ভ্রাম্যমাণ চিকিত্সায় স্বচ্ছতা আনতে পরিদর্শনে জোর
ভ্রাম্যমাণ চিকিত্সা পরিষেবায় স্বচ্ছতা আনতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিষেবা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ উঠছিল। এবার সমস্যা দুর করে জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে উপযুক্ত চিকিত্সা পরিষেবা পৌঁছে দিতে দফায় দফায় বৈঠক করল প্রশাসন। তারই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের নিয়ম করে পরিদর্শন ও তার রিপোর্টও জমা দিতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুমন ঘোষ বলেন, “নিয়মিত পরিদর্শন হলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি নিয়ম মেনেই কাজ করতে বাধ্য হবে। তাতে সাধারণ গরিব মানুষ উপযুক্ত চিকিত্সা পরিষেবা পাবেন। তাই পরিদর্শনের পাশাপাশি রিপোর্টও জমা দিতে বলা হয়েছে।” সেই রিপোর্ট ধরে প্রতি মাসেই একবার করে ভ্রাম্যমান চিকিত্সা পরিষেবা নিয়ে বৈঠক করা হবে বলেও তিনি জানান।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১১টি ব্লকে মাওবাদী প্রভাব ছিল। জঙ্গলমহলের এই ১১টি ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে চিকিত্সা পরিষেবা দিতে ভ্রাম্যমান চিকিত্সা পরিষেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিভিন্ন সংস্থাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। যে সংস্থাগুলি ১১টি ব্লকের ৭০টি জায়গায় শিবির করে চিকিত্সা পরিষেবা দেন। যে শিবিরে সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিএমওএইচদের মাসে চার বার করে পরিদর্শন করার কথা। বিপিএইচএনদের (নার্স) পরিদর্শন করার কথা মাসে ৮ বার। এছাড়াও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা জেলাস্তরের আধিকারিকদেরও পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রায় ১ বছর ধরে এই পরিষেবা দেওয়ার কাজ চললেও পরিদর্শন করার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত উদাসীনতা লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দু’একটি সংস্থা অপব্যবহার করতেও ছাড়েনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি সংস্থা খারাপ এক্সরে যন্ত্র নিয়ে গিয়েই এক্সরে করে গিয়েছে দিনের পর দিন। কোনও সংস্থা সরকারি নির্দেশিকা না মেনে রেজিস্ট্রেশনহীন হাতুড়ে চিকিত্‌সককে দিয়েও চিকিত্সা করিয়েছে। কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে আবার বেসরকারি ক্লিনিকে পরীক্ষা করানোর অভিযোগ রয়েছে। কোনও জায়গায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, দুপুরের পর থেকেই শিবিরে ওষুধ সঙ্কট। পরিদর্শকদের কাছে সেই সংস্থার দাবি, শেষের দিকে বলেই ওষুধ শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন জানিয়েছে, এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না। এই শিবিরে এমসিআই এর রেজিস্ট্রেশন রয়েছে এমন চিকিত্‌সক দিয়ে চিকিত্সা করাতে হবে। নিখরচায় ওষুধ, এক্সরে ও প্যাথলোজিক্যাল টেস্টও করাতে হবে। ইউএসজি করানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা অবশ্য এখনও চালু করা যায়নি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকটি সংস্থা নিয়ম মেনে কাজ করার চেষ্টা করলেও দু’একটি সংস্থা পরিদর্শন না হওয়ার সূযোগ নিয়েই কম খরচে কাজ চালাতে গিয়ে খারাপ এক্সরে মেশিন নিয়ে চলে যাচ্ছে বা সাধারণ চিকিত্‌সক নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে যা ধরা কঠিন। ওই চিকিত্‌সককে অবশ্য বাতিল করা হয়েছে। খারাপ কাজের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়েছে একটি সংস্থাকেও। কোনও সংস্থার কাজে দুর্নীতি ধরা পড়লেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। প্রয়োজনে তাকে বাতিল করে অন্য সংস্থাকেও বরাত দেওয়া হতে পারে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের চিকিত্সা পরিষেবা গ্রামে পৌঁছে দিতে পারলে সাধারণ গরিব মানুষকে বিনা চিকিত্সায় থাকতে হবে না। এর জন্য সরকার অর্থ ব্যয় করছে। সেই অর্থ কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নয়ছয় করার চেষ্টা করলেও তা বরদাস্ত করা হবে না বলে প্রশাসন জানিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, বিএমওএইচ, বিপিএইচএন প্রত্যেকের সঙ্গে কখনও আলাদাভাবে আবার কখনও একসঙ্গে, দফায় দফায় বৈঠক করেছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসকের সাফ কথা, “সরকারি অর্থের অপচয় নয়। গরিব মানুষকে পরিষেবা দিতেই হবে। সব কিছু ঠিক হচ্ছে কিনা এবার থেকে তা পরিদর্শন করতেই হবে। রিপোর্টও দিতে হবে। রিপোর্ট ধরে মাসের শেষে সকলকে নিয়ে বৈঠক করা হবে। সেখানে কারও কোনও সমস্যা থাকলে তা সমাধানেরও চেষ্টা হবে। কিন্তু পরিষেবা ব্যহত করা চলবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.