বিরোধীদের ডাকা বনধে সরকারি কর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে অনুপস্থিত কর্মীদের হাতে কারণ দর্শানোর চিঠি ধরানোর নজির রয়েছে রাজ্য সরকারের। সেই একই ব্যবস্থা এ বার নেওয়া হল বেসরকারি ওষুধের দোকানগুলির বিরুদ্ধে। সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হওয়ার প্রতিবাদে ডাকা বনধ, সমাবেশে যোগ দিতে দোকান বন্ধ রাখার জন্য রাজ্যের ৮২টি বেসরকারি দোকানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল।
গত ২১ জানুয়ারি বন্ধ ডাকার পাশাপাশি কলকাতার রানি রাসমণি স্কোয়ারে প্রতিবাদ-সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বেসরকারি ওষুধের দোকানের মালিকদের সংগঠন ‘বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন।’ প্রশ্ন উঠেছে, বন্ধ বা প্রতিবাদের অধিকার তো গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকের থাকে। তা হলে শাস্তি দেওয়া হবে কেন? ড্রাগ কন্ট্রোল সূত্রে খবর, ড্রাগ কন্ট্রোলের নোটিসে সরাসরি বন্ধের প্রসঙ্গ আনা হয়নি।
নোটিসে বলা হয়েছে, ২১ জানুয়ারি ওই ৮২টি দোকানে রুটিন-অভিযানে গিয়ে ড্রাগ ইনস্পেক্টর দোকান বন্ধ পেয়েছেন। কোনও জরুরি পরিষেবা বন্ধ করতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে ড্রাগ কন্ট্রোলকে আগাম জানানোর কথা। কেন সেটা জানানো হয়নি, সেই জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে। ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তারা জানিয়েছেন, যে কোনও দলের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটেও ওষুধের দোকানকে ছাড় দেওয়া থাকে। সেখানে একটি সংগঠনের ডাকা বনধে কেন দোকান বন্ধ থাকবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
২২ জানুয়ারি, অর্থাত্ ধর্মঘটের পরের দিন ওই ৮২টি ওষুধের দোকানে আরও এক বার যান ড্রাগ ইনস্পেক্টরেরা। ড্রাগ কন্ট্রোল সূত্রে খবর, প্রত্যেকটি দোকানেই কোনও না কোনও সমস্যা পাওয়া গিয়েছে। কোথাও ক্যাশমেমো দেওয়া হয় না, কোথাও প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি হয়, কোথাও ফার্মাসিস্ট নেই। এই সব ব্যাপারেও কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষের কথায়, “সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে বাঁকা আঙুলে কী ভাবে তুলতে হয়, আমরা জানি। ওষুধের দোকানের মতো জরুরি পরিষেবা বনধ করে অসুস্থদের বিপাকে ফেলে যদি মনে করা হয়, পার পাওয়া যাবে, সেটা ভুল। আমরা সরাসরি বলব না যে বন্ধ ডেকে অন্যায় হয়েছে। কিন্তু এমন আইনি মারপ্যাঁচে বাঁধব, যাতে তাদের শাস্তি হয় এবং তারা ভবিষ্যতে পরিষেবা বনধের আগে দশ বার ভাবে।” স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, “ড্রাগ কন্ট্রোল ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শাস্তি পেলে ধর্মঘটীদের বোধোদয় হবে।”
রাজ্যে অনুমোদিত ওষুধের দোকানের সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। তার মধ্যে ২১ জানুয়ারি মাত্র ২৬০০টি খোলা ছিল। কলকাতায় প্রায় ১২ হাজার দোকানের মধ্যে খোলা ছিল ২৭০টি। শহরের কোথাও কোথাও সারা দিন একটি দোকানও খোলেনি। জরুরি ওষুধ কিনতে গিয়ে মানুষকে উত্তর থেকে দক্ষিণ ঘুরতে হয়েছে।
এর জন্য ঘুরিয়ে কী ভাবে শাস্তির মুখে দোকানগুলিকে ফেলা যাবে, তারও ব্যাখ্যা দেন চিন্তামণিবাবু। বলেন, “দোকানগুলিকে কোনও না কোনও উত্তর দিতে হবে। তখনই আমরা না-জানিয়ে পরিষেবা বনধের জন্য শাস্তি দেব। টানা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক দিনের জন্য দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। পুরো বন্ধ করব না। তা হলে আবার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে সেটা পেয়ে যেতে পারে। বরং এর থেকে টানা কয়েক মাস দোকান বন্ধ করে রেখে ঝুলিয়ে রাখলে অনেক কাজ হবে। আর্থিক ক্ষতি দেখেই এর পরে বনধ করার আগে তারা ভাববে।” পরের ধাপে আরও কিছু, তার পরে আরও কিছু দোকান একই শাস্তি পাবে। যা শুনে বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে তুষার চক্রবর্তী বলেন, “সরকার ভুল করছে। এমন শাস্তি দিলে দোকান বন্ধ করে প্রতিবাদের প্রবণতা বাড়বে। আমরা ২১ তারিখ বনধ ডাকিনি। প্রতিবাদ-সভা ডাকা হয়েছিল। তাতে যোগ দিতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দোকান-মালিকেরা দোকান বন্ধ করে আসেন। প্রচুর কর্মীও এসেছিলেন। ইমার্জেন্সি হিসাবে কিছু দোকান খুলে রেখেছিলাম। মানুষের খুব অসুবিধা হয়নি।” |