দায় এড়াচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা
হারিয়েই গেল এড্স-দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট
বাম আমলে রাজ্য এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (স্যাক্স)-এর কাজকর্মে ‘বৃহত্তম আর্থিক দুর্নীতি’-র অভিযোগ তুলে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় এক বছর ধরে তদন্ত চলার পরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয় গত বছর পুজোর ঠিক আগে। তার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটির করা ৩৮টি সুপারিশের একটিও কার্যকর করেনি স্বাস্থ্য দফতর। এখন সেই রিপোর্টের ফাইল ‘খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা!
২০০৭-২০১১ সালের মধ্যে স্যাক্সে কয়েকশো কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে ২৫৯ পাতার তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে। কমিটির সুপারিশ, দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন ও বর্তমান চার-পাঁচ জন আইএএস অফিসার ছাড়াও বাম সরকারের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করুক সরকার। এ বিষয়ে কমিটির রিপোর্টে যেমন বাম সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনই স্যাক্সের তিন প্রাক্তন প্রকল্প অধিকর্তা রাকেশ কুমার বৎস, রূপেন চৌধুরী ও সুশান্ত সেনের নামও উঠে এসেছে।
প্রশ্ন, বাম সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের অভিযুক্ত করে যখন সুপারিশ করেছে কমিটি, তখন কেন তদন্ত-রিপোর্ট খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য দফতর? সরকারের এক কর্তা জানান, ফাইল হারিয়ে গেলে রিপোর্টের প্রতিলিপি পাওয়া কঠিন ব্যাপার নয়। চাইলে তদন্ত কমিটির কম্পিউটারে সংরক্ষিত রিপোর্টের প্রতিলিপিও আনিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু সে সবে উদ্যোগী হয়নি স্বাস্থ্য দফতর। সরকারি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, তদন্ত রিপোর্টে সিপিএম মন্ত্রী-নেতাদের পাশাপাশি ৪-৫ জন আইএএস অফিসারের নাম থাকায় নতুন সরকারের ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এই কারণেই ‘রিপোর্টের ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে বাইরে বলা হচ্ছে। রয়েছে আইএএস-মহলের চাপও।
রাজ্যের বর্তমান মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র স্বাস্থ্যসচিব থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১-র ২৯ সেপ্টেম্বর ওই তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পরে ফাইল কোথায় গেল? কেনই বা কমিটির সুপারিশ কার্যকর করা হচ্ছে না? জবাবে মুখ্যসচিব বলেন, “আমার কোনও ধারণা নেই। কিচ্ছু জানি না।” মহাকরণের এক কর্তা জানান, রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়ার পরে তা স্যাক্স-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্যাক্সের প্রকল্প অধিকর্তা উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এই রকম একটা রিপোর্টের কথা শুনেছি। কিন্তু এখনও তা চোখে দেখিনি।” স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ আধিকারিক সরোজ কর সব শুনে বললেন, “স্যাক্স-এর সেই তদন্ত রিপোর্টের ফাইল তো বেপাত্তা। সেটা কোথায় গেল, কেউ জানে না! মহাকরণের অন্য কোনও বিশেষ অফিসারের কাছে থাকতে পারে। আবার স্বাস্থ্য দফতরেও থাকতে পারে। এখন সঠিকটা জানার উপায় নেই। এখন হয়তো ওই রিপোর্ট প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি নেই। যথাসময়ে বেরোবে।”
রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্যসচিব সতীশ তিওয়ারি অবশ্য অন্য কথা শুনিয়েছেন। প্রথমে তিনি বলেন, “আমি কিছুই জানি না।” পরে আবার বলেন, “রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনেক বড়, অনেক জটিল রিপোর্ট। খতিয়ে দেখতে সময় লাগছে।” কিন্তু কারা খতিয়ে দেখছেন সেই রিপোর্ট, তা জানাতে চাননি স্বাস্থ্যসচিব। ফাইল খুঁজে পাওয়া না গেলে পুলিশের কাছে কেন এফআইআর করল না স্বাস্থ্য দফতর? স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, “রিপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ, দিয়ে দিয়েছি। এ বার তা কোথায় গেল, দেখার দায়িত্ব সরকারের। রিপোর্ট কোথায় গেল, তা না পেলে এফআইআর করবতা হয় না।”
রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, রাকেশকুমার বৎস-এর সময়ে স্যাক্স কর্তাদের বিমানের বিল, ফোন বিল, খাবারের বিল, হোটেলের বিল-এ অস্বাভাবিক টাকা খরচের অভিযোগ রয়েছে। এই হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। অভিযোগ, তাঁর সময়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে অযৌক্তিক ভাবে টাকা দেওয়া হয়েছে। এমন অনেক রসিদ পাওয়া গিয়েছে, যার সঙ্গে প্রকল্পের যোগ নেই। সুশান্ত সেনের সময়ে প্রায় ৮ কোটি টাকা বাড়তি খরচের কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ পাওয়া যায়নি। রূপেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তদন্ত কমিটিকে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য জানাননি, নথিপত্রও দেননি, এমনকী ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। তদন্ত কমিটির সুপারিশ, রাকেশ বৎস ও রূপেন চৌধুরী শৃঙ্খলাভঙ্গ করায় তাঁদের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার। সুশান্ত সেনের কাজ পর্যালোচনা করা দরকার।
অভিযুক্ত প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, ওঁরা ওঁদের ইচ্ছামতো তদন্ত শুরু করেছিলেন। যত পারে এই রকম তদন্ত করে যাক না, কে ঠেকাচ্ছে? দেখা যাক কী পায়। আমরা এই সব খুচরো ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাই না।” আর ওই তিন অভিযুক্ত অফিসার কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.