে অনেক সাধুই প্রকাশ্যে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন। সেই পরিবেশে খোদ সরসঙ্ঘচালককেও মোদীকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিতে হয়েছিল। কিন্তু পরক্ষণেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া বলেন, ভাগবত কখনওই মোদীর নাম নেননি। আরএসএসের তরফে আজও কিন্তু তোগাড়িয়ার মন্তব্য খণ্ডন করা হয়নি। প্রভাবশালী ‘ভারত সাধু সমাজ’-এর সাধারণ সম্পাদক স্বামী হৃদয়ানন্দও বলেছেন, “সিঙ্ঘলরা যে ভাবে কুম্ভের মঞ্চে মোদীর নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, সেটা আপত্তিকর।” সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত গোবিন্দাচার্য প্রকাশ্যেই বলেছেন, “বিজেপিতে একমাত্র আডবাণীই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। মোদী বড় জোর দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন।” সঙ্ঘ-নেতা যে সঞ্জয় জোশীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে বিজেপি ছাড়তে হয়েছে, প্রত্যাশিত ভাবে তিনিও যথেষ্ট সক্রিয় মোদীর বিরুদ্ধে।
কিন্তু মোদীকে দলের মুখ করতে যত দেরি হবে, ততই দলের ক্ষতি বলছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। তাঁদের যুক্তি, লোকসভা ভোট এ বছরের শেষেও করিয়ে নিতে পারে কংগ্রেস। ফলে হাতে সময় নেই বেশি। দেশ জুড়ে মোদীকে নিয়ে উন্মাদনা রয়েছে। তাঁকে তুলে ধরলেই বিজেপির লাভ।
নির্বাচনের আগে কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার পক্ষপাতী আডবাণীও। ক’দিন আগে রাজনাথ তাঁর বাড়িতে গেলে তিনি নিজের এই মনোভাব জানান। তা হল, প্রতি নির্বাচনের আগেই বিজেপি কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেছে। এ বারেও সেটাই করা হোক। তবে সঙ্ঘ অন্য অনেক কিছু স্থির করলেও, এ ক্ষেত্রে এ দলই সিদ্ধান্ত নিক।
আরএসএসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আডবাণী, সুষমা, জেটলি, রাজনাথ, গডকড়ীরা দিল্লিতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা বৈঠক করেছেন গত মঙ্গলবার। আফজল গুরুর ফাঁসির পর কংগ্রেস এ বার সংখ্যালঘু তোষণের জন্য সন্ত্রাসের প্রশ্নে আরএসএসকে আরও বেশি করে বিঁধতে পারে বলে সঙ্ঘের আশঙ্কা। সঙ্ঘ সে ক্ষেত্রে বিজেপিরও সাহায্য চায়। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজনৈতিক ভাবে সুশীল শিন্দের মন্তব্যের বিরোধিতা তাঁরা করবেন। কিন্তু সঙ্ঘের মতো বিজেপিও যদি উগ্র হিন্দুত্বের অবস্থান নেয়, তা হলে উন্নয়ন ও সুশাসনের প্রসঙ্গ ধামাচাপা পড়ে যাবে। প্রবীণ তোগাড়িয়ার উগ্র মন্তব্যও এই পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ১৭ মার্চ জয়পুরে আরএসএস নিজেদের এক বৈঠক ডাকছে। সেখানে সব বিষয় নিয়েই কথা হবে। এই সূত্রে মোদী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মন্তব্য, “মোদীকে নিয়ে যাঁর যত আপত্তিই থাক কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে হলে মোদীকেই দলের মুখ করতে হবে। সেটা সঙ্ঘও ভালই জানে। মার্চের পরই সঙ্ঘ সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে।” |
|
|
|
|
|