সরস্বতীর হাতে বীণা নেই। চোখের সামনে একের পর এক নারী নিগ্রহ দেখে থমকে গিয়েছে তার সুর। কাটোয়ার সার্কাস ময়দানে একটি পুজোর থিম এটাই।
অন্য দিকে, কাটোয়া শহর থেকে কিছুটা দূরে মুস্থুলী গ্রামও মেতে উঠেছে বাগদেবীর আরাধনায়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
কাটোয়ার সার্কাস ময়দানে পুরসভা পরিচালিত একটি পলিক্লিনিকের কাছে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা কয়েক জন পড়ুয়া বেশ কয়েক বছর ধরে শুরু করেছেন সরস্বতী পুজো। ‘সায়ন স্মৃতি সঙ্ঘে’র ওই সদস্যেরা এ বছর মণ্ডপ তৈরি করেছেন নিজেদের হাতে। খরচ পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। আইসক্রীমের কাঠি, শোলা, জরি, চুমকি দিয়ে রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছেন তাঁরা। নারী নিগ্রহের বিরুদ্ধে প্রচার করাই এ বছর তাঁদের পুজোর থিম। সেখানে বিরস বদনে অধিষ্ঠিতা দেবী। উদ্যোক্তাদের অন্যতম অরিজিত্ দাস বলেন, “আজকাল পর পর মেয়েদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে। সেই ছবিই তুলে ধরা হয়েছে।”
কাটোয়ার ঘোষহাট এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আবার মণ্ডপ তৈরি করেছে সিডি দিয়ে। থানা রোডের আপনজন ক্লাব আবার কার্টুন চরিত্রকে সামনে রেখে দৃশ্যাঙ্কনের মাধ্যমে মণ্ডপ তৈরি করেছে। মঙ্গলকোটের লাখুুড়িয়া গ্রামের ‘রাধা বিনোদ সঙ্ঘে’র পুজোর থিম আবার গুহার ভিতর শ্রীকৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্ত। ক্লাব সদস্যেরা এক মাস ধরে মণ্ডপটি তৈরি করেছেন নিজেদের হাতে। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম পাহাড় ও গুহা। গুহার ভিতর বাসুদেবের মাথায় শ্রীকৃষ্ণের গমন, পুতনা রাক্ষসী বধ, বকাসুর বধ বা কালিয় দমনের দৃশ্য রয়েছে। ক্লাবের সদস্য দেবজ্যোতি ঘোষ বলেন, “ওই পুজোকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে।”
কাটোয়া থেকে কিছুটা দূরে মুস্থুলী গ্রামকে ঘিরে রয়েছে পাঁচটি জনপদ। সেখানে ছোট বড় মিলিয়ে পুজো হচ্ছে প্রায় ৪০টি। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পঞ্চাশ বছর আগে সরস্বতী পুজো শুরু হয় এই গ্রামে। প্রথম দিকে পুজো হত দু’একটি। পরে পাড়ার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুজোর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, গ্রামের অধিকাংশই পেশায় তাঁতি বা চাষি। সরস্বতী পুজোর সময়ে কাজের চাপ অতটা থাকে না। তাই এই পুজোয় সবাই আনন্দ করতে পারেন। মুস্থুলী গ্রামের নাইস ক্লাব মণ্ডপ তৈরি করেছে চট দিয়ে। একটি জনপ্রিয় মেগাসিরিয়ালকেই থিম করেছে টাইগার ক্লাব। বিভিন্ন মডেল তৈরি করে জন সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে নবযুব সঙ্ঘ। তারা জলাশয় রক্ষা ও সবুজ ধ্বংসের বিরোধিতা করে ও কীটনাশকের অপব্যবহার কমানোর আবেদন করে তাদের মণ্ডপ সাজিয়েছে। গোটা গ্রাম মুড়ে দেওয়া হয়েছে বাহারি আলোকসজ্জায়। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাটোয়া ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম ঘোষাল বলেন, “প্রচুর মানুষ পুজো দেখতে আসেন এখানে। তাই আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি।” |