|
|
|
|
নয়া মেট্রো |
রেলমন্ত্রীর ঘরে ধর্নার ‘হুমকি’ দিয়ে বরাদ্দ আদায় প্রতিমন্ত্রীর |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
নিজেরই দফতরের প্রকল্প, তারই বরাদ্দ আদায় করতে দফতরের মন্ত্রীর ঘরের সামনে ধর্নায় বসার ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। আর তাতেই শেষ পর্যন্ত আসন্ন বাজেটে আর্থিক প্রতিশ্রুতির শিকে ছিঁড়ল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর। তবে প্রতিশ্রুতি মিলেছে প্রচ্ছন্ন শর্তসাপেক্ষে। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-কে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও আগামী দিনে ওই প্রকল্পের কাজ পুরো গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে শর্ত রেখেছে রেল মন্ত্রক।
বর্তমানে রাজ্য সরকারের ‘অসহযোগিতায়’ জমি জটে কার্যত থমকে গিয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ। সমস্যা রয়েছে যাত্রাপথ নিয়েও। এ দিকে, রাজ্যের কাছ থেকে নিজেদের ঘাড়ে এসে পড়া ওই প্রকল্প এখন রেল বোর্ডের চক্ষুশূল। আপত্তি রয়েছে যোজনা কমিশনেরও। প্রকল্পটি লাভজনক নয়, তাই এর পিছনে টাকা খরচ করা অর্থহীন বলে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে নিজের আপত্তি পর্যন্ত জানিয়ে রেখেছেন রেলের ফিন্যান্স কমিশনার বিজয়কান্ত। তাই টানাটানির সংসারে চলতি বাজেটে ওই প্রকল্পের জন্য এক পয়সাও খরচ করতে রাজি ছিলেন না রেলমন্ত্রী পবন বনশল। কিন্তু বাদ সাধেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। কলকাতা তথা রাজ্যের স্বার্থে বাজেটে অর্থবরাদ্দের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী থেকে সনিয়া-রাহুল গাঁধীর কাছে পর্যন্ত দরবার করেন বহরমপুরের সাংসদ।
অধীরের কথায়, “প্রকল্পের স্বার্থে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে টাকা চেয়েছি। পবন বনশলকে বলেছি ওই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা না হলে আমি আপনার ঘরের সামনে ধর্নায় বসব।” বরফ গলে তার পরেই।
কংগ্রেসের একেবারে শীর্ষ মহল থেকে চাপ আসায় গত কাল বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন পবন বনশল ও অধীর চৌধুরীর ব্যক্তিগত সচিবেরা। মন্ত্রকের খবর, প্রাথমিক ভাবে ওই প্রকল্পের জন্য ৪০০ কোটি বরাদ্দ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যদিও বনশলের সচিবেরা প্রথমে বলেন, রেল মন্ত্রকের ওই প্রকল্পে টাকা দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, যাত্রাপথ নিয়ে সমস্যা থাকায় প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে। তা ছাড়া, প্রকল্পটি নিয়ে রাজ্য সরকারের মনোভাবও নেতিবাচক। এই পরিস্থিতিতে এই প্রকল্পের জন্য ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ না করে পশ্চিমবঙ্গের অন্য প্রকল্পগুলিতে বরং ওই টাকা খরচ করা হোক। এতে ছোট প্রকল্পগুলি দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।
স্বভাবতই ওই প্রস্তাবে রাজি হননি অধীরের সচিবেরা। পাল্টা যুক্তিতে তাঁরা জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পটি রাজ্যের গর্ব। কোনও ভাবেই ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে গা-ছাড়া মনোভাব নেওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত চাপে পড়ে ওই পরিমাণ টাকা দিতে বনশল শিবির প্রাথমিক ভাবে রাজি হয়ে যায়। এ দিকে, কেএমআরসিএল সূত্রের খবর, রেল মন্ত্রক চারশো কোটি টাকা বরাদ্দ করলে সে ক্ষেত্রে ম্যাচিং গ্রান্ট হিসেবে ঋণ অনুদানকারী সংস্থা ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি’ (জাইকা)-র কাছে ৬০০ কোটি টাকা চাওয়া সম্ভব হবে। দু’খাতে প্রায় হাজার কোটি ভাঁড়ারে এলে আগামী এক বছরের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে কেএমআরসিএল। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে ইস্ট-ওয়েস্টের জন্য টাকা দিতে রাজি হলেও বনশল শিবির প্রচ্ছন্ন শর্ত রেখে দিয়েছে— অবিলম্বে জমি জট, যাত্রাপথ সংক্রান্ত সমস্যা কাটিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করতে হবে কেএমআরসিএল-কে।
তা কি আদৌ সম্ভব? তৃণমূলের হাতে রেল মন্ত্রক থাকাকালীন অধিগ্রহণ সমস্যায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর গতিপথ পরিবর্তন করার যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার ও তত্কালীন রেলকর্তারা। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যায় ৫০০ কোটি টাকা। যদিও দায়িত্ব নেওয়ার পরেই অধীর চৌধুরী জানিয়ে দেন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো তার পুরনো যাত্রাপথ শিয়ালদহ থেকে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে বর্তমানের সেন্ট্রাল স্টেশনে পৌঁছবে। কিন্তু রেল চাইলেও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে, এই আশঙ্কায় অধিগ্রহণের কাজে এখন সাহায্য করতে রাজি নয় রাজ্য। ফলে শিয়ালদহ প্রান্তে কাজ প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। গঙ্গার অন্য পাড়ে হাওড়ায় যে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল, তা-ও বন্ধ হওয়ার জোগাড়। মন্ত্রকের বক্তব্য, সুড়ঙ্গ নির্মাণের ফলে হাওড়া স্টেশন চত্বরে পার্সেল দফতর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ওই অংশেও আপাতত কাজ বন্ধ। বিকল্প জায়গা দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক।
এই পরিস্থিতিতে জমি অধিগ্রহণ, যাত্রাপথ সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে আগামী মঙ্গলবার কলকাতায় রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, রেলকর্তা ও কেএমআরসিএল অধিকর্তা হেমন্ত শর্মার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন সচিব সুধীর কৃষ্ণণ। ওই বৈঠক নিয়ে আজ অধীর বলেন, “অন্তত রাজ্যের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখাক। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজ্যবাসীর লাভ হবে। এ যাত্রায় বরাদ্দকৃত অর্থ পাওয়া না গেলে বা আগামী দিনে তা পেয়েও খরচ করতে ব্যর্থ হলে প্রকল্পটির ভবিষ্যত্ অন্ধকার হয়ে পড়বে।” |
|
|
|
|
|